somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাসেল ০০৭
ভালোবাসি জ্যোৎস্নায় কাশবনে ছুটতে, ছায়াঘেরা মেঠোপথে ভালোবাসি হাঁটতে, দূর পাহাড়ের গায়ে গোধূলীর আলো মেখে, কাছে ডাকে ধান ক্ষেত সবুজ দিগন্তে, তবু কিছুই যেন ভালো যে লাগে না যেন, উদাসী পথের মাঝে মন পড়ে থাকে যেন, কোথায় রয়েছে ভাবি লুকিয়ে বিষাদ তবুও...

কিছু এলোমেলো ভাবনা ও সামুতে আমার প্রথম গল্প (আনাড়ী গল্প)।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা খুবই এক্সাইটেড । ঘটা করে পাত্রী দেখছেন আমার জন্য । পাত্রীর এটা পছন্দ হয়তো ওটা হয়না । যথাসম্ভব নিখুঁত একটা বউমা চাই তাঁর । বউমার সাথে সম্পর্কের রসায়ন টা কি হবে , কতটা আদরে তাকে বুকে জড়িয়ে রাখবে সে হিসেব কষতে কষতেই সময় পার। আমি ভাবি , কি বিচিত্র ! যে মা ভাবী বউমাকে নিয়ে এত এক্সাইটেড সে মা ই ছেলের হলুদ গোসলে হলুদ মাখাতে গিয়ে এক অজানা কারণে কেঁদে ফেলবে। ছেলের বিয়ে যাত্রায় দুধ ভাত খাওয়াতে গিয়ে হাত কাঁপবে কিংবা সালাম দিয়ে বিদায় নেবার সময় জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদবে । হয়তো এই ভেবে যে ছেলেকে সুদীর্ঘ ৩০ টি বছর নিজের অধিকারে রেখেছেন , আজ নিমিষেই সে অধিকারে অন্য কেউ ভাগ বসাবে । যে ছেলের হৃদয়ের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিলো মা আজ সেখানে বিস্তার করবে অন্য কারোর আধিপত্য। আমি বলি মা জেনেশুনে কেন বিষপান করছেন । আপনিতো আপনার ছেলেকে হারাবেন । মায়ের শুষ্ক হাসিতে জবাব , তবুও আমার একটা বউমা চাই । কি বিচিত্র ! আমি দ্বিধায় পড়ে যাই।

আজ আমাদের পঞ্চম এনিভার্সারি । তিন বৎসরের ফুটফুটে শুভ ঘরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । ওর এই পৃথিবীটা বড় বেশী নির্জঞ্ঝাট । ও বড্ড মা ঘেঁষা । মা'র সাথেই ওর যাবতীয় হিসেব নিকেশ । মাকে বোধ হয় অনেক বেশী ভালবাসে । আমিও কি আমার মাকে এরকমই ভালবাসতাম ? নাকি এর চাইতেও বেশী ? নাহ মনে করতে পারছিনা ।
মা গত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন বৎসর হতে চলল। বউমাকে নিয়ে মায়ের দেখা প্রতিটি স্বপ্নই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিলো । এক রাক্ষুসে ভালোবাসার অক্টোপাসে আমি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছিলাম । আমি বুঝতেই পারিনি আমি একটা মেরুদণ্ডহীন সরীসৃপ হতে চলেছি । মার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম । শয়নে , স্বপনে , জাগরণে আমার সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই আমার প্রেয়সী। মনে হতে লাগল আমার জন্মই বুঝি ওর জন্য । ও ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন । অথচ আমি ভুলেই গিএয়েছিলাম গত ত্রিশ বছর ধরে কত বিনিদ্র রাত, কত ত্যাগ তিতিক্ষা দিয়ে একজন আমায় ভালোবাসার চাঁদরে জড়িয়ে রেখেছিলেন। মুহুর্তেই সে ভালোবাসা আমার কাছে গৌণ হয়ে গিয়েছিলো । আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম কত স্মৃতি, কত হাসি-কান্না-আনন্দ আমার মায়ের সাথে জড়িয়ে । যেখানে প্রতিদিন প্রতিবার ঘরের বাহির হবার সময় মায়ের দোয়া নেয়া ছিলো অবধারিত , সেখানে আজ নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রেয়সীর অভিশপ্ত আলিঙ্গন। আমি বুঝতেই পারিনি আমি কতটা পশু হয়ে যাচ্ছি । প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় মা অধীর আগ্রহে বসে থাকতেন এই বুঝি তাঁর খোকা এসে বলবে--- মা আমি অফিসে যাচ্ছি , দোয়া কর। আর তিনি প্রাণ ভরে ছেলের জন্য দোয়া করবেন , কিন্তু প্রতিদিনই একটা নিঠুর আঘাত মায়ের হৃদয়টাকে দুমড়ে মুচড়ে দিত । নিদারুণ আঘাত নিয়েও মা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেন , যতক্ষণ খোকা কে দেখা যায় ততক্ষণ গ্রীল ধরে দাড়িয়ে থাকতেন আর আচলে চোখ মুছতেন । এতটা আঘাত মা নিতে পারেননি । প্রচণ্ড মানুষিক আঘাতে আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন । প্রায়শই আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাতেন , সে দৃষ্টিতে ছিলো এক ধরনের অবিশ্বাস আর অনুযোগ । কি যেন বলতে গিয়েও বলতেননা । হয়তো তাঁর ত্রিশ বছরের চেনা খোকা এত আমূল বদলে যাবে এটা বিশ্বাস করতে পারছিলেননা । তবুও মা প্রতিদিন জায়নামাজে বসে চোখের পানি ফেলতেন আর আমার জন্য দোয়া করতেন । আমি যেন সুখী হই , বউমা যেন আজীবন এরকম সুখে থাকে ।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার শেষের দিকের সময় গুলোতে মা প্রায় অস্থির হয়ে পায়চারী করতেন , আমি ঘরে আসলেই মা সময়ে অসময়ে আমার ঘরে চলে আসতেন । উস্ক-খুস্ক বেশে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন । প্রথম প্রথম গুরুত্ব না দিলেও একসময়ে এসে আমার চৈতন্য হয়। বুঝতে পারি কিছু একটা গড়বড় হয়ে গিয়েছে । বিয়ের পরবর্তী সময়টাকে পোস্টমর্টেম করতে বসলাম । সিনেমার রিলের মত সব কিছু আমার মানস্পটে এসে ধরা দিল। কি করেছি, কি করিনাই কিংবা কি করা উচিত ছিলো ? কিন্তু ততদিনে সব শেষ । তীব্র অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকলাম আমি । পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনে হতে লাগল। যতক্ষণ ঘরে থাকতাম মায়ের হাতটা বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতাম । মায়ের চুল আঁচড়িয়ে দিতাম, নিজ হাতে খাইয়ে দিতাম। মা পরম পরিতৃপ্তিতে খোকার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন । তারপর একসময় সব শেষ ।

শুভ কখন যেন এসে আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে । ওর অদ্ভুদ নিষ্পাপ সুন্দর মুখটার দিকে চেয়ে আছি । যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে আনুমানিক ২৫ বছর পর শুভর মা ওর জন্য প্রচণ্ড এক্সাইট্মেন্ট নিয়ে মেয়ে দেখবে । একটা যথাসম্ভব নিখুঁত মেয়ে বউ হিসেবে ঘরে আনবে। বউমাকে নিয়ে জানা অজানা স্বপ্নে ভাসবে । ততদিনে কি শুভ বদলে যাবে? একটা রাক্ষসে ভালোবাসার অক্টোপাসে বাধা পড়বেনাতো ? তাঁর মা কি প্রতিদিনকার আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে? ধুর কি ছাই ভাবছি............
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৭ সকাল ৭:৩১
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×