ভারতের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটাই আমাদের মতই। উদারতাবাদ, নন অ্যালায়েন্স গ্রুপে থাকা।। বিশ্ব জুড়ে চলমান বর্নবাদ, সম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে কাজ করা। এছাড়া ১৯৫৪ সালের ২০ জুন স্বাক্ষরিত ভারত চীন পঞ্চশিলা নীতির উদ্দেশ্য ছিল চীন ও ভারতের মধ্যে শান্তি স্থাপন
১) দুটি দেশ একে অপরের উপর হামলা করবে না
২) পরস্পরের ভূখণ্ডগত অঞ্চলের প্রতি শ্রদ্ধা স্থাপন
৩) এশিয়ায় শান্তি স্থাপন।
৪) একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো
৫। পরস্পর বানিজ্যে লাভদায়ক অবস্থা।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু এবং চৌ এন লাই এর মধ্যে একটি সমঝোতার ফসল ছিল এটি। কিন্তু আজ যদি চীন ভারত সম্পর্কের দিকে তাকাই তবে পঞ্চশিলার নীতিকে বিবর্ণ মনে হয়। চীনের দশটি পারমানবিক বোমা বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র ডংফেং ২ তৈরি জবাবে ভারতের অগ্নি ৫ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এই অঞ্চলের শান্তির জন্যে অশনিসংকেত।ভারতের এফ ১৬ তৈরীর উদ্দোগের বিপরীতে চীনের সুপার বোম্বার এস-২০ বা ইউ-২ তৈরী, এ এক ত্রাহিত্রাহি অবস্থা। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পুরোটা জুড়ে এখন চীন জুজু। পাকিস্তান নেই। ওদিকে চীনেরও একই দশা, প্রতিরক্ষার টেবিল জুড়ে শুধুই ভারত। জাপান জুজু নেই। মূলত স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ও মুক্তবানিজ্যের প্রসারের ফলেই ফুলেফেপে ওঠা এই দুই শক্তির লড়াই। আন্তর্জাতিক রাজনীতিও এই জন্যেই মনে হয় আজ এত দুর্বোধ্য।
এদিকে ডমিনো তত্ত্বে এশিয়ায় ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার ব্যর্থতায় আজ নয়া সাফল্যের চাবিকাঠি বলা যায় ভারতকে। কেননা আঞ্চলিক পরাশক্তি হতে ভারতের চাই আমেরিকার পারমানবিক কৌশল ও ইসরায়েলের অস্ত্র। ভারত না চাইলেও এসব পেয়ে যাবে। কারণ এই অঞ্চলে ভারত ছাড়া যুক্তরাষ্টের সত্যিকার শক্তিশালী বন্ধু নেই বললেই চলে। জাপানের হয়ত অর্থ ও প্রযুক্তি রয়েছে, কিন্তু শক্তি ও আকারের বিশালত্ব ভারতকেই এগিয়ে রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মত বিস্তৃত ভূখণ্ড খুঁজবে চীনকে কাবু করার জন্যে। ভারতও তাই চাইবে। দিনশেষে ব্যবসায় আর আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে স্বার্থই ষোলআনা। এটা আবেগের জায়গা নয়।
চীনের থেকে ভারতের অর্থনীতি পাঁচগুণ হালকা একই সাথে সেনাবাহিনীও। অপর দিকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের পাশে আমেরিকার উপস্থিতিতে চীন হয়ত অসহায় হতেও পারে। তবে ট্রাম্পের আশীর্বাদে এই খেলার গেম চেঞ্জার হবে পাকিস্তান! তবে যাই হোক যে কোন পররাষ্ট্রনীতি যদি শান্তির বদলে অশান্তি ডেকে আনে তবে বিশ্বের জন্যে হবে হতাশার। ভারত কিংবা চীন যেই হোক না কেন ৭৬ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যের হিসেব ও বিশাল বাজারের কথা মাথায় রেখে উচিত নিজেদের বিষয়গুলো নিজেদের সামলানো। নাহলে ডোকালাম, অরুণাচল, সিয়াচেন, আকসাই চীন নিয়ে অন্যের সাহায্য নেওয়া আর খাল কেটে কুমির আনা একই হবে। আর তা এনেই ফেললে কারো জন্যেই ভাল হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৪৩