somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরব ডায়েরি – ২৮ (তায়েফ শহরে কয়েকদিন-৩...)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তায়েফ শহরে কয়েকদিন-১
তায়েফ শহরে কয়েকদিন-২

পরের দিন সকাল বেলা সুবরা প্যালেস দেখতে গেলাম। শহরের মাঝখানেই। এটাকে এখন জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। শতবর্ষী প্রাচীন এই প্রাসাদটিতে অনেক সৌদি রাজাই বসবাস করেছেন। মূলত বাদশাহ আব্দুল আজিজ এটাকে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করতেন। তায়েফের সৌন্দর্য আর আবহাওয়ার কারনে উনি প্রায়ই পরিবারসহ এখানে চলে আসতেন, মালভূমিতে হরিন ও অন্যান্য প্রানী শিকার করতেন।

সুবরা প্যালেস

আমরা গিয়ে জাদুঘরে কাউকে পেলাম না। তাই ভেতরে ঢুকতে পারিনি।
এরপর চললাম সুক (মার্কেট) ওকাজের দিকে। অতীতে এখানে বিশাল বাজার বসত। বেদুঈনরা দূর দূরান্ত হতে এসে তাদের জিনিষপত্র বিক্রী করতো। এখানে একসময় কবি লড়াই হতো। কবিরা কবিতা দিয়ে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতো। সুক ওকাজে গিয়েও হতাশ হতে হলো। ১ জন গার্ড ছাড়া কোথাও কেউ নেই। এলাকাটা কাটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সাফিয়া’র সময় এখানে বিশাল মেলা হয়। বাকী সময়গুলোতে এখানে কেউ আসেনা। আমরা ভেতরে ঢুকলাম- দেখার তেমন কিছুই ছিল না। ... ফিরে আসার পথে বেশ কিছু উটের দেখা মিলল।

সুক ওকাজের প্রবেশদ্বার

দে দৌড়

আমাদের ড্রাইভার সাহেব বুঝতে পারছিল না- তায়েফে ঘুরার কি আছে। আমরা জানতাম সুক ওকাজের আশে পাশেই কোথাও একটা তুর্কি দূর্গ আছে, যেখানে “লরেন্স অব এ্যারাবিয়া’র” যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু মাহমুদ ভাই তার কোন হদিস দিতে পারলেন না। দুঃখ মনোরথে ফেরার পথ ধরলাম। আসার পথে তায়েফ ইউনিভার্সিটি দেখলাম। আমাদের ইউনির মতো শহর থেকে দূরে নয়। তায়েফে ভার্সিটিকে কেন্দ্র করে একটা শহর গড়ে উঠেছে। অনেক সুযোগ সুবিধা আশে পাশে।

তায়েফ ইউনিভার্সিটি গেট

ফেরার পথে অনেক গার্ডেন চোখে পড়লো- বিশেষ করে কিং ফাহাদ গার্ডেন দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সব বন্ধ, সামার সিজন ছাড়া এগুলো খোলা হয় না। মেজাজ অনেক গরম হল, সকাল থেকে শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমাদের দুঃখ দেখে মাহমুদ ভাই হোটেল রামাদা’র দিকে চললেন।

হোটেল রামাদা

হোটেল রামাদায় হানিমুন ... আর্টিস্টিক সাজে বিয়ের গাড়ী

সেখানে সৌদি আরবের সবচেয়ে দীর্ঘ কেবল কার আছে। যেতে আসতে প্রায় ১ ঘন্টা লাগে। আমরা ওখানে গিয়ে পৌছলাম ১১.৩০ এ। কেবল কার ১ টার আগে চালু হবে না। কি আর করা! হোটেলের আশে পাশে ঘুরে দেখতে লাগলাম। অনেক হাজীকে দেখলাম পাহাড় ডিঙ্গিয়ে পুলিশকে ফাঁকি দিচ্ছে। তারা অবৈধভাবে হজ্জ্ব করতে যাচ্ছিল।

নীচের শহর ...

লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। আমি ও মিলন বাহির হতে খাবার আনতে গেলাম। ভেতরে অনেক দাম। গরম পাথরের উপর মুরগী পোড়ানো হচ্ছিল। সবার জন্য রাইস, পোড়ানো মুরগী আর ড্রিংকস নিলাম।


কেবল কারে ৬ জনের জন্য ৫৪০ রিয়ালের টিকেট লাগলো। কেবল কার দিয়ে যখন নীচে নামছিলাম, সে এক অন্যরকম দৃশ্য। কেবল কার লাইনটি কখনো উচু বা কখনো নীচু হয়ে পাহাড় সারির মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিল। নীচে দেখতে পেলাম তায়েফের সেই বিখ্যাত রোড (বাংলাভিশনে এই রোডটি দেখানো হয়)। ঠিক যেন NFS games এর একটি রোড। একটি বিশাল বাঁধ ও দেখতে পেলাম, কিন্তু এখানে এটা কি আজে আসে তা বুঝতে পারলাম না।

কেবল কার, নীচে বিশাল বাঁধ





তায়েফের সেই বিখ্যাত রোড ...

বাঁধটি

নীচে একটি থিম পার্ক করা হয়েছে, বিভিন্ন রাইড আছে, ওয়াটার পার্কও আছে। ২৫ মিনিটের ভ্রমণ শেষে যখন নীচে নামলাম, তখন ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। দারূণভাবে সব সাজানো। একটি ছাউনির নীচে লাঞ্চ করে নিলাম।





পাহাড়ের পাদদেশে দারূণভাবে সাজানো...

জিভে জল আনা লাঞ্চ

ট্রেনে চড়ে বেড়ালাম।

এক জায়গায় দেখলাম ভূতের ঘর- এখানে মানুষ টিকেট কেটে ভয় পেতে যায়। আমরাও গেলাম। টিকেট বিক্রেতা বললো কি ধরনের “ভয়” চাও? Easy/Medium/Hard? প্রথমে ভাবলাম সহজটাই নেই, পরে কি মনে করে সবচেয়ে কঠিনটা নিলাম, টাকা খরচ করে কম নেব কেন? জনপ্রতি ১৫ রিয়াল করে টিকেট।

ভূত ঘর

-আমাদেরকে একটি অন্ধকার পথে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। আমি বুদ্ধি করে সবার পেছনে রইলাম, আদিল ভাই সবার আগে। হঠাৎ করে প্রচন্ড চিৎকার, হায়েনার হাসি, আলো আধারির খেলা। সামনে একটি কফিন, কেউ শুয়ে আছে, হয়ত এখুনি উঠে বসবে। ঠিক সেই মূহুর্তে আমি অনুভব করলাম আমার সামনে কেউ নেই... আমি একা। সবাই কিভাবে যেন আমার পেছনে চলে গেছে। আদিল ভাই চালাকি করেছে, আমার দেখানো পথ ধরে এগুতে চায়। আমরা গুটি গুটি পায়ে সামনে যাচ্ছি। মিলন বুদ্ধি করে সবার পেছনে রয়েছে। এক সময় তার মনে হতে থাকলো কেউ তার পায়ে টোকা দিচ্ছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে এক কংকাল তাকে লাঠি নিয়ে তাড়া করছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা একটি যায়গায় সবাই গোল হয়ে গেলাম। ... তারপর সবার মনেই বোধদয় হলো আসলে এ খেলায় আমদের ভয়ের কিছু নেই, কোন ক্ষতি হবে না। আর এটাই আমাদের মজা পাওয়াটাকে কিছুটা হলেও কমিয়ে দিল। আমরা ভয় না পেয়ে হাসতে হাসতে বাকী পথটুকু শেষ করলাম। যে আদিল ভাই ভয় পেয়ে আমাকে সামনে ঠেলে দিয়েছিল, তিনি হাসতে হাসতে বললেন –কোন ভয়ই পেলাম না।

অনেকগুলো ওয়াটার রাইড ছিল। সৌদিরা দেখলাম ভালোই মজা করছে। আমাদের সাথে অতিরিক্ত জামা ছিল না, তাই নামলাম না। আসলে আমরা জানতামনা যে এখানে ওয়াটার রাইডগুলো আছে। পাশেই মেয়েদের জন্য দেয়ালঘেরা ওয়াটার রাইড। আমাদের সাথের মেয়েরা ওখানে দেখতে গেল। সৌদি নারীরা নাকি ওখানে ভালোই মজা করছিল। ...

আমার খুব ইচ্ছে করছিল “টোবগান” নামক একটা রাইডে চড়তে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে দ্রুতগামী একটা গাড়িতে করে ছুটে চলা। আমি একা যেতে চাচ্ছিলাম না। অন্য কেউ সাহস করলো না। আক্ষেপ রয়েই গেল।

টোবগান

ভাবী চাচ্ছিলেন সূর্যাস্তের আগে আগেই কেবল কারে উঠতে। তাহলে নাকি কেবল কারে বসে দারূন একটা সূর্যাস্ত দেখা যাবে। আমরা তা মিস করে ফেললাম।

উপরে উঠতেই প্রচন্ড শীত। গরম কাপড় কেউ নিয়ে আসিনি, সবাই কাঁপতে লাগলাম। গাড়ীতে করে যখন ফিরছিলাম শাকিলা বললো সে আল-বাইকের বিখ্যাত ব্রোস্ট খাবে। সবাই দেখলাম সাথে সাথেই রাজী, সবাই টেস্ট করতে চায়। মার্কেটের সামনে থামলাম। আল-বাইকের সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। বিশাল মার্কেট। সাইনবোর্ডের কাছে গিয়ে দেখা গেল সেখানে আল-বাইক নাই, অন্য কোথাও। হাটছি তো হাটছি ... দোকানতো খুঁজে পাই না। এতলা সেতলা করে দোতলার শেষ মাথায় আল-বাইক পাওয়া গেল। কিন্তু ব্রোস্ট নাই। মেজাজটাই গরম হয়ে গেল, এতো কষ্ট করে আসলাম। ম্যকডোনল্ডসে গেলাম, অনেক ভীড়- বার্গার খেতে গেলে সময় লাগবে। আদিল ভাই ও মিলন অন্য একটা দোকান হতে খাবার নিয়ে নিল।

আমি আমাদের হোটেলের পাশেই এক তুর্কি রেস্টুরেন্ট হতে ২টি স্যান্ডুইচ নিয়ে নিলাম। আহ! সেকি স্বাদ। পরেরদিন সেখানে স্যান্ডুইচ কিনতে আবার গিয়েছিলাম- শুক্রবার ছিল, রেস্টুরেন্ট খোলা পাইনি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৩৮
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×