২৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৯
বাটার সিগন্যাল মোড়ে সিটি বাসে অনেকক্ষণ জ্যামে বসে , বাইরে গুঞ্জন শুনলাম বিডিআর আর আর্মির মধ্যে কি নাকি যুদ্ধ শুরু হইসে। তখনকার অথবা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ঘটনাটা খুব অস্বাভাবিক আর গাল-গপ্পো মনে হল। তারপর বাস থেকে নেমে পড়লাম । সায়েন্স ল্যাবের দিকে হাটতে শুরু করলাম। হাটার পথেই বুঝলাম বড় কিছু ঘটেছে।তখন আবার আমার বন্ধু শুভ্রর নাম্বার থেকে একটা এসএমএস আসলো, "ধানমণ্ডিতে ওপেন ফায়ারিং চলতেছে , কেউ ধানমণ্ডিতে আসবেন না।"
তবুও আমার কৌতূহলী মনের তাড়নায় সিটি কলেজের গেট পর্যন্ত পৌঁছে এক র্যাব সদস্যের এর ঝাড়ি খেয়ে পিছু হটলাম।ঠিক তখনি আমার ফোনে আমার শিক্ষক মিথুন স্যার এর নাম্বার থেকে ফোন আসলো। স্যার প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কোথায়? আমি স্যার কে আমার অবস্থান জানানোর পরেই, স্যার আতঙ্কিত হয়ে বললেন, যেখানে আছ সেখান থেকে আর এক পা ও সামনে এগিয়ে এসো না। আর আগাইনি সামনে।
সেদিন মনে হয়েছিল বাংলাদেশের অন্ধকার দিনের শুরু হয়েছে। অনেকগুলো ঘটনা আর দুঃসহ সময়ের শুরু হচ্ছে। পরবর্তী আরও কয়েকদিন এমনটাই মনে হয়েছিল। সবার কত কত কথা, কত টকশো আর মিডিয়া কভারেজ। দুনিয়া জুড়ে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ । আতংক আর উদ্বেগ ।
২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
জিগাতলা বিডিআর গেটএর সামনে বাস থেকে নেমে গেট এর দিকে তাকিয়ে মনে হল, এইটা তো বিজিবি হেডকোয়ার্টার , এদের তো এইদিনের কথা মনে থাকার কথা না... ঘটনা তো বিডিআর এর , এদের তো জানার এ কথা না। এর থেকে বেশি কিছু বলার নেই আমার। কান্না আসার মত আবেগটাও নেই । কারন আমরা সব ভুলে গেছি।
১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের জন্য শহিদ মিনারে ফুল দেয়াটা আমাদের অনেক বড় রীতি অথবা সংস্কৃতির অংশ বলেই হয়ত ভাষা শহিদরা অন্তত "মুক্তিযোদ্ধা(!)" হিসেবেও সম্মান পান। কিন্তু ২৫ ফেব্রুয়ারী আর ২৬ ফেব্রুয়ারী তে শহিদ হওয়া দেশের সূর্যসন্তানরা কি আদৌ শহিদ হিসেবে গণ্য হবে নাকি গল্পের ভিড়ে তারা দেশদ্রোহী হিসেবে গণ্য হবে সেটা নিয়ে ভয় লাগে আমার।
ভয় লাগে না লজ্জা লাগে জানি না।
ভুলে গেছি নাকি কেউ আমাদের ভুলতে বাধ্য করছে এমন প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে... কিন্তু কাকে প্রশ্নটা করব?