somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: "গল্পের গল্প"

০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- এই শুনছো, শোন না।
রাহা খুব আদুরে গলায় সামিকে ডাকল।

আজ ছুটির দিন। এক কাপ কফি হাতে সে টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। চারপাশে গাদা গাদা বই খাতা স্তুপ করা। লেখকরা নাকি অগোছালো হয়। রাহা তার মান রেখেছে। সে মোটেই গোছানো স্বভাবের না। তার ভাগ্য ভাল সামি গোছগাছে বেশ পটু। অগোছালো ঘর একদম সহ্য করতে পারেনা। হয়তো সোফার কুশনটা কোনাকুনি থাকার কথা কিন্তু রাহা বসে সোজা করে রেখে গেছে। তার চোখে লাগে। তখনি ঠিক করে দেয়। রাহা কলেজ থেকে ফিরে ওড়না একদিকে, মুখ মুছে টাওয়েল আরেকদিকে রেখে দেয়। সবাই বলে ছেলেদের স্বভাব এমন হয়। তাদের বেলায় উল্টো। কিছুক্ষণ বকাঝকা করে সামি গুছিয়ে ফেলে। তার সব একদম নিখুঁত চাই। প্রকৃতি এভাবেই বোধহয় বিপরীত স্বভাবের মানুষকে মিলিয়ে দেয় ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য। যদি দুজনই সমান তালে অগোছালো হত তাহলে কী হত!
সামি খবরের কাগজ থেকে মুখ না তুলেই বলল,
- শুনছি। বল।

পত্রিকা পড়া শুরু করলে সামির আর দুনিয়াদারির খবর থাকেনা। প্রত্যেকটা খবর খুঁটে খুঁটে পড়ে। এমনভাবে পড়ে যেন পরদিন তার এটার উপর পরীক্ষা। কোন পয়েন্ট বাদ দেয়া যাবেনা। ১০০ তে ১০০ পেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই তার তাজা খবরের কাগজ চাই। বাসি হলে চলবেনা। অবশ্য কোন কারণে যদি সকালে পড়া মিস হয়ে যায় তাহলে রাতে যখন বাসায় ফেরে তখন পড়ে নেয়। তবু পড়া বাদ নেই। রাহা মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়। সামির পড়া শেষ হলে সে হয়তো কোন এক ফাঁকে শিরোনামগুলো দেখে নেবে। কি-ই বা আর থাকবে! হয়তো প্রধানমন্ত্রী কোন একটা সেতু উদ্বোধন করেছে। সেখানে তার সরকার কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর বিরোধী দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে কী বলেছে। বিরোধী দল দোয়া মাহফিল করেছে আর সরকারের কী কী সমালোচনা করেছে। কোথায় কোথায় গাড়ি দূর্ঘটনায় কতজন মারা গেছে, যে কোন একটা ঘটনাকে হাইলাইট করে তা নিয়ে দিনের পর দিন ত্যানা প্যাঁচানো, ট্রাম্প বৈদেশিক কূটনীতিতে কী পন্থা অবলম্বন করেছে, রাশিয়ার সাথে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন পর্যায়ে। এইতো প্রতিদিন তো এসবই ছাপছে। পত্রিকা না পড়েও চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। তার চেয়ে সাহিত্যপাতায় নতুন নতুন লেখকদের নতুন নতুন গল্প কবিতা পাওয়া যায়। যেমনই হোক তবু তো নতুন কিছু। রাহা ভেবে অবাক হয় এ যুগে, একুশ শতকের এক যুবক কি করে খবরের কাগজের প্রতি এতটা আসক্ত হয়। তার ধারণা ছিল উপন্যাসের বাবা, চাচা ধরণের লোকগুলো এমন হয়, বাস্তবে এমন লোক নেই। যুবসমাজে তো না-ই। সামিকে দেখে তার ভুল ভেঙেছে। রাহা নিজে মাস্টার্স শেষ করেছে। কিন্তু সে না পারতে বাবার চাপাচাপিতে মাঝে মাঝে খবরের কাগজ নিয়ে বসত। এখনো তার খবরের কাগজ পড়া বলতে শিরোনামে চোখ বুলিয়ে নেয়া আর বিনোদন, সাহিত্য পাতা পড়ে দেখা কী হচ্ছে না হচ্ছে। তার মতে রাজনীতির কচকচানি আর খুনখারাপির খবর পড়ে মন মেজাজ খারাপ করার কী দরকার। তাছাড়া টিভিতে খবর তো দেখাই হয়। সামির যে কী করে এমন নেশা হল কে জানে!

-আমার না খুব রোমান্টিক একটা গল্প লিখতে ইচ্ছে করছে। লুতুপুতু টাইপের প্রেমের গল্প।
সামি খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে রাহার দিকে তাকাল। চোখে একসাথে বিরক্তি আর বিস্ময়।
-তুমি আবার কবে থেকে রোমান্টিক গল্প লেখা শুরু করলে?
রাহা কাজের ফাঁকে শখের বসে মাঝে মাঝে লেখালেখি করে। সামি সবসময় তার প্রথম পাঠক, সমালোচক। তাকে উৎসাহিত করে, অনুপ্রেরণা জোগায়। তবে তার লেখার মূল উপজীব্য হল নিম্নশ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষজন। তাই সামি কিছুটা অবাকই হয়েছে।

- সত্যি। ধর দুটো টিনেজ ছেলেমেয়ে নতুন প্রেমে পড়েছে। তাদের আবেগময় ভালোবাসার কাহিনী।
- বুড়ো বয়সে ভীমরতি আর কী।
- যাও কী যে বল না! এখনি বুড়ি হয়ে গেলাম বুঝি? মাত্রই তো ১ বছর হল আমরা বিয়ে করলাম। বিয়ে করলেই বুড়ো হয়ে যায়?
- যায়-ই তো। বিয়ে করলাম। দুদিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে। বুড়ো হতে আর বাকি কোথায়!
-তুমি কচু জানো। আচ্ছা বাদ দাও। শোন। মনে কর ছেলেটার নাম প্রিয় আর মেয়েটার নাম প্রেমা। দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে। রাতের বেলা কম্বল মুড়ি দিয়ে ফোনে ফিসফিস করে কথা বলে। মুঠোফোনে প্রেমবার্তা চালাচালি করে। স্কুল পালিয়ে মাঝে মাঝে দেখাও করে।
- তোমার না কাল কলেজে প্রশ্ন জমা দেয়ার লাস্ট ডেইট?
- হি হি। তাইতো মাথার মধ্যে এসব ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই বলে রাহা ভেংচি কাটে।
-তারপর ধর তাদের এমন কঠিন প্রেমের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ এসে হাজির। এ নিয়ে তুমুল দ্বন্দ্ব.....। আচ্ছা, কয়েকটা রোমান্টিক ডায়ালগ বল তো।
- তোমার কোনদিক দিয়ে আমাকে রোমান্টিক মনে হয় যে আমাকে রোমান্টিক ডায়ালগ বলতে বল!
-ইশ! ঠিকই তো বিয়ের আগে কত রোমান্টিক কথা বলতে। বিয়ের পরই না এমন কাঠখোট্টা হয়ে গেছ।
-সবসময় মানুষ একরকম থাকে নাকি। বয়সের সাথে, সময়ের সাথে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসবেই।
-কিন্তু আমার গল্পের নায়ক নায়িকার জীবনে কখনো পরিবর্তন আসবে না। তারা সারাজীবন একইরকমভাবে একে অপরকে ভালোবেসে যাবে। তাদের জীবন একই ঘূর্ণনে আবর্তিত হবে। তারা রাত জেগে প্রেম করবে। তাদের মধ্যে তৃতীয় একজন এসে আলাদা করতে চাইবে। সব বাধা পেরিয়ে তারা আবার আগের মত প্রেম করবে। এমন চক্র চলতেই থাকবে। তাদের বয়স বাড়বেনা। তাদেরকে কখনো বার্ধক্য ছোঁবেনা। তাদের ঘড়ির কাঁটা একই সময়ে আবর্তিত হবে বারবার, বহুবার।
বলতে বলতে রাহা অন্যমনষ্ক হয়ে যায়। গভীর দৃষ্টিতে সামির দিকে তাকায়।
- আচ্ছা, তুমি যদি প্রিয় হতে আর আমি প্রেমা হতাম?
- তাহলে আমরা বাস্তবে থাকতাম না। তোমার মত এমন কোন লেখকের গল্পের চরিত্র হতাম....। তোমার শিল্পি মন জেগে উঠেছে। তোমার প্রশ্ন বানাতে হবেনা। তুমি প্রেমের গল্প লিখ। লিখে আমাকে দেখাও। পড়ে ধন্য হই।
এ বলে সামি আবার পত্রিকা পড়ায় মন দিল। আর রাহা ডুব দিল তার গল্পের জগতে।


০৮.০৩.২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ৩:৫০
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×