somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি চাদর, আমি ও জীবন।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি চাদর ঢেকে দিচ্ছে আমাকে। আমি ও মুক্ত থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি অবিরত। কখনো প্রাণপণে কখনোবা ঢিলেঢালা ভাবে। যখন চাদরের একটি কোনা সরিয়ে দেই তো অন্য কোনা গুলো আমাকে ঢেকে দেয়। তখন আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য প্রান্ত সমূহ সরিয়ে দেবার জন্য। যখন অন্য কোনা তুলে ধরি তখন পুরো চাদরখানাই আমাকে চেপে ধরে। যেন আমাকে অন্ধকারে রাখার জন্য কেউ প্রাণপণ বাজি ধরেছে। আমাকে এই পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে, পার্থিবতা থেকে বিচ্যুত করার তীব্র প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আমিও নাছোড়বান্দা। নিজেকে কোন ভাবেই ঢাকতে দিচ্ছিনা। চাদর সরাতে সরাতে আমার শরীর অবসন্ন হয়ে যায়। আমার হাত পা ঢিলে হয়ে আসে, ক্লান্তিতে চোখ বুঝে আসে, ধৈর্যর বাধ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়, ভাবি এই বুঝি শেষ, আর পারা গেলনা, চিরদিনের মতো ঢেকে যাচ্ছি, এই পৃথিবীর, এই জগত সংসার হতে চিরবিদায়। কিন্তু না, মুহূর্তের সচেতনতা এসে আমাকে জাগিয়ে তোলে। আমি সংবিৎ ফিরে পাই। আমার পেশি সমূহ দৃঢ় হয়। সচেতনতায় সতর্ক হই। ঝাঁপিয়ে পড়ি যুদ্ধে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চাদরটিকে সরিয়ে দেই। মুক্ত বাতাসে ভেসে যাই, প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস লই। আহ কি শান্তি। নাহ! বেশীক্ষণ শান্তি স্থায়ী হয়না। চাদরওয়ালারা আরও তৎপর হয়। পূর্বকার চেয়ে ত্বরিত গতিতে, ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে আমাকে ঢেকে দিতে শুরু করে। আর আমিও প্রাণপণে চাদরটিকে সরিয়ে দিতে থকি। এ যেন একটি খেলা। এখেলা চলতেই থাকে। মৃত্যু পর্যন্ত।
অথবা, আমি যেন একটি মাটির বাঁধ মেরামত করছি, বাঁধের অপর পার্শ্বে পানির ধাক্কা ক্রমশ: বাড়ছেই, বাঁধের জায়গায় জায়গায় ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে তলার মাটি। আমি বাঁধ মেরামত করেই যাচ্ছি, ছুটো ছুটি করছি। একদিকের ছিদ্র মেরামত করেই দৌড় দিচ্ছি ওদিককার তলার মাটি শক্ত করার জন্য। সাথে সাথে বাঁধের এপাশে চুইয়ে চুইয়ে আসা জল নিষ্কাশন করে যাচ্ছি, এক মুহূর্তের জন্য আমার কোন ক্লান্তি নাই, আমার কোন বিরাম নাই, কোন অলসতা নাই। আমি সর্বদা সতর্ক। আমার পেশী টানটান, তীক্ষ্ণ চাহনি, ক্ষিপ্রগতি, অফুরন্ত প্রাণচাঞ্চল্য আমার। আমি বাঁধ মেরামত করেই যাচ্ছি। এদিকে বাঁধের অপর পার্শ্বে পানির তোড় বাড়ছেই। চোরা ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকছে অবিরত। বাঁধের এধারে বাড়ছে পানি। অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমার কর্মতৎপরতা। আমার বিশ্রাম নাই। আমার ঘুম নাই। আমাকে বাঁধটিকে অক্ষত রাখতে হবে অথবা পানিতে ডুবে মরতে হবে। আমি বাঁচতে চাই। তাই পানি ঠেকাতে হবে। আমার যেকোনো মুহূর্তের অসতর্কতায় বাঁধটি ভেঙ্গে যাবে। তাসের ঘরের মতো বাঁধটি উড়ে যাবে। ডুবে যাবে আমার জীবন সূর্য। কিন্তু আমি পরাস্ত হতে চাইনা। এত সহজে মরতে চাইনা। আমি বাঁচতে চাই। তাই আমাকে বাঁধিটিকে অক্ষত রাখতেই হবে।

অথবা আমি যেন এক পাহাড়ি দুর্গম পথে গাড়ির চালক। অনাদি কাল থেকে হাল ধরে আছি। রাস্তার প্রতিটা বাঁক সযত্নে পার হচ্ছি। আমি ক্লান্ত, আমি ঘুমে অবসন্ন। আমার মাথা নত হয়ে আসছে, চোখের পাতা বুঝে আসছে। আমার শক্তি রহিত হয়ে আসছে। হাতের পেশী ঢিলে হয়ে যাচ্ছে। আমি আর পারিনা। এই বুঝি আমার হাত হতে স্টিয়ারিং সরে গেল। আমি গাড়ি সমেত পাহাড়ি খাদে পরে যাব। এই বুঝি নিশ্চিত মৃত্যু আলিঙ্গন করতে যাচ্ছি। এই পৃথিবীকে বিদায়। পৃথিবীর মানুষেরা আমাকে ক্ষমা কর। আমার প্রিয়জনেরা আমাকে ভুলে যেওনা। আমার অবর্তমানে আমাকে ভুল বুঝ না। বিদায়। বিদায় ............।
কিন্তু মুহূর্তের কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দেয়। আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি আবার শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরি। আমার দৃষ্টি আগের চেয়ে বেশী শানিত। আমি আরও বেশি সতর্ক। আমার সামনে দুটি পথ। হয় আমাকে চিরতরে ঘুমাতে হবে অথবা লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমি লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই।

এ যেন এক খেলা। আমি বলি মরণ খেলা। এ খেলায় আমার পরাজয় নিশ্চিত। তবুও আমি খেলে যাচ্ছি। যতদিন পারা যায়, যতক্ষণ পারা যায়, আমাকে খেলে যেতেই হবে। আমার উদ্দেশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করা নয়। প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করার কোন ইচ্ছাই আমার নাই।
তবে কেন আমি খেলছি? কারণ আমি খেলতে বাধ্য। আমাকে দিয়ে খেলানো হচ্ছে। আমাকে খেলতেই হবে। খেলার আড়ালেই আমার যাত্রা শেষ করতে হবে। আমিতো পরাজিত হবই। এতো নির্ধারিত, এতো অবধারিত। তবে এর আগে আমাকে কর্তব্য শেষ করতে হবে। করতেই হবে। কারণ আমি মানুষ। আমার সম্ভাবনা অসীম।
যেদিন আমি পরাজিত হব। সেদিন আমার মধ্যে যেন কোন গ্লানি না থাকে। আমি যেন হাসতে হাসতে আমার মহৎ প্রতিদ্বন্দ্বীকে বরণ করতে পারি। বিদায় নিতে পারি এ খেলা থেকে। এ জগত থেকে।
জীবন সফল হউক।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×