somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবজী চাষে বিপ্লব এনেছে বগুড়ার চাষীরা… ফুল চাষে উন্মেচিত হতে যাচ্ছে নতুন দিগন্ত!!!..

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০১২ সালে এটা আমার শেষ পোষ্ট।

২০১২ সালটা কৃষকের জন্য মোটেই সুখকর নয়। বিগত ইরি বোরো মৌসুমে চাষীরা ধান চাষ করে ভাল ফলন পেলেও প্রাপ্য মূল্য না পাওয়ার কারনে লোকসান করে সেই ধান বিক্রী করতে বাধ্য হয়েছে। ধান চাষীদের নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম ইতিপূর্বে লিন্ক Click This Link এখানে। তারপর পোল্ট্রী শিল্পের করুন অবস্হা নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম সেটির লিন্ক Click This Link ধান চাষী এবং পোল্ট্রী খামারীদের ব্যপক লোকসানের পর গতবছর সবজী চাষীরা ব্যপক লোকসান করেছেন। ব্যর্থ হয়েছিল তাদের শ্রম, পূজি, মেধা সহ সমস্ত কামনা বাসনা। গত শীতে বগুড়ার মহাস্হানে পাইকারী বাজারে মুলা বিক্রী হয়েছিল সর্বনিম্ন দামে যা ছিল একভ্যন মুলার দাম মাত্র ১২ টাকা!!.. সে তুলনায় এবছর চাষীরা উপযুক্ত দামে সবজী বিক্রী করে হাসি মুখে বাড়ি ফিরছে কৃষক। এই বছর সবজী চাষীরা এক ভ্যন মুলা ৩০০-৪০০ টাকা দাম পাচ্ছেন।

দুইদিনের সফরে সিরাজগন্ঞ্জে গিয়েছিলাম। আজ ফিরলাম সস্ত্রীক সন্তান সহ। সাড়ে এগারটার সময় বাসে চড়লাম রংপুরগামী বাসে। কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি ঢাকা, ঠান্ডা হীম হীম বাতাসে ছুটে চলছে গাড়ি বাসের জানালা দিয়ে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে ফসলের মাঠ। চোখ ধাঁধাঁনো সরিসা ফুল দিগন্তে বৃস্তিত মাঠে। সারি সারি জমিতে আলু ক্ষেত। সুর্য তখনো আলোকিত করেনি চারিপাশ। ফুড ভিলেজে যাত্রা বিরতীর পর বাস আবার চলতে শুরু করলো। বগুড়া পার হয়ে সুর্যের দেখা মিললো। বেলা তখন দুটো।



বাঘোপাড়া নামক স্হান থেকে রাস্তার দু পাশে যতদুর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল কোন জমিতে হলুদ গাঁদা কোনটাতে খয়েরী কেন জমিতে আবার হালকা হলুদ এবং কমলা রঙের গাদায় জমিতে অপরুপ সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে….মাঝে মাঝে দু একটি করে জমিতে রক্তিম গোলাপ সহ বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুটে আছে। এই এলাকার চাষীরা ফুল এবং ফুল গাছের চারা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রী করে জীবিকা নির্বাহ করে।



কিছুদুর পরেই মহাস্হান বাজার সেখানে সবজীর হাট বসেছে মহাসড়কের দুপাশ দিয়ে। রাস্তায় ট্রাক দাড় করিয়ে সবজি লোড করা হচ্ছে। এখানকার সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। পরিচিত কয়েকজনের কাছে জানলাম এবারে সবজির উৎপাদন ভালো হয়েছে এবং দামও বেশ ভালো কৃষকেরা খুশি। মহাস্হান বগুড়া জেলার শিবগন্ঞ্জ উপজেলায় অবস্হিত। উল্লেখ্য এখানে মসলা গবেষণা কেন্দ্র আছে। মহাস্হানের ব্রিজ পার হয়েই চোখ ধাঁধা লেগে গেল। রাস্তার দুপার্শে যতদুর চোখ যায় জমিতে শুধু সবজি আর সবজি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মুলা, টমেটোর ক্ষেত মাঝে মাঝে বাঁশ দিয়ে টংয়ের মত উচুঁ করে শিমের এবং লাউয়ের টাল (জাংলা) মহাস্হান বাজার থেকে মোকামতলা প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা এই রাস্তার দুপাশে শুধু সবজি আর সবজি ক্ষেত চোখে পড়বে যা দেখলে আপনার মনে হবে শিবগন্ঞ্জ এবং সোনাতলার কৃষকেরা মিলে পুরু দস্তুর একটা বিপ্লব ঘটিয়েছে তা হল “সবজি চাষে বিপ্লব”… কৃশকের সুদিন ফিরে আসুক তাদের পরিশ্রমের ফসলের নায্য মুল্য পাক তারা যা দিয়ে সংসার পরিজন নিয়ে হাসিমাখা মুখে সোনার চেয়েও খাটিঁ এই বাংলার মাটিতে ফসল উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পুরণ করুক এবং দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পুন্ন করে তুলুক







অনেকদিন যাবৎ খেয়াল করে আসছি বগুড়ার কৃষকেরা অন্যান্য জেলার কৃষকের চাইতে এডভান্স। তারা আগাম উৎপাদন করেন কৃষিপণ্য যার কারনে বাজার দামটা ভালো পান। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কম পরিমানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে প্রচুর পরিমানে গোবর সার ব্যবহার করে অধিক পরিশ্রম করে ফসল ফলান তারা। ফলাফল হিসেবে নায্য দামও তারা পান।
অন্যান্য জেলার চাষীরা মৌসুম অনুযায়ী ফসল ফলায় তখন বাজারে আমদানী অধিক হওয়ায় নায্য দাম হারান চাষীরা অনেক সময় লোকসানের মুখেও পড়তে হয় তাদের।তাছাড়া কৃষি প্রধান অন্ঞ্চলগুলোতে হীমাগারের সল্পতার কারনে মৌসুমী শাক সবজি পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় কৃষক উপযুক্ত দাম থেকে বণ্ঞ্চিত হন এবং মাঝখান থেকে মুনাফা লোটে মধ্যসত্বভোগীরা। তাই পর্যাপ্ত পরিমানে হীমাগার র্নিমান করা উচিৎ এজন্য সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত।

****পোষ্ট আপডেট ৩০-১২-২০১২ সময় ২:৫০ দুপুর****

গোকূলে ফুল এবং চারা উৎপাদনে বিপ্লব
বগুড়া জেলার মাটিডালি মোড় পার হয়ে রংপুর মহাসড়কে ৪-৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড় হলে আপনার চেখে পড়বে গোকূল ইউনিয়ন পরিষদ। এই এলাকা যেমন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনে নাম রয়েছে তেমনি এখানকার কৃষকেরা ফুল এবং ফুলগাছের চারা উৎপাদন করে বেশ সচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। মহাস্হান বাজারে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ নার্সারী তারা গোকূলের কৃষকদের থেকে উৎপাদিত চারা কিনে বিক্রী করে থাকেন। তারমধ্য উল্লেখযোগ্য সবুজ নার্সারী, হটিকালচার সেন্টার, মহাস্হান নার্সারী সহ প্রমুখ। তাছাড়া গোকূলের ফুল চাষীরা ফুল চাষ করে বগুড়ার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারী ফুল ক্রেতার নিকট ফুল বিক্রী করে থাকেন।


গাঁদা ফুলের ক্ষেত


গ্লোরিয়া ফুলের ক্ষেত


ফুলের রানী গোলাপ, এটি চারা উৎপাদনের ক্ষেত, চারা গাছে ফুটেছে গোলাপ..

মহাস্হানের সবজী দেশব্যপী চাহিদা মেটায় দৈনিক ৮০০-১০০০ টন খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম প্রতিদিন শিবগন্ঞ্জ এবং সোনাতলা উপজেলার উৎপাদিত সবজি মহাস্হান বাজারে কৃষকেরা বিক্রী করতে নিয়ে আসে। সেখানে বিশাল বিশাল আড়ৎ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী সবজী ক্রেতার আগমনে মুখরিত থাকে বাজার এলাকা। পাইকাররা সবজী কেনা হলে ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যান। তাতে করে গড়ে দৈনিক ৮০-১২০ খানা বড় ট্রাক সবজি লোড হয়। গড়ে ট্রাক প্রতি ১০টন হলে ১০*১০= ১০০ টন সবজী ছড়িয়ে পড়ে মহাস্হান বাজার থেকে। এ ছাড়া শিবগনেঞ্জ আদার চাষ সহ সারা বছরেই সবজী উৎপাদন হয়। কয়েকটি সবজী চাষের ছবি নিম্নোক্ত দিলাম।


বাঁধাকপি ক্ষেত।


সবজি ক্ষেতে কৃষক


ক্ষেত থেকে সবজি তুলে ভ্যনযোগে বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে..




(ছবি সংগ্রহ-গুগল থেকে)
ব্লগটি উৎসর্গ করলাম- মুশাসি ভাইকে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪০
৩৮টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×