somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোৎস্না মাখা জল সাগড়ে ক্যাম্পিং

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব এখানে

সাজেক থেকে আসার পথে কার বাগানের কয়টা কাঁচা আম আমাদের হিংস্র থাবায় আক্রান্ত হল সে হিসেব আর দিচ্ছিনা!এ হিসেব পেলে বাগান মালিক রাও আবার মামলা টামলা দিয়ে বসতে পারে।একটু পর পর গাড়ি থামিয়ে বেচারা নিরীহ প্রকৃতির ওপরও’তো কম অত্যাচার টা করলাম না!সংখ্যাটা নিতান্তই কম না।১০ জন!একটু একটু করে বিয়োগ করলেও দু একটা পাহাড় ভেসে যাওয়ার কথা!লঙ্গদু আসতে আসতেই আমরা দিনকে বিদায় জানালাম।সেখানে আমাদের স্বাগত জানালেন এলাকার প্রিয় মুখ আরমান ভাই।আসার পর থেকে পুরো সময় টা এই মানুষ টা আমাদের সঙ্গ দিয়েছেন অকৃপণ ভাবে।


আমরা তাবু ফেলেছি সখিনার চরে।চর তো নয় যেন সবুজের কার্পেট।সবুজ ঘাসে মোড়ানো বেশ বড় সেই চর।চারদিকে কাপ্তাইয়ের বিস্তীর্ণ জলরাশি।কিছুটা দূরেই মেঘে ঢাকা মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়গুলি আমাদের পাহাড়ার দায়িত্ব নিয়েছে সানন্দে।যাক এমন দাম্বিক পাহারাদার ফ্রিতে পাওয়া চাট্টিখানি কথা না!যাক,রাত ভর পাহারাই দে তুই বেটা!রাত যত বাড়তে থাকলো আকাশ ভেঙ্গে আলোর ফোয়ারাও যেন উজ্জ্বল হতে লাগলো।মাথার ওপরে ধবল শাদা চাঁদের ঝলকানি।চারদিকে এক অদ্ভুত মোহময় শান্ত পরিবেশ।যেদিকে দুচোখ যায় শুধু শুন্যতা।ভেতরটা কেমন খালি খালি হয়ে যায়।অনেক দূরে কিছু মাছ ধরার নৌকায় আলো জ্বলছে। এমন নিস্তব্দ প্রকৃতি আমাদের আপন করে নিয়েছে খুব সহজেই।আমরাও তার রূপ শুধায় ডুব দিয়েছি।


কিছুক্ষন পরই একেকজন একেক দিকে চলে গেল চরের।কারন টাও পরিষ্কার।প্রেম টা সবাই একা একাই করতে চায়।কেউ সাক্ষী রাখতে চায়না।কি স্বার্থপর রে বাবা!প্রেমে সবাই এমন স্বার্থপরই হয়ে যায়!আমি নিজেও কিছুক্ষন নিঃসঙ্গ প্রকৃতিকে সঙ্গ দিয়ে উঠে গেলাম।পেছনের দিকে গিয়ে একটা নৌকা খুঁজে বের করলাম।বাহ!আমাকে আর পায় কে।আমি আমার সঙ্গী পেয়ে গেছি।ভেসে পড়লাম পানিতে।কিন্তু বেশিক্ষণ পারলাম না।রাতে খাওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে।খুব ইচ্ছে ছিল চরেই আগুন জ্বালি।রান্নার ব্যাবস্থা টা ওখানেই হয়ে যাক।কিন্ত আমাদের প্রস্তুতিতে কিছুটা ঘাটতি থাকায় তা আর হয়ে ওঠেনি।তাছাড়া নিরাপত্তার একটা ব্যাপারও ছিল।আমরা চলে গেলাম বাজারে।ওখানে কাপ্তাই থেকে ধরে আনা চমৎকার কিছু মাছ পেয়ে গেলাম।শুনলাম তিন কেজি ওজনের এক তেলাপিয়া রান্না হয়েছে।তেলাপিয়া মাছ তিন কেজি!রুই কাতলা হলে কথা ! ক্যামনে কি !আমার একে খেয়ে দেখতেই হবে।সাথে আরও কয়েক রকমের মাছও ছিল।খেয়ে তো আমার মাথা ঘুরতে লাগলো।এতো টেস্ট তেলাপিয়া হতে পারে ভাবাও যায়না।শুধু তেলাপিয়া খাওয়ার জন্য হলেও আমাকে আবার এখানে আসতে হবে।ডিসিশন ফাইনাল।আসতেই হবে আমাকে।আমি মোটেও মাছ পাগল মানুষ না।তাতেই আমার এই অবস্থা।যারা পছন্দ করেন তারা নিশ্চিত কয়েকদিন থেকেই যেতেন ওখানে শুধু মাছ খাওয়ার জন্য।বাকীদেরও একই মতামত।মাছ খাওয়ার জন্য আবার সবাই আসতে চায়।কাপ্তাই থেকে তুলে আনা এতো টাটকা মাছ তো আর আমরা কংক্রিটের শহরে পাবনা।


জম্পেশ মৎস্য ভোজন শেষে ফিরে আসলাম ঠিকানায়।মনের ভেতর একটাই ভয়।এত বড় তেলাপিয়া না আবার পেটের ভেতর সাঁতার কাটা শুরু করে দেয়!তাইলেই বিপদ!তারে আর সামলানো যাবেনা!সামনেই এমন কাপ্তাইয়ের স্বচ্ছ জলের ঢেউ।তার কেন খুপরির ভেতর ছোট্ট জলাশয়ে ভালো লাগবে!বের হতে চাইলেই বিপদ!যাক বাবা তুই এবার নাকে তেল দিয়ে ঘুমা।এখন আমাদের গানের আসর বসবে।আজ সবাই শিল্পী।প্রাণ খুলে গলা ছাড়বে আজ।সবাই যে এমন প্রতিভাধর তাও আগে জানতাম না।এক একজন জ্বলন্ত প্রতিভা।অনেকক্ষণ ধরে চলল গানের আসর।অবশ্য এমন পরিবেশ পেলে সবাই শিল্পী হয়ে যায়।সবার ভেতরের সুপ্ত প্রতিভারা জেগে উঠেছে।আজ আর কাউকে থামানো যাবেনা মনে হচ্ছে!চলুক না,ক্ষতি কি!এমন সুযোগ আর এমন প্রকৃতি তো সবসময় পাওয়া যায়না। কেউ আবার কবিতার চাষাবাদও করেছে।আর ঝিঁঝিঁ পোকার দল আবহসঙ্গীতের কাজটা কি সুনিপুণ ভাবেই না করেছে।আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি এতো সুন্দর শব্দ কোন মিউজিশিয়ান কোন ইন্সট্রুমেনট দিয়ে বের করে আনতে পারবেন না।


আসর শেষ হতে হতে গভীর রাত।কারও চোখে ঘুমের জায়গা নেই।একজন চলে গেছে নৌকা নিয়ে অনেক দূর।আমিও সিরিয়াল দিয়ে বসে আছি।সে ফিরলে আমিও মাঝি হব!তাছাড়া আমাদের কাছে তাবু আছে তিনটা।তাড়াহুড়ো করে ২ টা ফেলে এসেছি।এখন তিন তাবুতে ১০ জন কিছুতেই ধরবেনা।তাই কয়েকজন সারারাত নৌকা বেয়ে আর মাছ ধরে কাটিয়ে দিব ভাবছি।কিছু মাছ ধরতে পারলে সকালে নাস্তা টাও সেইরাম হবে।এই মধ্য রাতে প্রিয়তমা চাঁদ’ও তার পুরো যৌবন মেলে ধরেছে।চকচক করছে চারদিকে।শান্ত পানির বুকে আমি বৈঠা মেরে যাচ্ছি।ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে নৌকা চলছে অচিন দেশে।এমন স্বর্গীয় প্রান্তরে কে ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করে!এই আমি মাঝিই হব।যার নৌকা পাড়ে ভীরবেনা।হলুদ সূর্য টা যখন কাপ্তাইয়ের বুক ছিঁড়ে উঁকি দিবে পূব আকাশে তখন আমি নীরে ফিরবো।

আমার এতো সুখ বকিদের সইলনা।শেষে পাড়ে ভেড়াতেই হল তরী খানা।গিয়ে দেখি সুন্দরী গন বড় তাবুর দখল নিয়ে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে।রইল বাকি ছয়।তিন জন ঠিক করেছে বাইরে শুয়ে শুয়ে রাতভর আকাশ দেখবে।আহা!মনে তাদের রং লেগেছে।সব এই দুর্মুখি পরিবেশের দোষ।এমন জায়গায় আসলে কতজন কতকিছু হয়ে যায়!যাকগে চলেই আসছি যখন তখন তাবুতেই ঢুকি।সূর্য্যি মামা জাগার আগে আবার উঠে পড়তে হবে।মামা কে কিছুতেই একলা উঠতে দিবনা।আমাকে নিয়েই উঠতে হবে।

তাবুর ভেতরে গিয়েও ঘুমটা আর এলনা।কখন ভোর হবে সেই চিন্তায় এপাশ ওপাশ করতে করতেই ৫ টা বেজে গেছে।আমিও উঠে পড়লাম।কিছুক্ষন একলা হাঁটাহাঁটি করলাম তীর ঘেঁসে।ঢেউয়ের নাচন দেখলাম।একটু পর পূব আকাশ একটু একটু হলুদ হতে শুরু করল।আমিও অধীর অপেক্ষায় থাকলাম সেই মুহূর্তের।আকাশ টাও যেই ফর্সা হতে শুরু করল অমনি কত্থেকে একঝাক কাক এসে হাজির আমাকে সঙ্গ দিবে বলে।সবাই গভীর ঘুমে আর আমি চরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছি এমন অপার্থিব মুহূর্ত গুলো কে বন্দী করব বলে।এমন সকাল একটা মানুষের জীবনে খুব একটা আসেনা।তাই যতটা সম্ভব ধরে রাখি মনের জানালায় আর ক্যামেরার স্মৃতিকোঠায়।স্মৃতি কোনদিন অনেক ভীরে বেঈমানি করলেও হয়তো ছবিগুলো করবেনা।ঠিক ধরে রাখবে একেকটা মুহূর্ত পরম মমতায় আর আদর মাখা ভালবাসায়।

নির্জন কাপ্তাইয়ের কোলে ক্যাম্পিং










এই সেই ভোর, যার জন্য অনেক কাল ধরে অপেক্ষা করা যায়



কাকের দল সঙ্গ দিচ্ছে আমায়



মাঝি চলছে সুদূরের পথে সুখের সন্ধানে























সবটুকো সবুজ আছলে পড়েছে যেন



এমন শান্ত প্রকৃতি পেলে কে হারাতে না চায়







সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২২
৪৩টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×