স্বরচিত কবিতা কেইবা না ভালবাসে। এদের মধ্যে ছোট বড়, ভাল মন্দ, জনপ্রিয় কিংবা জননিন্দিত কবিতা খুঁজতে গেলে হয়রান হতে হয়। যদিওবা আমি কবি নই, নবিশ কাব্যচর্চাবিদ বলে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি তবুও কিছু কবিতা লেখি কিছু কবিতা খুঁজি। আর কবিতার ব্যাকরণ আমি মানিনি কোন দিন। যদিওবা কিছু সনেট লেখেছি। তবে শুধুই তা কৌতূহলবশত। মুক্তছন্দ কিংবা মুক্তগদ্য কাব্য আমার প্রিয়। এক জিনিস নিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে ভাল লাগে না। যেহেতু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কবিতা লেখতে পছন্দ করি তাই, বিভিন্ন লেখায় ভাবের প্রকাশে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে, বিক্ষিপ্ততা রয়েছে। লেখার স্বাধীনতা নিয়েই লেখি, তবে এতে কিছুটা লাগাম টেনে দিলে আরো ভাল হত। যাকগে আমার দৃষ্টিতে এক দুবছরেই কবি হবার মত কবি আমি নই তবে অ-কবি হয়েছি হয়ত। তাই কেউ কবি বললে কিঞ্চিৎ বিব্রত হই। তবুও কিছুটা সাহস করেই প্রেমের কবিতা কিংবা সমসাময়িক কবিতার প্রেমে বারংবার লেখি পড়ি, লেখা দেই। এই দিকে হয়ত যখনি দুপা সামনে রেখেছি তখনি খুঁজে পেয়েছি সামুকে। লেখাটা শখের বসে। শুরু থেকে শেষতক পুরোটাই শখে। ভাল লাগে তাই লেখি। আমি মনে করিনা জনপ্রিয়তাই সবকিছু। আমি চাই আমার কবিতায় আমি যেন শান্তি খুঁজে পাই, একজন পাঠক শান্তি পায়। আগে সে শান্তি পেতাম না তবে আজকাল দেখি কিছু কবিতাদি মনে মনে তৃপ্তিও এনে দিচ্ছে। কবিতা লেখা পুরনো কবিতায় আমি আবার খুঁজে পাচ্ছি আমার আমিকে। এতে ব্লগের পরিবারের অবদান রয়েছে। আপনাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমার তেমনি কিছু কাব্যপ্রয়াস নিয়েই আপনাদের সাথে আমার প্রিয় পুরনো তিনটি কবিতার একটি কবিতাগুচ্ছ শেয়ার করলাম। আশা করি যারা আগে কবিতা গুলো পাঠ করেছেন এবং নতুন পাঠ করছেন সবার নিকট তা উপভোগ্য হবে।
ক্রীতদাস ফিরে এসেছে
এলিটা, জানি তোমার রাজ্যপাটে
বদলে গেছে দুঃশাসনের নিয়মনীতি,
লাজুক নরম হাতে
নিয়েছ কঠোর চাবুক দন্ড।
তাই অত্যাচারে আজ ক্ষতবিক্ষত আমার জমিন
ঊষর থেকে হয়েছে আরও ঊষর,
পাথুরে জমিন চিরে ফলাতে পারিনি
একটি শস্যকণা, তোমারি দুঃশাসনে।
ভুলে গেছ গোলায় ভরা রাশিরাশি ধান শস্য,
বুকের জমিনে চাষ করা বাহারি সব আবাদ,
আবাদযোগ্য সেই জমিনে নেই
তোমার পদছায়া কিছু চাবুকের দাগ ছাড়া।
বেনিয়াদের মত লুটেছ আমার পানের বরজ,
হালের গরু, কাঁসার থালা।
তোমার অত্যাচারে আজ বাংলা বিহারে
অবরোধ, ধর্মঘট।
অবাধ্য ক্রিতদাস তাই ছুড়েছি এক চরমপত্র
এক এক করে জবাব দাও,
প্রতিটি প্রশ্নের, প্রতিটি গোলাপের,
প্রতিটি নির্মম চাবুকের।
নইলে পুড়িয়ে দেব জমিদারীর দেবালয়, দেবতা,
সাজব নকশাল হাতে নিয়ে রাইফেল।
তখন চোখ বুজে ক্রিতদাসের মাথার নামে তুলে দিও
শত সোনার মুদ্রা ইনাম।
সময় - ২২ শে আগষ্ট, ২০১৫
হলুদের রাজতরু
হলুদ
হলুদ জন
হলুদের মন
হলুদে ময়দান
হলুদের হাততালি
হলুদের হাটে বনমালী
হলুদে মাইক, হলুদ বাঁশি
হলুদ ক্যামেরা, হলদে হাসি,
হলদে পরীর পুলকিত শীৎকার
হলুদ জোকসে, হলুদের নেশা চুমি,
হলুদের জোয়ার, হলুদের প্লাবনভূমি।
হলুদের টাকা, হলুদের গাড়ি, হলুদে ঘর
হলুদের আস্তাবলে তাগড়া চাবুক, শীর্ণ কর,
ময়ূরাক্ষীর ছিন্ন পেখম,নগ্ন বদন, হলুদে আগুন।
হলদে উল্লাসে আজ এলিটার হলদে যৌবন ফাগুন।
কাল- ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
বালুকণার চিঠি
কবি,
জানো কি? সাগরের বালুকাবেলায়
পড়ে থাকা মন্দ্রিত বালুকার মত,
এ বুকেও কিছু ইতিহাস আছে-
আছে কিছু ভৌগোলিক মানচিত্র ব্যথা,
কিছু পোড়খাওয়া সমুদ্র-নদী মোহনায়
উপমহাদেশীয় সমুদ্র অবগাহন গাঁথা।
এই যে জলের আখরে লেখা কবিতা,
তারও আছে কিছু কথা, গোপনে!
কালের গর্ভে লেখা পবিত্র
শীকরের বলিষ্ঠ কণ্ঠ ছেয়ে,
এই অক্ষর নক্ষত্রাদির ছায়াপথ দূর,
এই যে কাগজে ঝরছে কলমের কান্না,
কান পেতে শোন, তারও আছে
কিছু বোধগম্য গান, কবিতা, সুর!
প্রসন্ন বিকেলের আলো-ছায়া ভীড়ে-
সূদুরিয়ার প্রাচীন রাজ্যের রাজেশ্বরী,
বিশুদ্ধতম ভালবাসার ঘ্রাণ নিতে গিয়ে
ধেয়ে চলা ঝর্ণাধারার কুলুকুলু উচ্ছ্বাস,
এই বুকের মানচিত্র বেয়ে
তারও শুনেছি কিছু পাতাঝড়া নিঃশ্বাস!
এমনি,আরও কিছু কথা কবি,
এমনি হয়, যা বলা হয় না,
সে কথা সাগরের ঢেউতোলা বাতাসের
অব্যক্ত হাহাকার, কাঁদে বরুণানীর নির্জনতায়!
দিগন্তজয়ী গাঙচিলের ডানায় সোনাদিয়া
রৌদ্রতেজ, কস্তূরীর ভুরভুরে গন্ধ ভরা
সুরম্য নগরে, সে কথা বলা হয় না।
তবে বালুবেলার সমস্ত দিগন্তবৃত্ত খুঁজে,
নুনে মাখা বেনামি বালুকার বুকে
এঁকে দেওয়া যায় জাতিস্মর রাতের
ভুল কবিতায় আবছায়া ছবি।
এমনি আরও কিছু কথা কবি,
এমনি হয়, যা বলা হয় না!
তুমি যদি পার মেখে দিও সে সবি,
তোমার মায়াবী কবিতার চাদরে,
গাঢ় লাল কিংবা প্রখর সোনালি আখরে।
সময়- ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪০