
জীব মৃত হওয়ার কথা শুনেছেন কিন্তু ভাষা মৃত হয়ে যাওয়ার কথা শুনেছেন??? ভাষার আবার বাঁচা-মরা কিসের? হ্যাঁ, ভাষার মরা বাঁচা আছে। ভাষা বেঁচে থাকে আমার আপনার মুখে মুখে। দৈনন্দিন আমাদের ভাষা চর্চার মাধ্যমে। কোনো কারণে একটা ভাষা যদি আর কোনো দিনই কেউ না বলে তাহলে সে ভাষাটা মৃত বলা হয়। ভাষাটি বেঁচে থাকলে তার ব্যাকরণে যে পরিবর্তনটুকু হয় তাও বন্ধ হয়ে যায়। তখন তাকে বলা হয় বিলুপ্ত বা মৃত ভাষা।
যদি কোনো ভাষা কোন কারনে দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায় এবং সে ভাষা বিকল্প ভাষা ব্যবহার শুরু হয় তাহলে সে ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এ ধরনের অনেক বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ভাষা আছে। যেমন: সংস্কৃত ভাষা,লাতিন ভাষা, হিব্রু, ওল্ড চার্চ স্যালভোনিক, পুরনো তিব্বতীয়, গিজ, ইত্যাদি। এছাড়াও অন্য অনেক ভাষা আছে যেগুলো ছোট ছোট জনগোষ্ঠী, উপজাতি, আঞ্চলিক ভাষা। সেগুলো চর্চা বা ব্যবহারের অভাবেও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
২০০৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে মোট ৬,৯১২টি জীবন্ত ভাষা আছে। আর এই ভাষায় পৃথিবীর ১৮৯টি স্বাধীন দেশের প্রায় ছয় বিলিয়নের মতো মানুষ কথা বলে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এ ভাষাগুলোই কোনো না কোনো দেশের মানুষ ব্যবহার করে। একটি দেশের অধিকাংশ লোক যে ভাষায় কথা বলে, যে ভাষা রাষ্ট্রীয় সব কাজে ব্যবহৃত হয় সেটিকে বলা হয় রাষ্ট্রভাষা। আমাদের রাষ্ট্রভাষা হলো বাংলা।
আমাদের প্রানের ভাষা বাংলা। কিন্তু আমরা কি বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার করছি? আমাদের বাংলা ভাষার সাথে এখন মিশে গেছে ইংরেজী, হিন্দি, ফারসী, পর্তুগীজ, উর্দূ সহ অনেক ভাষা। এমন এমন বাংলা শব্দ আছে যে গুলো আমরা কোনদিন জানিই না। অন্য ভাষার সাহায্য নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া আমাদের সমাজ বর্তমানে ইংরেজী ভাষাকে প্রাধন্য দিচ্ছে। আবার বাংলা ভাষা যেটুকু ব্যবহার করছি ততটুকু আবার ইংরেজী আদলে ব্যবহার করছি। আঞ্চলিক ভাষাতো এখন মোটামুটি অন্য চোখে দেখি। ভাষার শুধু সুষ্ঠ ব্যবহার না সেটি ব্যবহারে বাধাঁ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কালের বিবর্তনে আমাদের মনের ভাষা, প্রানের ভাষা এক সময় বিলুপ্ত হতে পারে এটা কি মনে হয় না।
আসুন দেখে নিই কিভাবে ভাষা মৃত হওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার কি হতে পারে।
ভাষা মৃত হওয়ার কারণ:
১. ভাষা সঠিকভাবে ব্যবহার না করা।
২. নতুন নতুন ভাষার বা শব্দ হালনাগাদ না করা।
৩. কোন ভাষা বা শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে সেটি শনাক্ত না করা।
৪. নিজেদের ভাষা বা শব্দ ব্যবহারে অন্য ভাষার প্রাধন্য বা বিকল্প ভাষা ব্যবহার করা।
৫. আঞ্চলিক ভাষা অবমূল্যয়ন বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।
৬. নতুন নতুন শব্দ ও হারিয়ে যাওয়া ভাষা প্রচার প্রচারণা না করা।
ভাষা রক্ষায় করণীয়:
১. ভাষা বা শব্দ হালনাগাদ: নতুন নতুন ভাষা বা শব্দ হালনাগাদ করা যেটি আমাদের বাংলা একডেমী করতে পারে। প্রতিনিয়ত যে সমস্ত নতুন নতুন শব্দ উৎপত্তি হচ্ছে তার হালনাগাদ করা।
২. ভাষা বা শব্দের সহজ রুপদান: নতুন ভাষা বা শব্দের সহজ রুপদান। নতুন শব্দ উৎপত্তি হচ্ছে সেগুলোর এমন বাংলা অর্থ রুপদান করতে হবে যেন সকলে সেটি সহজভাবে ব্যবহার করতে পারে। যেমন: মোবাইল অর্থ মুঠোফোন সেটি কিছু দিন ব্যবহার হলেও এখন আর তেমন ব্যবহার হয়না। তাছাড়া কম্পিউটার, টর্চ লাইট, মেমোরি কার্ড, লিফট ইত্যাদি নতুন শব্দের নতুন রুপ তেমন দেখা যায় না। তাই ইচ্ছা অনিচ্ছায় অন্য ভাষার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়।
৩. প্রচার ও প্রচারণা: নতুন ভাষা বা শব্দ হালনাগাদ বা সহজ রুপদান করলেই হবে না সেগুলো সাধারন মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য ভাল ভাবে প্রচার প্রচারণা করা খুবই গুরুত্বপূর্ন। তাছাড়া যে সমস্ত শব্দ আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলো শনাক্ত করে সেগুলোর ও সঠিক প্রচার প্রচারণার প্রয়োজন।
৪. প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ভাষার প্রাধন্য: দেশের ভিতর সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার প্রধান্য দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের ভাষা শক্তিশালী করতে পারি।
৫. আঞ্চলিক ভাষা মূল্যয়ন: দেশের ভিতর বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার এক এক ধরনের আঞ্চলিকতা আছে সে সমস্ত আঞ্চলিক ভাষার প্রাধন্য দেওয়া। তাছাড়া বিভিন্ন ভাবে সে সমস্ত ভাষার প্রচার কার যেতে পারে। যেমন এখন দেখা যায় আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা নিয়ে নাটক বা সিনেমা তৈরী হচ্ছে। এটা নি:সন্দহে ভাল উদ্ধ্যোগ।
এছাড়া আরো অনেক উপায়ে আমরা আমাদের ভাষা সুসজ্জিত করতে পারি। আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রাণের ভাষা রক্ষার জন্য একে একে এগিয়ে আসি। যে ভাষায় আমাদের পিপাসা নিবারণ হয় সে ভাষা জীবিত রাখার প্রয়স করি।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



