somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোস্টেল জীবনের টুকরো গল্প(স্মৃতির পাতা থেকে)

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমি সাধারণত চা খাইনা। আসলে তেমন পছন্দ না। আজ ইউনিভার্সিটির ক্লাস নেই। তবু অভ্যাসবশত সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে মনে হল এক কাপ চা খাওয়া যায়। যেই কথা সেই কাজ। উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এলাম। কিন্তু একটু খাওয়ার পরই আর ইচ্ছে হলনা। তলানিতে অনেকখানি চা রেখে উঠে চলে গেলাম শারমিনের রুমে। ওর রুম আমার দু'রুম পরেই। ও আমার অনেক পুরনো বান্ধবী। স্কুল-কলেজ শেষ করে এখন ইউনিভার্সিটিতেও একসাথে পড়ছি। ওর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে, ইউটিউবে এটা সেটা দেখে আবার রুমে ফিরে এলাম। সারাটা দিন একা একা কিচ্ছু করার থাকেনা। সবসময় গল্পের বই পড়া কিংবা গান শোনার মুডও থাকেনা। রুমে এসে শুধু শুধু একদিক থেকে আরেকদিকে পায়চারী করছি। হঠাৎ টেবিলে রাখা চায়ের কাপটার দিকে চোখ যেতেই দেখি সারি বেধে পিঁপড়া ওটার ভেতর ঢুকছে।

হোস্টেলে থাকার এই এক ঝামেলা। কিছু কোথাও রাখতে না রাখতেই পিঁপড়া বাবাজীরা এসে হাজির হয়ে যায়। ওইদিন দেখি পানির জগে পিঁপড়া। এতদিন জানতাম মিষ্টি খাবারে পিঁপড়া ধরে। আরে বাবা পানি কি মিষ্টি কিছু যে এখানেও এসে ভাগ বসাতে হবে। কী যে যন্ত্রণা! অবশ্য ঝামেলা একটা না, অনেক। ইঁদুরের উৎপাত, তেলাপোকার উৎপাত আরো কত কী! আমাদের রুমের ইঁদুরগুলোর আবার নাক উঁচু। তারা যে সে জিনিস খায়না। ভালো ভালো খাবারগুলো যেমন নুডলস, চিপস, চকলেট এসব খায়। এসব যত ভেতরেই ঢুকিয়ে রাখি খুঁজে বের করে ফেলে। অন্য খাবার সামনে রেখে দিলেও খাবেনা। তার উপর বাথরুম নিয়ে সমস্যা। আমাদের দু'রুমের আটজন বাসিন্দার মোটে একটা বাথরুম। হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গেলাম, দু'মিনিট না যেতেই নক। লিনা আপুর গলা, 'সায়মা, দেরী হবে?' দাঁত ব্রাশ করতে করতে উত্তর দেই, 'না আপু, এইতো হয়ে গেল।' নাহয় কোন কোনদিন বিরক্ত হয়ে বলি, 'হ্যাঁ আপু, একটু লেইট হবে।' হয়তো আসলে আমার দেরী হবেনা, তাও বলে দেই। কার ভালো লাগে বাথরুমে যেতে না যেতেই দরজায় নক পেতে! লিনা আপু আমার পাশের রুমেই থাকে। সবচেয়ে সিনিয়রদের মধ্যে একজন। এই মার্চেই পাশ করে বের হয়ে যাবে।

যাই হোক যা বলছিলাম, সারি বেঁধে পিঁপড়া কাপের ভেতর ঢুকছে। তাকিয়ে দেখি ভেতরে অনেকগুলো পিঁপড়া মরে দলা পাকিয়ে আছে আর তার উপর আরো কতগুলো জ্যান্ত পিঁপড়া কিলবিল করছে। সেগুলো মরা পিঁপড়াগুলোকে ভেলা বানিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে আর মনে হয় চা খাবার চেষ্টা করছে। যদিও ব্যাপারটা দেখতে জঘন্য, আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হল। সাথে সাথে গিয়ে শারমিনকে ডেকে নিয়ে এলাম এই মজার কান্ড দেখার জন্য। শারমিনও আমার মত উৎসাহিত। কাপটা রাখা ছিল টেবিলের উপর। দুজনই প্রবল উৎসাহ নিয়ে দুটো চেয়ার টেনে দু'জোড়া কৌতুহলী চোখ চায়ের কাপে রেখে বসে পড়লাম। দেখা যাক কী হয়! এমন তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে আমাদের অতি উৎসাহ দেখে মিশু হেসে কুটিকুটি। কোনমতে হাসি চেপে বলল, 'বাহ, আমাদের পিঁপড়া বিশেষ  অজ্ঞগণ!' শারমিন মুখ তুলে ঝামটা মারল, 'চুপ থাক! নিজে তো থাকিস এক গান নিয়ে সারাদিন। আমরা পিঁপড়া বিশেষজ্ঞ হলে তোর কী? হুহ।' তারপর আবার চায়ের কাপে গভীর মনোযোগ। যেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে সেখানে যা না দেখলেই নয়।

এমন ছোটখাটো ঘটনা, তুচ্ছ ঝগড়াঝাটি, হালকা রসিকতা, অকারণ হাসাহাসি, আজেবাজে বকবকানি, আর ছুটির দিনগুলোতে চরম আলসেমি- এসব নিয়ে হোস্টেলের দিনগুলো কীভাবে কীভাবে যেন কেটে যায় টেরই পাওয়া যায়না! অথচ প্রথম যখন ঠিক হয় হোস্টেলে থাকব কেমন এক অজানা ভয় মনে কাজ করছিল। না জানি কেমন হয় সেখানকার পরিবেশ, সেখানকার মানুষগুলো। সেখানে আমি খাপ খাওয়াতে পারব তো! অথচ এখন মনে হয় এটাই আমার ঘর। সেমিস্টার শেষে বাসায় গেলে কয়দিন পার হলেই হাঁসফাঁস লাগে। মনে হয় কবে হোস্টেলে ফিরে যাব!
মানুষের মন বড়ই অদ্ভুত!



সেপ্টেম্বর, ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪১
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×