somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিয়াকুম,এক অনিন্দ্য সুন্দরীর খোঁজে

২২ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টানা ৩ দিনের ছুটি পেয়ে গেলাম হঠাৎ।বহুল আকাঙ্খিত ছুটিটা অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।বসের সাথে কথা বলে আরও ২ দিন ম্যানেজ করে ফেললাম চুপি চুপি অনেক ঈর্ষার চোখ এড়িয়ে।অনেকদিন হয়ে গেল(আসলে এক মাস!)পাহাড়ে যাইনা।আর বান্দরবানের পাহাড়ে পালাতে চাইলে ৫/৬ দিনের কমে হয়ও’না।আমার মতো যারা অন্যের কামলা দিয়ে সময় খুঁজে ঘুরে বেড়ান তাদের জন্য ৫/৬ দিন মানে বিশাল কিছু।আনন্দে তখনি কিছুক্ষণ সাম্বা নেচে নিলাম !
শুরু হল পদযাত্রা



এমন প্রকৃতির কোলেই ছিলাম কয়েকদিন রাত



ছুটি তো পাওয়া গেল।এবার টিম ফাইনাল করতে হবে।এটা একটা বিশাল হ্যাপা! হাতে আছে ১৫/২০ দিন।এবার বান্দরবানের যে রুটে যাব বলে ঠিক করেছি সেই রুট টা আমার জন্য নতুন।তাই আমি চেয়েছিলাম একজন অভিজ্ঞ কেউ নেতৃত্ব দিক এই অভিযানের।ঘোরাঘুরির সুবাধে দুরন্ত কিছু অভিযাত্রীর সাথে ইতিমধ্যেই পরিচয় হয়েছে আমার।এদেরই একজন অনুপ দা।মাত্রই গত মাসে নেপাল থেকে আসলেন এক লম্বা অভিযাত্রা শেষ করে।দাদা কে বলতেই সাথে সাথে মানসিক সম্মতি দিয়ে দিলেন।পারেনও বটে!আমাদের টিম টা কিছুতেই ৬ জনের বেশি অথবা ৪ জনের কম হবেনা এরকম উদ্দেশ্য নিয়ে টিম বানাতে নেমে পড়লাম মাঠে।এতো আর ফুটবল টিম না যে এগারজন ধরে কোনরকম নামিয়ে দিলেই হল তারপর বল যেখানে এগারজন সেখানে!এখানে কিছু নিয়ম ফলো করতে হয়।আপনারা যারা পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান তারা জানেন,একটা দলের মধ্যে বোঝাপড়া থাকা টা খুব জরুরি।সমমনা না হলে টানা ৭/৮ দিন একসাথে চলা খুব মুশকিল হয়ে যায়।নইলে দেখা যাবে একসময় ৫জন ৫দিকে পাহাড় অভিযানে চলে গেছে!এমনও হয় শেষে পুরো অভিযান নানা তিক্ত অভিজ্ঞতায় শেষ হয়।তাই এই ব্যাপারে খুব সাবধান ছিলাম আগেই।তার চেয়েও খুব বেশি জরুরি হল ফিজিক্যাল ফিটনেস।শারীরিক সক্ষমতা ছাড়া ৫/৬ দিন ধরে পাহাড় বেয়ে বেড়ানো খুব দুঃসাধ্য।আমার এক বন্ধু(মেয়ে!)আমাদের সাথে এই রুট টা তে যাবে বলে ছয় মাস আগেই আমার এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখছে।তারে কোনভাবেই এভয়েড করতে পারছিনা!সে আবার কারাতে তে কোন কালারের জানি বেল্ট পাইছে!যখন তখন সে তার প্র্যাকটিস শুরু করে দেয় সুযোগ পেলেই!তাই তারে আমি/আমরা খুব সমীহ করেই চলি!সভয়েই হোক আর নির্ভয়েই হোক তাকে শেষে নিতে রাজি হলাম।শর্ত একটাই সে সাথে আর একজন তার দুর্দর্শ! বান্ধবী কে নিবে।ওদের শারীরিক সক্ষমতার যেহেতু কমতি নেই তাই এই ব্যাপারটায় নিশ্চিন্ত হলাম।






ফেসবুকে পরিচয় এক ছোট ভাইয়ের সাথে।সেও যেতে ইচ্ছুক খুব।আমার ২ জন কলিগও যেতে চাচ্ছে সাথে।অবশ্য কোথাও যাওয়ার কথা শুনলে এরকম ইলিশ মাছের ঝাকের মতো লোকজন কত্থেকে যেন চলে আসে এমনিতেই কিন্তু যাওয়ার দিন আর তাদের অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়না!ঠিক যে কারনে আমি একলাই ঘুরে বেরিয়েছি কবিগুরুর দীক্ষা নিয়ে অর্ধেক জীবন।যাওয়ার ২ দিন আগে বসলাম টিম ফাইনাল করতে।আমার কলিগ ২ জনই আউট।কেউ ছুটি ম্যানেজ করতে পারেনি স্বভাবতই।অনুপ দা’র এক বন্ধুর যাওয়ার কথা ছিল সেও যেতে পারছেনা।সবচেয়ে বেশি হতাশ হলাম যখন জানলাম আমার দোস্তটিও একা যাবে।তার দুঃসাহসী বান্ধবী অসুস্থ হয়ে পড়েছে পাহাড়ে যাওয়ার ভয়ে।শেষে দেখা গেল সবেধন নীলমণি আমরা ৪ জন আছি।আমি,অনুপ দা,সিয়াম ভাই আর অগ্নিকন্যা।টিম ফাইনাল।শুধু মাঠে নামার অপেক্ষা।সবাই যারযার ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে নিলাম।হাঁড়ি,চুলা,বিস্কিট,নুডলস,ড্রাই কেক থেকে শুরু করে জরুরি ওষুধ সব নিয়ে নিলাম।যাওয়ার আগের রাত থেকে ম্যালেরিয়া রোধক প্রতিষেধক (মাত্র ২৮ দিনের কোর্স :/) খাওয়া শুরু করে মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম।

অভিযাত্রী দল



সেই পোজ দু'জনের



আমাদের এবারের অভিযান ঝর্ণা জয়ের অভিযান!আমিয়াকুম নামে এক অপরুপা ঝর্ণার খোঁজে যাব আমরা তবে ভিন্ন এবং দুর্গম একটা পথে।এই ট্রেইল এর গল্প পরের পর্বে করতে আসছি।যখন আমাদের প্রতিটা সেকেন্ড আফসোস করতে হয়েছে একসময় সহজ পথ বাদ দিয়ে এই ভয়ঙ্কর ট্রেইল বেছে নেওয়ার জন্য।আগের রাতেই ৪ জনের টিকেট কেটে রেখেছিলাম আমি।রাত ১০ টায় আমাদের বাস,সেন্টমারটিন পরিবহন।সাড়ে নয়টার দিকে আমরা সবাই এসে হাজির কলাবাগানে।পরিচয় পর্বটাও সেরে ফেললাম আবার নতুন করে সবাই!উঠে বসলাম বাসে।সিটগুলোও ভালো পেয়েছিলাম বলে রক্ষা।বাসের পেছনে থাকলে সারারাত ধরে নাচতে হত বাসের তালে তালে, হেলে দুলে!কুমিল্লা পৌঁছতে পৌঁছতে সবাই মোটামুটি একটা হালকার উপরে ঝাপসা ঘুম দিয়ে নিলাম!বাস থেকে নেমে উত্তরের শীতের একটা ধাক্কা খেলাম ভালই।মনে মনে বেশ খুশি হলাম।শীত যত বেশি হবে ট্রেকিং করে তত মজা।তারচেয়ে বড় কথা সহজে ক্লান্ত হওয়ার হাত থেকে তো বাঁচা যাবে।
যেখানে পথের শেষ আকাশের সীমানায়



আমাদের পেছনেই আর একটা গ্রুপ আসছে ইউনিক পরিবহনে, অনুপ দা বলল।যদিও তাদের রুট আলাদা।হাল্কা চা নাস্তা করে আবার উঠে বসলাম বাসে।দিলাম লম্বা এক ঘুম।ঘুম ভাঙতেই দেখি আমরা বান্দরবানের প্রায় কাছাকাছি।সাড়ে সাত টার আগে আগে পৌঁছে গেলাম।কাউনটারে কিছুটা ফ্রেশ হয়েই দৌড় লাগালাম থানচির বাস ধরতে।কিন্তু গিয়ে দেখি প্রথম বাসের(৮ টায়)সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।প্রতিদিন বান্দরবান থেকে থানচির উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় ৫ টি।পরের বাস সেই ১০ টায়।এর পর ১১:৩০,১ টা এবং সর্বশেষ বাস ছেড়ে যায় বিকেল ৩ টায়।হাতে অনেক সময়।পরের বাসের টিকেট কেটে নিলাম ৪ টা।নাস্তা টাও সেরে নিলাম সবাই।অনুপ দা ফোন করলো আমাদের পেছনে আসা গ্রুপের সালেহীন ভাই কে।উনারা তখনও এসে পৌঁছেননি।আমরা আবার ফিরে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে তাদের সাথে দেখা করার জন্য।কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা তাদের কে পেয়ে গেলাম।তারাও চার জন সদস্য।যাচ্ছেন নতুন একটা রুটের দিকে।শুভকামনা জানিয়ে ফিরে আসলাম আবার।
১০ টার একটু পর পরই ছেড়ে দিল বাস।পাহাড়ে বাস এমনিতেই আসতে চলে।এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া সাপের মতো রাস্তাগুলোকে সাথে নিয়ে তাই ধীরে ধীরেই এগুতে হল।তারপর বেরসিক বাস আবার যখন দাঁড়িয়ে পড়ে তখন তাকে কিছুতেই আর নড়ানো যায়না।পারলে ঘুমিয়েই পড়ে যেন!এভাবে বেশ কয়েকবার ঘুম থেকে ডেকে তুলে থানচি পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল প্রায় শেষ।

থানচি থেকে আমাদের প্রথম গন্তব্য বোর্ডিং পাড়া।এর পর যদি সময় আর শরীর ঠিকঠাক থাকে তো আর একটু এগিয়ে শেরকরপাড়া তাবু ফেলব আজকের রাতে ।থানচি থেকে আপনি যে রুটেই যান না কেন গাইড নিতে হয় এরকম টাই নিয়ম করে দেওয়া আছে।কিন্তু আমরা গাইড নিতে চাচ্ছিনা।এতে কিছুটা খরচও বাঁচবে আর নতুন পথে যাত্রাটাও বেশ এডভেঞ্চারাস হবে!তাই ওদেরকে এড়িয়ে নিজেরাই নেমে পড়লাম যুদ্ধ জয়ে।ঝুলন্ত ব্রিজ পেড়িয়ে আসতেই দেখলাম আমাদের অগ্নিকন্যার তেজ কিছুটা নিস্প্রভ হয়ে আসছে ঠিক পড়ন্ত বিকেলের মতো।বুঝলাম তার জন্য আগামী কয়েক টা দিন খুব ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়েই আসছে।সবাই দম নিয়ে নিলাম ফুসফুস ভরে।পরবর্তী কয়েকঘণ্টা টানা হাঁটতে হবে।৪ টার বেশি বাজে ইতিমধ্যে।সন্ধ্যার মধ্যে যতটুকো সম্ভব এগিয়ে যেতে চাই আমরা।প্রথম পাহাড় টা পার হতেই অনেক সময় লেগে গেল।যেহেতু আমাদের ৪ জনের দু’জনই নতুন ট্রেকিং এ তাই চাইলেও দ্রুতগতিতে এগুতে পারছিনা আমরা।আবার সবার সাথেই ১৪/১৫ কেজি ওজনের ব্যাকপ্যাক আছে।তাই এই ওজন পেছনে ঝুলিয়ে পাহাড় বেয়ে হাইকিং করা খুব একটা সহজ’ওনা।আমরা তাই কিছুটা রয়েসয়েই এগুচ্ছি।বেশি ভয়টা ছিল আমার দোস্ত কে নিয়ে।সে মাঝ রাস্তায় যদি হাল ছেড়ে দেয় তো সবাই পড়ে যাব বিপদে।তাই তাকে সাহস দিয়ে চাঙ্গা রাখছিলাম সবাই।এক জায়গায় এসে দেখি দু’টো রাস্তা দু’দিকে চলে গেছে।এবার কি করি!আমাদের ধারনা ছিল হয়ত এক রাস্তায় চলে যেতে পারব অথবা অন্তত কোন না কোন দিকনির্দেশনা নিশ্চয় পাব যা দেখে আমাদের রাস্তা আমরা চিনে নিতে পারব।এসব ক্ষেত্রে(দু’মুখো রাস্তা হলে) ট্রেকিং এর রাস্তায় নির্দেশনা দেওয়া থাকে যাতে সহজে চিনে নেওয়া যায়।কিন্তু আশপাশে শত খুঁজেও কোন দিকনির্দেশনা পাচ্ছিনা।সামনেই একটা বাড়ি দেখে এগিয়ে গেলাম কাউকে জিজ্ঞেস করে হয়ত আমাদের রাস্তা পেয়ে যাব।কিন্তু সেই আশায় গুঁড়ে বালি!বাড়িতে কাউকেও পেলাম না।অগত্যা চার জনেই প্রতিযোগিতায় নামলাম কার গলায় কত জোর আছে সেই পরীক্ষায়।কিন্তু তাতেও কারও সারাশব্দ মিললনা।এবার সত্যিই আফসোস হতে লাগলো কেন গাইড আনলাম না সাথে!রাত টা কি তাহলে এখানেই কাটাতে হবে!

ঠিক এখানে এসে আমরা রাস্তা হাড়িয়ে ফেললাম,সামনে রাস্তা দু'দিকে চলে গেছে



অপেক্ষা করতে করতে একটা গ্রুপ কে পেয়ে গেলাম যারা থানচি থেকে ফিরছে বাজার করে।তাদেরও গন্তব্য বোর্ডিংপাড়া।যাক,এবারের মত তাহলে বেঁচে গেলাম!ওদের সাথে গল্প করে ভাব জমিয়ে নিলাম।জানালাম আমরাও যাচ্ছি বোর্ডিংপাড়ায়।কিন্তু ওদের সাথে গতিতে পেরে ওঠা মুশকিল আমাদের নতুন অভিযাত্রীদের নিয়ে।ওদেরকে পেয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান আমাদের মার্শালআর্ট কন্যা!দেখলাম কিছুক্ষনের মধ্যেই সে তার ১৫ কেজির ব্যাগপ্যাক চালান করে দিয়েছে তাদের একজনের কাঁদে!যাক!এবার তাহলে আমাদের গতি কিছুটা হলেও বাড়বে আশা করছি।এর মধ্যেই একটা খাড়া পাহাড় বেয়ে নেমে এসেছি এক পাশে শত ফিট গভীর খাদ কে পেছনে ফেলে।কিছু কিছু জায়গায় শুধু পা’জোড়া ফেলার জায়গাই ছিল কোনরকম।ঘন বর্ষায় এই রাস্তার অবস্থা কিরকম হতে পারে ভাবলেই কেমন লাগে!একটু পা হড়কে গেলেই!বেশ কয়েক টা বাঁশের/গাছের সেতুও পেড়িয়ে এসেছি দুর্দান্ত সাহসিকতার সাথে!এতক্ষনে সন্ধ্যা পেড়িয়ে নির্জন রাত কে সাথে নিয়ে চলছি আমরা।অনুপ দা তার হেডলাইট লাগিয়ে নিয়েছে মাথায়।দোস্ত ভুল করে লাইট আনেনি।সে আনবে বলে আমিও আনিনি।শেষে আমার মিনি লাইট দিয়েই চলতে শুরু করলাম।কুয়াশায় মাটিও ভিজে যাচ্ছে বলে মাঝে মাঝে পা পিছলে যাচ্ছে।আমাদের গন্তব্য এখনও বেশ দূর।বেশ কয়েক টা ছোট বড় পাহাড় পেড়িয়ে এসে এবার দেখা পেলাম একটা ছোট ঝর্ণার।শীতকাল বলে যদিও পানির খুব একটা প্রবাহ নেই।তবে সিয়াম ভাইয়ের কেড্‌স খুলতে বাধ্য করার জন্য যথেষ্ট!কিছুক্ষণ আয়েশ করে নিলাম এখানে ঝর্ণার পানিতে।কিছু খাওয়া দাওয়াও হল সাথে ছবিও তোলা হল আমাদের পথপ্রদর্শক দের সাথে।ওদের কাছ থেকে জানলাম এরকম গতিতে হাঁটলে আরও ৩০/৪০ মিনিট লাগবে বোর্ডিং পাড়া পৌঁছতে।এমনিতেই আমাদের বেশ দেরি হয়ে গেছে শ্লথ হাইকিং এর কারনে।আবার পা চালাতে শুরু করলাম।কিছুদুর এগোনোর পর দেখলাম অনেক বড় বড় গাছ সারিবদ্দ ভাবে কেটে রাখা আছে।জানলাম ট্রাকে করে এগুলো থানচি পৌঁছানো হয়।বেশ অবাক হলাম জেনে যেখানে আমরা ছোট বড় বেশ কিছু পাহাড় পেড়িয়ে এতদুর আসলাম সেখানে ট্রাক আসে কি করে!ওরাই জানালো, এখানে এই গাছ কাটার কাজে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোক আসে কাজ করতে।খুব কষ্টের এই জীবন তাদের।
সবুজ শ্যামলিমা অপরুপ আমার এই দেশ



আর একটু নিচে নেমে আসতেই পাহাড়ি নদী পেয়ে গেলাম।যদিও নদীতে তেমন একটা পানি নেই শীতকাল বলে।তবে বর্ষায় এই নদী যে প্রমত্তা হয়ে যায় তাতে কোন সন্দেহ নেই।আমরা পানির ঝাপটা মেরে নিজেদের যতটা সম্ভব সতেজ করে নিলাম।আমরা আমাদের গন্তব্যের একদম কাছে চলে এসেছি।এর ওপরেই বোর্ডিং পাড়া।ওরা এই নদীর পানিতেই ওদের তৃষ্ণা নিবারন করে।আসলে পাহাড়ে যত পাড়া আছে সব পাড়ার নিচেই এরকম নদী নইলে পাহাড়ি ঝর্না আছে।পাড়া গুলো গড়েই ওঠে এরকম ঝর্নাকে সাথে নিয়ে।এই গল্প পরে আরও তিন ধরে করব।কেমন করে হন্যে হয়ে একটু পানির জন্য আমাদের ঘুরতে হয়েছে শেষ বিকেলে অথবা পড়ন্ত সন্ধ্যায়।

এমন সেতু পার হতে হয়েছে কিছুক্ষণ পর পরই



পাড়ায় উঠে আসলাম আমরা।এসেই একটা দোকান পেয়ে গেলাম অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে।এরকম একটা জায়গায় এসে দোকান পাওয়া যেতে পারে যা আমাদের জন্য ছিল তখন হাতে চাঁদ পাওয়ার মত।প্রথম দিনের ট্রেকিং শেষে এক একেক জন ক্লান্ত বিধ্বস্ত।এটা অবশ্য প্রতিবারই হয়।শহুরে জীবনের বাইরে এসে পাহাড়ের সাথে সারাদিনের হাইকিং প্রথম দিন শরীর সহজে নিতে পারেনা।পরে অবশ্য ঠিক হয়ে যায়।আর তাছাড়া দু’জন একেবারেই নতুন অভিযাত্রী এসেছে আমাদের সাথে যাদের নিয়ে প্রথম দিনের অভিযান বেশ ভালোভাবেই করে ফেলেছি।অভিনন্দন জানালাম তাদের।

দিনের আলো বিদায় নেওয়ার পথে





দোকানে এক কাঁদি পাহাড়ি কলা পেয়ে সবাই হামলে পড়লাম।ঠিক ক্ষুধার্ত বাঘ যেভাবে তার শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেভাবে আমরা নিমিষেই সাভার করে ফেললাম প্রায় এক কাঁদি কলা।এবার পেট বাবাজী কিছুটা শান্ত হতেই আমরা ওদের সাথে কথা বলে নিলাম আমাদের পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে।এই রাতে যে আর সামনে এগোনোর মতো শক্তি,মনোবল কারও নেই তাতে সবাই একমত হলাম । তাই প্রথম রাত টা বোর্ডিং পাড়াতেই থাকবো ঠিক করলাম।আমরা চেয়েছিলাম তাবু টানিয়ে থাকতে যেহেতু আমাদের কাছে তাবু আছে।তবে ওরা বলল কারও বাড়িতে থাকাটাই ভালো হবে।তাতে রাতের রান্নার ঝামেলাটাও হয়ত কিছুটা বাঁচবে।

সূর্যি মামা শেষ বিদায় জানাচ্ছে





বোর্ডিং পাড়া হচ্ছে একটা ম্রু পাড়া।ওদের পাড়াপ্রদানের নাম রাইং ছং কারবারি।যে কিনা তখন থানচি ছিল ব্যাবসার কাজে।আমাদের নিয়ে যাওয়া হল ক্রি তাং নামের একজনের বাড়িতে।বাড়ি দেখে আমাদের বেশ পছন্দ হল।অনেক বড় বাড়ি।মাটির ওপরে মাচার মত করে তার ওপরে ওরা ঘর করেছে।ভেতরে ওরা নিজেরা থাকে।বাইরে আমাদের জন্য অনেক বড় একটা জায়গা ছেড়ে দিয়েছে।কাপড় চেঞ্জ করে নিলাম সবাই।শরীর আর কারও চলছেনা।কিন্তু রাতে না খেয়ে তো আর থাকতে পারবোনা।তাহলে কাল আর ট্রেকিং করা লাগবেনা।ওরা এসে জানতে চাইল খাবার আমরা ব্যাবস্থা করে নিতে পারব নাকি ওরা করে দিবে।ইতিমধ্যে দোকানে এসে একজন কে আমাদের খুব পছন্দ হয়ে গেছে।ঝং লং।অল্প বয়স কিন্তু খুব মিশুক আর সাবলীল।ও সর্বক্ষণ আমাদের সাথে আছে সেই তখন থেকেই।পাশেই ওর বাড়ি।আমাদের হয়ে সেই কথা বলে নিচ্ছে বাড়ির মানুষদের সাথে।যদিও বাংলা টা সে ভালো বলতে পারেনা তবে বুজতে পারে।আমরা ঠিক করলাম তাকেই আমরা কাল থেকে গাইড হিসেবে সাথে নিব।তাকে বলতেই সে এককথায় রাজি হয়ে গেল।অথচ আগে সে কখনও যায়নি শেরকরপারার দিকে।তবুও সে যেতে খুব আগ্রহী।
চলছে রাতের আঁধারে পথচলা



অন্ধকারে এক অভিযাত্রী,যা কে ভূত বলে ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই





এভাবে কেটে ফেলে রাখা হয়েছে অসংখ্য বড় গাছ



ওরে মিষ্টি মেয়ে



পানি রাখার এক অতি সুন্দর পাত্র



অবশেষে ! রান্নার কাজ চলছে পুরোদমে



ও এসে আমাদের রান্নাঘর দেখিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল।আমরা নুডলস রান্না করে ফেললাম শর্টকাট।আমাদের সাথে যাবতীয় সাজসরঞ্জাম সবই ছিল।ছিলনা শুধু রান্না করার এনার্জি টুকো।তাও করে ফেললাম।আহা ! সে কি রান্না ! এতো স্বাদ’ও নুডলস হতে পারে তা আগে জানতাম না।মনে হচ্ছিল যেন অমৃত খাচ্ছি।আমার লেখা পড়ে কারও জিভে জল এসে গেলে সেজন্য কোনভাবেই লেখক দায়ী নয় কিন্তু :) চেটেপুটে শেষ করে নিলাম চারজনে মিলে।সিয়াম ভাই অফার দিল এর পর চা/কফি কিছু একটা হলে মন্দ হয়না।কফি আমাদের সাথেই আছে।কিন্তু হাঁড়ি পাচ্ছিনা।যে হাঁড়িতে নুডলস পাকালাম ওটা ধুয়ে মহামুল্যবান পানি নষ্ট করার মত অবিবেচক নই আমরা।কারন আগেই বলেছি এই পানি তুলে আনা হয়েছে সেই পেছনে ফেলে আসা নদী থেকে।তাই এখানে এক ফোঁটা পানিও নষ্ট করা ঠিক না।যাইহোক একটা ছোট হাঁড়ি খুঁজে পেলাম অবশেষে।তাতেই বসিয়ে দিলাম পানি।দুই প্যাকেট নেসক্যাফে দিয়ে বানিয়ে ফেললাম গরমাগরম কফি।আরে বাহ!এবার কফিতে চুমুক দিয়ে দেখি কেমন কেমন যেন গন্ধ লাগছে।সবাই পাচ্ছি গন্ধ টা কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কিসের গন্ধ হতে পারে।একপর্যায়ে বুঝতে পারলাম ওটা পাহাড়ি দের অতি প্রিয় খাবার শামুকের গন্ধ।নিশ্চয় এই হাঁড়িতে শামুক রান্না করা হয়েছে আর ঠিক আমাদের মত পানির অপচয় রোধে হাঁড়িটা ঠিকমত ধুয়ে রাখা হয়নি।বুঝতে পেরেই সবার পেটের ভেতর কেমন যেন একটা মোচর দিয়ে উঠলো এবং একই সাথে একটা কমন আওয়াজ বেড়িয়ে আসলো সবার মুখ থেকে যে আওয়াজ টার সাথে আমরা সবাই পরিচিত :-/ তবে আমরাও এতো কষ্টের কফি ফেলে দিতে রাজী নই!সে শামুক ঝিনুক যাই থাকুক না কেন আমরা কফিতে নতুন কোন ফ্লেভার মনে করে সানন্দেই কফি পান করে নিলাম।আহা ! সেই স্বাদ ;) বাইরে বেরোতেই দেখি ধবল শাদা জোছনা তার পূর্ণ যৌবন নিয়ে আসছে আমাদের কাছে।কিন্তু আজ আর প্রেম করার মতো শক্তি,ধৈর্য কোনটাই নেই!পরের রাতে ঠিক জমিয়ে আড্ডা দিব এই শর্তে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম আর বিছানায় শরীর পড়তেই সবাই ঘুমের রাজ্যে।


===========চলবে===========
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×