somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারেক, মিল্কি, কিলার চঞ্চল ও একদল দলকানা জলদাস...

০২ রা আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাহিদ সিদ্দিক তারেক কি জানতো বন্ধু রিয়াজুল হক মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘন্টার ভেতর তাকেও হত্যা করা হবে? বোধ হয় না। জানলে নিশ্চয় ঘটা করে হাসপাতালে ভর্তি হত না। হত্যা পালটা হত্যার এ লোমহর্ষক কাহিনী হলিউডের রাম্বো জাতীয় মুভির কথা মনে করিয়ে দেয়। গায়ের প্রতিটা লোম শিউরে উঠে। চোখ বন্ধ করলে মন হয় আমেরিকান বন্য পশ্চিমের কাউবয়দের নিয়ে নির্মিত কোন একশন ছবির দৃশ্যপট কল্পনা করছি। কেবল পোশাকেই যা পার্থক্য। গায়ে সফেদ পাঞ্জাবি এবং মাথায় টুপি। এক হাতে মুঠো ফোন, কথা বলছে কারও সাথে এবং অন্য হাত পকেট হতে বের করে আনছে চকচকে মারণাস্ত্র। নির্বিকার ভাবে হত্যা করছে ছোটকালের বন্ধুকে। পাঠক, আপনাদের কি মনে পরে ডার্টি হ্যারির ভূমিকায় ক্লিন্ট ইস্টউডের কথা? মূল পার্থক্যটা বোধহয় কেবল নিরস্ত্র প্রতিপক্ষে। সিসি টিভির ফুটেজ না থাকলে হয়ত অন্য বারের মত এবারও পার পেয়ে যেত সে। বলা হয় ৬০টির বেশি হত্যাকাণ্ডে হাত আছে তারেকের। আইন তার ধারে কাছেও আসতে পারেনি রাজনৈতিক পরিচয় ও গডফাদারদের আশীর্বাদের কারণে। দেশীয় সন্ত্রাসের বড়পীর জনাব কালা জাহাঙ্গীরের সতীর্থ এই তারেক। সিরিয়াল কিলার হিসাবেই পরিচিত আন্ডার ওয়ার্লডে। দীর্ঘদিন প্রবাসে লুকিয়ে থাকার পর কেবল গত বছর দেশে ফিরে আসেন। ফিরেই জেল হতে বের করে আনেন মিরপুরের শাহাদত, ডাকাত শহীদ ও শ্যামপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী সানাউল্লার কিছু সহযোগীকে। গড়ে তুলেন ভয়ংকর এক কিলার গ্রুপ। শত শত মানুষের সামনে হাসতে হাসতে খুন করে আনন্দ পেতেন এবং যারা সময় মত চাঁদা পরিশোধে টালবাহানা করতেন তাদের হৎপিণ্ডে পৌছে দিতেন বুলেটের পদধ্বনি। এভাবেই দুধে ভাতে বেড়ে উঠছিলেন অন্যায়, অবিচার ও অনাচারের লীলাভূমি বাংলাদেশে। পুরানো ঢাকার শাহাদাত কমিশনার, আইনজীবি হাবিব, মতিঝিলে দর্পন, পলাশ, শাজাহানপুরের রাজীব, ধানমন্ডির লিয়াকত, আগারগাঁওয়ের পুলিশ এসআই হুমায়ুন কবীর, ছাত্রলীগ নেতা তপন, আখিঁ এবং মগবাজারের ওয়ার্ড কমিশনার খালিদ ইমাম সহ বহু খুনের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পুলিশের হাতে আছে। খবরে প্রকাশ প্রকাশ্য দিবা লোকে, র‌্যাব, পুলিশের সামনে একজনকে খুন করে মটর সাইকেলের পেছনে লাশ বসিয়ে শহর ঘুরে বেড়ানোর মত পৈশাচিকতাও আছে তার তালিকায়। অনেকটা স্যান্ডউইচ কায়দায় মোটরবাইকের সামনের সিটে নিজে, পেছনে একজন দোসর এবং মাঝখানে লাশ বসিয়ে নিহতের বাড়ির চারদিকে চক্কর দিয়ে ঘোষনা দিয়েছিল নিজ শৌর্য, বীর্য ও বীরত্বের। মতিঝিল বাণিজ্য পাড়ায় এমন কেউ নেই যে তারেকের নামে অতিরিক্ত কয়েকবার শৌচাগারে যায়নি। দশ, পঞ্চাশ ও একশ লাখের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতো চাঁদার অংক। রমজানের শেষ এবং ঈদের সময়টা ছিল বাণিজ্যের ভরা মৌসুম।

কে এই তারকে? রিয়াজুল মিল্কিরই বা কি পরিচয়? ওরা আসলে এক বৃন্তে ফোটানো দুটি ফুল। আমাদের স্থানীয় ভাষায় এক মার পেটের খালাতো ভাই। দুজনেই চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, খুনি, ধর্ষক এবং দুজনেই ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের নেতা। মহানগর যুবলীগের (দক্ষিনের) দুই মহারথি এই দুই বন্ধু। বলা হয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের কাউকে নগদ দুই কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ক্রয় করেছিল তারেক। মিল্কি এবং তারেক দুজনেই সামনের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ইতিমধ্যে কিলার চঞ্চল নামের প্রাক্তন এক টেম্পো চালক এবং আধুনা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম বেরিয়ে আসছে মিল্কি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে। বলা হয় কিলার চঞ্চলেরও গডফাদার আছে, যার হাত-পা গণভবন, বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রসারিত। কোট কোটি টাকার টেন্ডার ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন যা একে অপরের পরিপূরক, তা নিয়েই বিবাদ বন্ধুর সাথে বন্ধুর, ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের, বাবার সাথে সন্তানের, নেতার সাথে নেতার, নেতার সাথে কর্মীর, কর্মীর সাথে পাতি নেতার, পাতি নেতার সাথে ছটাক নেতার। এবং এরা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ওলামা লীগ, হাইকোর্ট লীগ, সুপ্রীমকোর্ট লীগের নেতা ও কর্মী। তারেক ৬০ খুনের আসামী তা কারও কাছে গোপন ছিলনা। অথচ দেশে আইন আছে, আদালত আছে, আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশাল বিশাল খাল, বিল, নদী-নালা, সাগর মহাসাগর। জাতি হিসাবে আমরা এসব জলাশয়ে অনবরত সাতার কাটছি এবং চেতনার প্রসব বেদনায় জন্ম দিচ্ছি তারেক, মিল্কি ও চঞ্চল নামের সৈনিকদের। রাজনীতি নামের যুদ্ধের ময়দানে এরাই আসল সৈনিক। এরা টেন্ডারবাজী করে বলেই নেতা-নেত্রীদের রাজনীতি এত মধুর।

পাঠক, তারেক, মিল্কি অথবা কিলার চঞ্চল কি কেবলই বিচ্ছিন্ন কতগুলো নাম, বখে যাওয়া কিছু চরিত্র? খুঁজলে আপনার শহরে কি পাওয়া যাবেনা এসব সিরিয়াল কিলারদের বৈমাত্রেয় ভ্রাতাদের? বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এদের অবাধ বিচরন। রাজনীতির ছত্রছায়ায় বিষাক্ত জীবাণুর মত মিশে আছে আমাদের রক্তে। জাতির মগজে জামাতি হিজাব আর হাতে হেফাজতি তসবি ধরিয়ে নেতা নেত্রীরা লুটে নিচ্ছেন গোটা দেশ। তারেক, মিল্কি, চঞ্চলের কাফেলা এ সংস্কৃতিরই ধারক, বাহক ও রক্ষক। এরা আছে বলেই ক্ষমতার মসনদ জ্বল জ্বল করে, আলো ছড়ায় এবং সে আলোতে ঝাঁপ দেয় গোটা জাতি। এখানে কে আসল অপরাধী, খুচরা সৈনিকদের দল না আড়ালে থাকা ক্ষমতার গডমাদার গডফাদারের সিন্ডিকেট ? কান ধরে টানলে মাথা চলে আসবে বলেই কি ক্ষমতা ছাড়তে এত ভয়? দলকানা জলদাস আর হামিদ চাচার বৌমাদের মত কৃতদাসরাই গোটা বাংলাদেশ নয়। এর বাইরেও কিছু মানুষ আছে যারা সহ্য ও ধৈর্য্যের বাধে ইট সিমেন্ট গাঁথতে বাধ্য হচ্ছে। ৪২ বছর ধরে এর দেখছে, দেখছে আর জ্বলছে। অন্যায়, অবিচার, অনাচার আর মিথ্যাচারের ফাঁদে আটকে একটা জাতিকে আজীবন দাসত্বের শৃংখলে আটকে রাখার যারা স্বপ্ন দেখছেন তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হতে পারে যেদিন এরা ঘুম হতে জেগে উঠবে। সেদিন আর ক্রসফায়ার নামক জালিয়াতি, ধোকাঁবাজি, বেশ্যাবৃত্তির প্রয়োজন হবেনা, খোলা ময়দানে ঘোষনা দিয়েই প্রতিশোধ নেবে।
http://www.amibangladeshi.org/blog/08-02-2013/1391.html
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×