somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বজ্র ড্রাগনের দেশ ভূটান-৪

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব

(মাঝে মাঝে এমন হয়- অনেক লেখা পড়ে আছে, কিন্তু লিখতে ইচ্ছা করে না। আলস্য ভর করে। আমার হয়েছে এমনটা!)

২৩ আগস্ট, ২০১৬ (মঙ্গলবার)-

রাতে ঘুমোতে যাবার আগে পাশের রুমে খাট টানাটানির শব্দ পাওয়া গেছে। এ আর নতুন কি! গল্পটা সময় মতো বলা যাবে।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই মেঘেদের লুকোচুরি। চারপাশে সবুজ পাহাড়। মেয়েরা হাতে বই, ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। আমি ও শাকিলা ঝটপট তৈরি হয়ে হোটেলের বাহিরে বের হলাম। শান্ত, মোহনীয় সকাল। হাটতে হাটতে সামনে এগুতেই এক ঝোপ সূর্যমূখী’র দেখা পাই- কত সতেজ। বেশ কিছু ছবি তুলে সামনে এগোই। সন্ধ্যায় হোটেলে আসার পথে ক্লক টাওয়ারটা দেখেছিলাম। বেশী দূরে হবার কথা নয়।







থিম্পুর মেইন রোড আমাদের হোটেলের পেছনে। হাটাপথে উঠতেই রাস্তা লাগোয়া সুইডেন এ্যাম্বাসি’র ভবন চোখে পড়ল। কোন নিরাপত্তা নেই, চাকচিক্য নেই। আশেপাশে অনেক বার ও রেস্তোরা। সকাল বলে চারিদিকে একটা নীরবতা ছিল। দুই লেনের প্রধান রাস্তাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি। কিছুদূর যেতে একটা মন্দির পেলাম। দুই একজন প্রেয়ার হুইলগুলো ঘুরাচ্ছিল। সেখান হতে ক্লক টাওয়ারটি দেখা যাচ্ছে। ৪টি ঘড়ি সম্বলিত দন্ডটিতে ভূটানিদের নিজস্ব রীতি’র ড্রাগন ও অন্যান্য কারুকাজ দেখতে পেলাম। এটা থিম্পুর একটি ল্যান্ডমার্ক। একে ঘিরেই হোটেল, বাজার, রেস্তোরাগুলোর অবস্থান। চত্বরটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, আর রাস্তার পাশের সিড়িতে বসে ভূটানিরা তা উপভোগ করে। সকাল বলে অনেকগুলো কুকুর সেখানে ঘুমাচ্ছিল, আমরা তাদের ঘুম ভাঙ্গালাম না।









নীরবতা আর নির্মলাতার পরশটুকো নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। মিলন, লিজাও আশেপাশে হেটে ফিরেছে। কর্মা লোটে ৯ টায় আমাদের নিয়ে থিম্পু অভিজানে বের হবে। এখন নাস্তা খাবার সময়। নানাকে নিতে তার রুমে ঢুকলাম। নানা খাটের উপর একদৃষ্টি নিক্ষেপে করে বসে আছেন। আমাকে দেখে স্বস্তি পেলেন। জানালেন, সেই ফজর থেকে বসে আছেন। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে গেছেন। আরো জানালেন, উনি রাতে খাটে ঘুমাননি। কেন? উনি ঘুমাতে গিয়েছিলেন- কিন্তু নরম বিছানায় ওনার শরীর ব্যথা শুরু করে, তাই ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে ঘুমিয়েছেন।



আমি অবশ্য তেমন অবাক হলাম না। দেশেও উনি খাটে তোষক ব্যবহার করেন না, কাথা বিছিয়ে থাকেন। যত গরমই হোক ওনাকে ঘরের ফ্যানটি চালাতে দেখিনি। ওনার কথা হচ্ছে প্রাকৃতিক বাতাসই ওনার জন্য যথেষ্ট। রাতে খাবার শেষ করে ডাক্তারের পরামর্শ মত ২ ঘন্টা বসে থাকেন। এজন্য এখন মাগরিবের নামাজ শেষেই উনি রাতের খাবার খেয়ে ফেলেন।

আমরা হোটেলের রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে বসলাম। নানা মহাআনন্দে মিলন/লিজাকে রাতের ফ্লোরে থাকার কাহিনী শোনাচ্ছেন। কিন্তু নাস্তা দিতে এত দেরী করতে থাকল যে আমরা সবাই ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, নানা কিছু করতে না পেরে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। আধাঘন্টা অপেক্ষার পর গরম গরম নাস্তা আসে-লুচি, আলু পরোটা, আলুর দম ও চাটনি।

আমার ও শাকিলা’র আলু পরোটা অনেক প্রিয়। সৌদি আরবে শুধুমাত্র রোজার সময় এক পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে আলু পরোটা বানাত। আদিল ভাই সেই খোঁজ দেন। সেই আলু পরোটা মজা করে খেতাম। আদিল ভাই যখনই সুযোগ পেতেন তা কিনে খেতেন। ভূটানের আলু পরোটা’র খেয়ে আদিল ভাইয়ের জন্য আফসোস হল-এই স্বাদ উনি নিতে পারছেন না। এই আলু পরোটার কাছে পাকিস্তানিটা অতি সাধারণ মনে হল।

কর্মা লোটে ঠিক ৯টায় উপস্থিত। আমরা মাইক্রোতে উঠে বসলাম। কর্মা প্রথমেই আমাদের ক্লক টাওয়ার হতে ২/৩ মিনিটের দূরত্বে ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চরতেন নিয়ে গেল। এটাকে কিং’স মেমোরিয়াল চরতেনও বলে। চরতেন মানে- বিশ্বাসের স্থান। চরতেন বা স্তুপা বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র স্থান, একধরণের সাদা কাঠামো যার চূড়ায় পেচানো সোনালী রংয়ের গোলক থাকে। স্তুপার ভেতরে সাধারণত ভিক্ষুদের দেহবশেষ রাখা হয়। ভূটানের বিভিন্ন স্থানে আমরা ছোট বড় এধরণের স্তুপা দেখেছি।



১৯৭৪ সালে রাজমাতা পুন্টশো চোদেন ওয়াংচুক তার প্রয়াত পূত্র ভুটানের ৩য় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক (১৯২৮-১৯৭২) এর সন্মানে ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চরতেন তৈরি করেন। অন্যান্য স্তুপার মত এখানে কোন দেহবশেষ রাখা হয়নি, শুধুমাত্র রাজার একটি ছবি টানিয়ে রাখা আছে।







ভূটানিদের দেখলাম স্তুপাকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে। অনেকটা মুসলমানদের কাবার মতো। তবে একটা পার্থক্য আছে-কাবার চারপাশে ডানদিকে প্রদক্ষিণ করা হয়, এখানে ওরা বামদিকে প্রদক্ষিণ করছিল। কর্মাকে পরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে জানাল- ৩/৫/৭ বা তারো বেশীবার তারা এটা পূণ্যের আশায় প্রদক্ষিণ করে থাকে।



চরতেনের পাশেই বিশাল বিশাল প্রেয়ার হুইল। সবাই গিয়ে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কর্মার কাছে জানলাম হুইলগুলোর ভেতরে অনেক মন্ত্র লেখা কাগজ আছে, হয়তো লক্ষ লক্ষ মন্ত্র সেখানে লেখা আছে। কেউ যদি একবার প্রেয়ার হুইল ঘুরিয়ে দেয় তাহলে তার জন্য লক্ষ মন্ত্র একবার পড়া হয়ে গেল। আমাদের জাতীয় সংসদে এমন একটা ব্যাপার ঘটে - প্রশ্নের উত্তর অনেক লম্বা হলে সেটা অল্প কিছু পড়ার পর উত্তরটি সবার সম্মতিতে পঠিত বলে গন্য করা হয়। যেহেতু প্রেয়ার হুইল ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে জড়িত, আমরা কেউ তা ঘুরাতে গেলাম না।



নানাকে নিয়ে একটা ভয় ছিল। উনি এবং আমরা সবাই ইসলাম ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলি। এখন এই মন্দির অথবা বিভিন্ন মূর্তি দেখতে যাওয়া কিভাবে নেবেন তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। উনি সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলেন। উনি বললেন- যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে, ভূটানিদের আকীদা তাদের কাছে। আমরা টুরিস্ট মাত্র, আমরা ঘুরে বেড়াতে এসেছি।

চরতেন হতে বের হয় পাহাড়ী আকাবাকা পথ দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। দূর হতে বুদ্ধের সবচেয়ে বড় মূর্তিটি চোখে পড়ল-উচু পাহাড়ের চূড়া হতে থিম্পু ভ্যালির দিকে তাকিয়ে আছে। কর্মা লোটে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা আর জিজ্ঞাসা করলাম না। অনুমেয়, আমরা যাচ্ছি –বুদ্ধা পয়েন্ট।


(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০৯
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×