ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। বাস্তবিক ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশেই পৌরনিক চরিত্র কৃষ্ণ/বাসুদেব একজন দূত ছিলেন। মহাভারত যুদ্ধে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের মোড় তিনি কূটনৈতিক চালে দফায় দফায় ঘুরিয়ে দিতেন। তার ভূমিকা ছিল ধর্মযুদ্ধের রথীমহারথী যোদ্ধাদের থেকেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশী। কূটনীতিজ্ঞ চাণক্য ভারতের একজন প্রবাদপুরুষ। আজ যুগ বদলেছে, রাজা বদলেছে, গঙ্গা যমুনার কত নদী বহে গেল, বিশ্ব সম্পর্কের নীতিগুলো বদলায়নি। যাইহোক, গৌরচন্দ্রিকা থাক, কাজের কথায় আসি। আজ সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ফিলিস্তিন সফর একই সাথে ইসরায়েল সফর নিয়ে পত্রিকাগুলোতে বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি দেখে যারপরনাই বিস্মিত একই সাথে বিভ্রান্ত হয়েছি বটে। পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রগুলো যেখানে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দে দ্বিধাবিভক্ত সেখানে ভারত এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। মানে ধুন্ধুমার কান্ড আরকি!
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে "বন্ধু" বলে সম্বোধন করার পরও ভারত জাতিসংঘে ট্রাম্পের জেরুজালেমকে রাজধানী করার প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট প্রদান করেন। ১২৮টি দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। সে জন্যেই কি তবে মাহমুদ আব্বাস নরেদ্র মোদির ফিলিস্তিন সফরের সময় তাকে মহান অতিথি বলে সম্বোধন করেন? বিষয়টি কিছুটা পরিষ্কার! নির্যাতিত ফিলিস্তিনের ক্ষতে নিশ্চয় এটি মলমের কাজ করবে।
যাকগে, এই ভোটাভুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু সিরিয়াস ছিল। জাতিসংঘে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্টদূত নিকি হ্যালি হুশিয়ারীর পর ট্রাম্প সরাসরিভাবে এই ভোট দাতা দেশগুলোর আমেরিকান সাহায্য বাতিলের ঘোষণা দেন। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের ৩৫ বিলিয়ন সাহায্য সবার প্রথম কাট করা হয়। কিন্তু ভারতের ভোটে আমেরিকার প্রতিক্রিয়াটি জানা যায় নি। শুধু তাই নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিন- একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক তারাই ভালই জানেন যে মোদির এমন দ্বিমেরু নীতি কারণটা কি।
ইসরায়েল ভারত সম্পর্ক নতুন নয়। ১৯৫০ সালেই ভারত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। আবার ১৯৯৮ সালে পোখরান পারমানবিক পরীক্ষার পর বিশ্ব অবরোধের মুখে ইসরায়েল ভারতকে সাহায্য করে। তাই বেনিয়ামিনের ভাষায় ইসরায়েল ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু। এদিকে মজার বিষয় হল যে ভারত প্রথম দেশ যারা কিনা ফিলিস্তিনকে আরব বিশ্বের বাইরের প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু বর্তমানে ভারত তার নিরাপত্তায় চায় আধুনিক অস্ত্র। আর তাই ইসরায়েলের মেরকোভা ট্যাংক, আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা, এন্টি ট্যাংক স্পাইক গাইডেড মিসাইল এসবই ভারতের লক্ষ্য। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। এছাড়া প্রতিরক্ষার পাশাপাশি কৃষি ও মহাকাশ গবেষনায় দুটি দেশের চুক্তি রয়েছে।
যেহেতু ভারতের বিশাল রেমিট্যান্স মধ্যপ্রাচ্য হতে আসে তাই ফিলিস্তিনকে সমর্থনের মাধ্যমে আরব বিশ্বের নজরে ভাল থাকতে চায় ভারত। তাই মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি নির্ভর ভারতের এই দ্বিমুখী নীতি বলে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব স্ট্রাটেজিক স্টাডিসের মতামত। শুধু তাই নয়, ভারত প্রধানমন্ত্রী মোদির জর্ডান, ওমান আর আবুধাবি সফর করেন। এদিকে ইরানের সাথে ভারতের আশকানা চুক্তিকে ভাল চোখে দেখছেনা ইসরায়েল। তারপরও গত আর এই বছরে মোদি সাহেব এক ঢিলে ডজন পাখি মারলেন নাকি ইটের বদলে পাটকেলটি মারলেন, কয়টি মারলেন, মারলে সেটি কাকে মারলেন, পাকিস্তান না চীনকে, সেটা সামনের সময়ে দেখার অপেক্ষায় রইলুম!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩৯