somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবদূতের ছোট ছোট ভন্ডামীগুলো - ২

২৫ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে আমার সম্পর্ক বন্ধুর মত। শৈশবে একটা সময় কেটেছে কলোনিতে, প্রতি শুক্রবার বাজারে যেতাম বাবার কাধে চড়ে। বাজারে গিয়েই প্রথমে আমাকে কিনে দিতেন আমের আচারের বয়াম, সারা বাজার বাবার কাধে চড়ে ঐটা শেষ করাই ছিলো আমার একমাত্র কাজ। মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় ইস! যদি আবার সেই দিন ফিরে পেতাম! আমাকে যদি সুযোগ দেওয়া হয় শৈশবের কোন একদিনে ফিরে যেতে আমি নির্দিধ্বায় বলবো, “শুধু একটি ঘন্টার জন্য বাবার কাধে চড়ে বাজারে যেতে দাও”।

বাবার বয়স হয়েছে, আমিও আর সেই ছোটটি নেই তার কাধেও আর চড়তে পারি না। এখন কাধে চড়া বাদ দিয়ে যেটা হয় সেটা হলো আলোচনা, নানান বিষয়ে আলোচনা। দেশ, জাতি, অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম, ব্যাবসা আরো কত বিষয়াদি। তবে সবচেয়ে বেশি হয় রাজনীতি নিয়ে, আর যাই হোক বাঙ্গালির ঐতিহ্য বলে কথা! একসময় সক্রিয় বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন; এখনো এমএম আকাশ, মুতিয়া চৌধুরি, মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম এদের নিয়ে আলোচনা করার সময় চোখেমুখে অন্য রকম এক দ্যুতি ঝলমল করে উঠে। অনেক বছর রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে থাকতে এখন উনি ঘোর আওয়ামীলীগার হয়ে উঠেছেন। অবশ্য এখন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে প্রাক্তন বামদেরই জয় জয়কার।

আমি আবার এই বিষয়ে খুবই লিবারেল। কোনটারই অন্ধভক্ত নই আবার অকারন চুলকানিও নেই। সেই কারনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাবার সাথে এটা সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক লেগেই থাকত। যেমন কিছু দিন আগে উনি বললেন, “শেখ হাসিনা একা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিগুলোকে এক ছাতার নিচে ধরে রেখেছে। হাসিনা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী দলগুলো অবস্থা আরও খারাপ হতো”

মনে মনে ভাবলাম এইবার বাগে পেয়েছি; বললাম, “এটা কেমন কথা? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি এতই ঠুনকো যে একে কোন এক ব্যক্তির পিছনে আশ্রয় নিতে হবে? এটাত বিশাল এক ব্যার্থতা! বরং, এখন শেখ হাসিনার উচিত দলের অন্য কাউকে সামনে নিয়ে আসা আর এটা জয় না হলে সবচেয়ে ভালো হয়।”

দেখি বাবার মুখটা কেমন পানশে হয়ে গেছে।

এইবার সুযোগ বুঝে মোক্ষম আঘাতটা করলাম, “আর, আমার মতে একমাত্র শেখ মুজিবের মেয়ে হওয়া ছাড়া তার প্রাইমিনিষ্টার হওয়ার আর কোন যোগ্যতা নেই। আর মানুষ এখনো আওয়ামীলীগকে ভোট দেয় নিরুপায় হয়ে। আমার কথাই ধর, তোমার কি মনে হয় আমি বর্তমান আওয়ামীলীগ বা হাসিনা কে ভোট দেই? না। আমি ভোট দেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে; শেখ মুজিবকে। এখানে হাসিনার কোন কৃতিত্ব নেই, বরং ওর লাগামহীন কথা আর ফালতু ব্যক্তিত্বের কারনে অনেক ভোট কমে যায় আওয়ামীলীগের”

চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো বাবা, বলার মত কিছু পাচ্ছিলো ও না।

২.
খাবার টেবিলে, টিভি দেখার সময় বা যেকোন আড্ডায় বাবার সাথে প্রায়ই বিতর্ক হচ্ছে ইদানিং, আর আওয়ামীলীগ/যুবলীগ/ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকান্ডের ফলে আমার তোপের সামনে দাড়াতেই পারছে না ইদানিং।

তিন চারদিন আগে টিভি দেখতে দেখতে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বেকায়দা ভাবে। আমি উঠে গিয়ে আলত করে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলাম, “আব্বু? আব্বু?” নিজের অজান্তেই আমি একটু কেঁপে উঠলাম! ইস বাবাকে ছুঁয়ে দেখিনা কত বছর! শুধু দুই ঈদের কুলাকুলি হয়ে, এই পর্যন্তই! আর না ডেকে কিছুক্ষণ বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, কি যে ভালো লাগছিলো! ভাবছিলাম, ছোট বেলায় কতদিন সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছি, আর বাবা আলতো করে আমাকে বিছানায় নিয়ে যেতেন, হয়ত নিজের শ্বাসও বন্ধ করে রাখতেন যাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে না যায়! মায়ের পায়ের আওয়াজ পেলাম, রান্নাঘর থেকে এদিকে আসছে; তাড়াতাড়ি বাবার মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিলাম, মা দেখে ফেললে লজ্বায় পড়তে হবে।

একটু ঝাকি দিয়ে ডাকলাম, “আব্বু? আব্বু? উঠ, বিছানায় যাও”
ধরমর করে উঠে, একটা লাজুক হাসি দিয়ে বললেন, “আরে, ঘুমাই নি ত! জেগেই ছিলাম; যাস্ট চোখটা লেগে এসেছিলো”
বললাম, “বুঝেছি, যাও বিছানায় ঘুমাতে যাও”

-------------

কিছুক্ষণ চুপমেরে বসে ছিলাম, খুব খারাপ লাগছিলো, ইস! কত কষ্টই না বাবাকে দিয়েছি বাবার বিশ্বাসে আঘাত করে! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আর না। আর কোনদিন বাবার কাছে আওয়ামীলীগের বদনাম করবো না, আওয়ামীলীগ নিয়ে বিতর্ক করবো না, হোক এটা আমার আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক; কারও তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না! বাবার জন্য একটু না হয় ভন্ডামিই করলাম।
৫৮টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×