আকাশে উড়ল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবিষ্কৃত মনুষ্যবিহীন বিমান (ড্রোন) ছবি যায়যায়দিন
’বিমান’ শব্দটিই শুনলেই যেন মানুষ কল্পনার জগতে ভেসে বেড়ায় পাখির মত।বিদ্যুৎ গতিতে মনটা চলে যায় আকাশ পানে, কিন্তু সেই বিমান যদি হয় চালক বিহীন বিমান তখন তা কল্পনাকেও হার মানায়! চালক নেই অথচ কি সুনিপুনভাবেই না বিমান উড়ছে আকাশে, করছে শত্রুর সাথে লড়াই, করছে গোয়েন্দাগিরীসহ আরো নানান রকমের কাজ ! হ্যাঁ, চালক বিহীন বিমান কোনো হলিউড বা বলিউডের কল্পনার জগৎ নয়, মূলত আধুনিক সমর প্রযুক্তির এক অনন্য সংযোজন ! চালক বিহীন বিমান এর ইংরেজী নাম Unmanned aerial vehicle (UAV), কিন্তু মনুষ্যবিহীন এ আকাশযানটি সবার কাছে ’ড্রোন’ নামেই সুপরিচিত। যদিও বিবিধ ব্যবহারের কারণে ড্রোন আমাদের মত তরুণ প্রজন্মের কাছে এক নতুন শব্দ, কিন্তু ড্রোনের ইতিহাস নতুন নয়।কিছু ড্রোন চালিত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবার কিছু ড্রোন নিয়ন্ত্রিত হয় বাইরের কোনো স্টেশন থেকে।
সম্প্রতি কিছুদিন যাবৎ শা-বি-প্র-বি র আবিস্কিত হতে যাওয়া ড্রোন নিয়ে সপ্ন দেখছে দেশ। পত্রিকায় মাঝে মাঝে এরকম খবর শুনে অনেকটা আশান্বিত হই। আমার দেশ এগিয়ে যাচ্ছে…অর্থনীতি, শিক্ষা এবং জ্ঞান বিজ্ঞানে…তাইতো গতকাল সিলেটে অবস্হিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ডঃ জাফর ইকবাল স্যার তাদের উদ্ভাবিত ড্রোন শাবির আকাশে সফলভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরন করেছে। বাংলাদেশ যে ড্রোন আবিস্কার করেছে সেটির দ্বারা চমৎকারভাবে গোয়েন্দাগিরী করা যাবে। বিশেষ করে যেসব দূর্গম এলাকা রয়েছে সেখানে ড্রোন মোতায়েন করে গোয়েন্দাগিরী করা সম্ভব। ড্রোনের ক্যমেরায় ধরা পড়বে সব ছবি।
তাছাড়া দেশের সিমান্তে এবং অভ্যান্তরে গোলযোগপুর্ন এলাকায় ড্রোন মোতায়েন করে অপরাধী সনাক্ত করা যাবে।
দেখে নেই বাংলাদেশের ড্রোন নিয়ে পত্র-পত্রিকার কিছু রিপোর্টঃ
দৈনিক যায়যায়দিন ৩০ শে জানুয়ারী ২০১৪
আকাশে উড়ল শাবির ড্রোন
ড্রোনশাবি প্রতিনিধি _যাযাদিডানায় ও পিঠে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ংঁংঃ) নাম এবং মনোগ্রাম বহন করে আকাশে উড়ল প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের তৈরি 'মনুষ্যবিহীন বিমান' (ড্রোন)। বুধবার দুপুর দেড়টার সময় মিনিটখানেক শাবির আকাশে চক্কর দেয় এটি।
শাবির কেন্দ্রীয় মাঠ থেকে 'ড্রোন' গবেষক টিমের প্রধান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল ড্রোনটি উড়িয়ে দেন।
ড্রোন তৈরি টিমের তত্ত্বাবধায়ক শাবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নাবিল ছাড়াও উড্ডয়ন করা ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন গবেষক টিমের সদস্য পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রবি কর্মকার ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন রাহাত। তারা সবাই সাস্ট রোবটিক্স অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড ইন্টারফেসিং রিসার্চ গ্রুপের (িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ঝটঝঞজড়নড়অবৎড়) সদস্য।
'ড্রোন'টি ওড়ানোর সময় কয়েকশ শিক্ষার্থী উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে জড়ো হয় শাবির মাঠে। মাঠে বসিয়ে রেখেই ড্রোনটি উড়িয়ে দেন গবেষকরা।
ড্রোন ওড়ানোর পর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, 'আমরা আপাতত এটিকে ড্রোন না বলে 'ফ্লায়িং মেশিন' বলছি।'
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'আমাদের পরিকল্পনা আরো বড়। আর আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছি। যেমন, হয়ত ড্রোনটি এখান থেকে ছেড়ে দেব আর সেটি চট্টগ্রাম ঘুরে আসবে।'
তবে, এ জন্য বড় আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ইতোমধ্যে দুই ব্যক্তি সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। আরো অনেকেই যোগাযোগ করছেন।
শাবির তৈরি করা এই ড্রোনের কাজ সম্পর্কে জাফর ইকবাল বলেন, যেখানে মানুষ যেতে পারবে না, সেখানে চলে যাবে ড্রোন। তুলে নিয়ে আসবে ছবি।
তিনি আরো বলেন, শুধু ড্রোন তৈরিতে নয়, দেশের সব ধরনের গবেষণার জন্য সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষার্থী পড়াবে তা নয়, সেখানে গবেষণা হবে, শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী কাজ করবেন বলে মনে করেন এই বিজ্ঞানী।
তিনি বলেন, 'গবেষণার খরচ অনেক বেশি। তবে, এই ড্রোন আমার নিজের পকেটের টাকা দিয়েই তৈরি করা।'
ড্রোন গবেষক টিমের প্রধান শিক্ষার্থী নাবিল বলেন, এই ড্রোন দিয়ে দেশের সীমানা পাহারা দেয়া ও উপর থেকে তাৎক্ষণিক ছবি তোলা সম্ভব হবে। এ ছাড়া, আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। দেশের সেনা, বিমান এবং নৌবাহিনী এটি ব্যবহার করে তাদের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কাজ করবে।
নাবিল আরো জানান, রেলপথের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এটি ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটা ব্যবহার করে দেশের যে কোনো স্থান পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
গবেষক টিমের প্রধান নাবিল জানান, তাদের অনেকগুলো প্রজেক্টের মধ্যে ড্রোন অন্যতম। গত বছরের এপ্রিল থেকে তারা ড্রোন তৈরির তাত্তি্বক কাজ শুরু করেন। এরপর, চলতি বছরের শুরু থেকে তারা মূল কাজগুলো শুরু করেন। আরো তিন মাস পরই ড্রোন আকাশে ওড়ানো যাবে_ এমন ঘোষণা থাকলেও বুধবারই তারা আকাশে উড়িয়ে দিয়েছেন।
নাবিল বলেন, 'আমরা বিভিন্ন ধরনের ড্রোন ডেভেলপমেন্টের দিকে নজর দিচ্ছি। এর মধ্যে প্লেন, গ্লাইডার, জেট এবং মাল্টিকপ্টার উল্লেখযোগ্য। আর্মি এবং এয়ারফোর্স সাহায্য করলে আমরা মিলিটারি ড্রোন বানানোর দিকে নজর দেব।'
নাবিল আশা প্রকাশ করেন, 'বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে অফিসিয়ালি কাজ করবে।'
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বিশ্বে ড্রোন একটি আলোচিত যন্ত্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন যেমন রাডার ফাঁকি দিয়ে একটি দেশের ভেতর অনায়াসে ঢুকে পড়তে পারে, তেমনি দূরনিয়ন্ত্রিত এসব বিমান লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারে নির্ভুলভাবে।
মনুষ্যবিহীন ড্রোনে ক্যামেরা থাকে। ওই ক্যামেরার মাধ্যমে গৃহীত ভিডিওচিত্র ভূমি থেকে বিমান নিয়ন্ত্রণকারী অপারেটরের কাছে পেঁৗছে দেয়া হয়। আকাশসীমায় পর্যবেক্ষণ চালানো, নিজ দেশের আকাশসীমা পাহারা দেয়া, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, শত্রুদের বেতার ও রাডার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো এবং আড়ি পেতে তথ্য জোগাড় করা থেকে শুরু করে প্রয়োজনে আরো ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে এ ধরনের বিমান।
এসব বিমান পাইলটবিহীন হওয়ায় যুদ্ধে পাইলটের মৃত্যুঝুঁকি থাকে না, তাই যে কোনো পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিমান ব্যবহার করা যায়।
বিশ্ব প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া উন্নত বেশ কয়েকটি দেশ ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, চীন এবং ভারত উল্লেখযোগ্য।
সংবাদের লিন্ক
স্বপ্ন দেখাচ্ছে শাবিপ্রবির ড্রোন
গত ২৩ শে ডিসেম্বর ২০১৩ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন একটি বিশেষ আয়োজন করেছিল’রকমারী’ পাতায় ড্রোন বিষয়ে। দেখা যাক রিপের্টগুলিতে কি বলা হয়েছে।
ড্রোন হচ্ছে এমন একটি বিমান যেখানে কোনো পাইলট থাকে না। দূর থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ড্রোনে সাধারণত ক্যামেরা থাকে। এ ক্যামেরার মাধ্যমে গৃহীত ভিডিওচিত্র ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণকারী অপারেটরের কাছে পেঁৗছে দেওয়া হয়। আকাশসীমায় পর্যবেক্ষণসহ সীমানা পাহারা দেওয়া, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, শত্রুদের রাডার বেতার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো, আড়ি পেতে তথ্য জোগাড়সহ আরও অনেক কাজে পারদর্শী এ ড্রোন। আর চালক না থাকার কারণে ঝুঁকিও নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সীমান্তে বহিঃশত্রুর অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ আধুনিক সমরবিদ্যার সর্বশেষ সংযোজনগুলোর অন্যতম হচ্ছে ড্রোন বা মনুষ্যবিহীন বিমান। আধুনিক বিশ্বের সমরবিদ্যার বিশেষ সহায়ক হলো ড্রোন। বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো ড্রোন ব্যবহার করে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করাসহ নানা কাজ করছে অনায়াসেই। উন্নত প্রযুক্তি আর ব্যয়বহুল হওয়ায় সব দেশ ড্রোন ব্যবহার করতে পারে না। এতদিন ড্রোন ব্যবহার ছিল শুধু উন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বর্তমান ড্রোন ব্যবহারকারী রাষ্ট্রগুলোর মতো বাংলাদেশ এতটা উন্নত না হলেও খুব শীঘ্রই হয়তো বাংলাদেশের আকাশেও দেখা যাবে ড্রোন। তবে ড্রোন ব্যবহারকারী এসব দেশের খাতায় হয় তো খুব দ্রুতই নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তেমনটাই স্বপ্ন দেখাচ্ছে ।
http://www.bd-pratidin.com/2014/01/23/39512' target='_blank' >সংবাদের লিন্ক
কুয়েটের অটোনোমাস ড্রোন
দেশের মধ্যে কোথায় গোলযোগ লেগেছে কিংবা দুর্যোগকবলিত দুর্গম অঞ্চলের সচিত্র তথ্য দ্রুততম সময়ে পেতে উদ্ভাবন করা হয়েছে মনুষ্যবিহীন স্বয়ংক্রিয় উড়ন্ত যান 'অটোনোমাস ড্রোন'। শুধু তাই নয়, এ ড্রোন সীমান্তের চোরাচালান নজরদারিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক হিসেবেও কাজ করতে পারবে। এমনকি দুর্গম অঞ্চলে জরুরি ওষুধ সরবরাহেও কাজ করবে। আর এটি উদ্ভাবন করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের ৮ ব্যাচের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন খান দীপ। তিনি বলেন, ড্রোনটি একটি পূর্ণাঙ্গ অটোনোমাস ড্রোন। অর্থাৎ এটি চালাতে প্রয়োজন হবে না কোনো রিমোট বা মানুষ। কোথায় যেতে হবে শুধু তা বলে দিলেই বাকি কাজ ড্রোনটি নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করবে। একেবারে আমেরিকার ড্রোনের মতো।
জানা যায়, উদ্ভাবনের শুরুতে ড্রোনটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে চালানো হতো। এক বছর দশ মাস চেষ্টার পর বর্তমানে এটি পুরোপুরি অটোমেটিকভাবে চলতে সক্ষম। কোথায় যেতে হবে তা গুগল ম্যাপের সহায়তায় নির্দিষ্ট করে দিলেই ড্রোনটি সুনির্দিষ্ট পথ পরিভ্রমণ করে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে আসবে। এ ড্রোন দিয়ে জরুরি পণ্য পরিবহনও সম্ভব। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্যও আগাম তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারবে। ধরুন কোনো স্থানে গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি কী জানতে চাইলে এই ড্রোনকে সে জায়গার কো-অর্ডিনেট বলে দিলেই হবে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট উচ্চতায় উড়ে গিয়ে সে জায়গায় পৌঁছে যাবে এবং সে জায়গায় গিয়ে উচ্চতা পরিবর্তন করে গোলযোগের সরাসরি ভিডিও পাঠাতে পারবে। ডাটা ট্রান্সিভার সিস্টেম থাকায় ড্রোনটি যে জায়গায় যাবে সে জায়গার আবহাওয়া সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য যেমন তাপমাত্রা, চাপ এটি দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষিত ওয়েবসাইট এবং ড্রোনের সুরক্ষা ব্যবস্থার আরও উন্নতি সাধন করতে হবে।
দীপ বলেন, এই ড্রোনটি তার চতুর্থ বর্ষের থিসিস প্রজেক্ট ছিল। এই প্রজেক্টের সুপারভাইজার ছিলেন তড়িৎ ও ইলেকট্রিক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান। ড্রোনটির অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করেছে বন্ধু রিজভী আহমেদ। এ ছাড়া তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছে সহপাঠী গোলাম সুলতান মাহমুদ রানা।
অটোনোমাস ড্রোন প্রজেক্টের সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, উদ্ভাবিত ড্রোনটি ৯০ শতাংশ প্রকৃত ড্রোন পর্যায়ের। পরিপূর্ণ ড্রোনের কার্যকারিতা পেতে হলে এখন এটিতে ইমেজ প্রসেসিং কার্ড ব্যবহার করতে হবে। যা করা সম্ভব। এ জন্য চেষ্টা চলছে।
ড্রোনটি যেভাবে কাজ করে : ড্রোনটি কোয়াডকাপ্টার। মূলত এটি এমন একটি উড়ন্ত যান যেটি কন্ট্রোল করা হয় চারদিকে চারটি ব্রাশলেস ডিসি মোটর এবং প্রোপেলার দ্বারা। এটি নরমাল উড়োজাহাজের মতো রোল, পিচ এবং ইও (yaw) এই তিন অক্ষ বরাবর চলতে পারে। চারটি মোটরের স্পিড পরিবর্তন করে এটিকে এই তিন অক্ষ বরাবর ঘুরানো যায়। আর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় যে কোনো একটি পয়েন্টে ভেসে থাকতে পারে। এটিকে অটোম্যাটিক নেভিগেশনের জন্য এতে আরও রয়েছে জিপিএস। জিপিএসের ডাটা দিয়ে এবং মাগনেটোমিটার থেকে পাঠানো তথ্য দিয়ে এটি দিক ঠিক করে অটোমেটিক্যালি চলতে পারে। প্রতি সেকেন্ডে ৫ মিটার গতির এ ড্রোনটি ৩০ মিনিট পর্যন্ত উড়তে পারে। ব্যাটারিচালিত এই ড্রোনটি দেড় কেজি পণ্য পরিবহনে সক্ষম। তবে এর গতি উড়ন্ত সময় এবং পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বাড়ানো যাবে। প্রসঙ্গত, আবদুল্লাহ আল মামুন খান দীপের জন্ম ১৯৮৯ সালে। তিনি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার উত্তর হাজাতিয়া গ্রামের মো. দৌলত খান এবং মায়ের নাম নূরজাহান খানের সন্তান। দীপ ২০১৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় ইন্টারন্যাশনাল অটোনোমাস রবোটিক কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। তার টিমে আরও ছিল সহপাঠী গোলাম সুলতান মাহমুদ রানা। এ ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল আইইইই (IEEE) কনফারেন্সে তার অ্যাম্বেডেড সিস্টেমের ওপর চারটি গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো বর্তমানে (IEEE EXPLORE) নামক ডিজিটাল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। বর্তমানে দীপ কুয়েটের আরেক শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল ইসলামকে নিয়ে ভিডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেমটি ডেভেলপ করছেন। এই ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো দূরত্বে পাঠনো সম্ভব। এ ছাড়াও ভিডিও ডাটা এনক্রিপটেড থাকায় এ ভিডিও কেউ চুরি করে দেখতে পারবে না।
*সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা
http://www.bd-pratidin.com/2014/01/23/39511' target='_blank' >সংবাদের লিন্ক
ড্রোনের ইতিহাস।
চালক বিহীন বিমান তৈরির চেষ্টা প্রথম করা হয় সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দশকেই।যুক্তরাস্ট্রের একজন পদার্থবিদ ও প্রকৌশলী নিকোলা টেসলা ১৯১৫ সালে সর্বপ্রথম চালক বিহীন বিমান তৈরির ধারণা দেন।এর ভিত্তি ধরেই ১৯৩৫ সালে র্যাগিনাল্ড ডেনি নামক একজন হলিউড ও টিভি অভিনেতা সর্বপ্রথম দূরবর্তী চালক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ড্রোনের উদ্ভাবন করেণ এবং পরে তিনি নিজেই ড্রোন তৈরির একটি কারখানা খুলেন।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এই ড্রোন প্রযুক্তি উত্তরোত্তর উন্নতির দিকে যাত্রা করে।১৯৪০ সালে র্যাগিনাল্ড ডেনি যুক্তরাস্ট্রের সেনাবাহিনীর সাথে রেডিও নিয়ন্ত্রিত ড্রোন তৈরির এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন।র্যাগিনাল্ড ডেনির কোম্পানি যুক্তরাস্ট্রের সেনাবাহিনীকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় প্রায় ১৫ হাজার রেডিও নিয়ন্ত্রিত ড্রোন তৈরি করে দেন। তবে সেসময় শুধু যুক্তরাস্ট্রই ড্রোন তৈরি করেনি, নাজি জার্মানিও বিভিন্ন ধরণের ড্রোন তৈরি করেছিল। চালক বিহীন বিমানের যাত্রা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধচলাকালীন শুরু হলেও তখনকার ড্রোন এত উন্নতমানের ও এত উচ্চক্ষমতা বিশিষ্ট ছিল না, এগুলো ব্যবহার করা হত বেসামরিক কাজে। ১৯৬০ এর দশকে যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাস্ট্র লক্ষ্য করল যে যুদ্ধে প্রতিকূল পরিবেশ ব্যপকহারে পাইলটদের প্রাণহানি ঘটছে এবং এনিয়ে যুক্তরাস্ট্রের বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তখন তারা যুদ্ধবিমানে পাইলটের বিকল্প হিসাবে ড্রোনের ব্যবহার ভাবতে লাগলেন।মূলত তখন থেকেই আধুনিক চালক বিহীন বিমানের যাত্রা শুরু হয়।যুক্তরাস্ট্রের এই ভাবনাকে ত্বরান্বিত করে যখন ১৯৬০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার আকাশে যুক্তরাস্ট্রের একটি ইউ-টু নামক গোয়েন্দা বিমান ভূ-পাতিত করে। যাইহোক, এরপর থেকেই ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়ন যেমন থেমে থাকেনি তেমনি এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। সময়ের প্রেক্ষিতে শুধু যুক্তরাস্ট্র নয় এখন এই ড্রোনের ব্যবহারকারী দেশ প্রায় ৫০ এর অধিক হলেও ড্রোন প্রযুক্তি অধিকারী দেশের সংখ্যা এখনো সীমিত।
যে সমস্ত দেশ গর্বীত ড্রোনের উদ্ভাবকঃ
অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তির শীর্ষস্থানীয় দেশের মধ্যে যুক্তরাস্ট্র, ইসরায়েল অন্যতম। এরপরেই আছে চীন, রাশিয়া, ইরান, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্থান ও আরো কিছু দেশ। তবে অনেক দেশ ড্রোন প্রযুক্তির অধিকারী হলেও যুদ্ধ করার ক্ষমতা সম্পন্ন ড্রোন প্রযুক্তির দেশের সংখ্যা আরো সীমিত। ইসরায়েল সর্বপ্রথম ড্রোনে মিসাইল যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে ।এরপর এই প্রযুক্তি যুক্তরাস্ট্রসহ আরো কিছু দেশ আযত্ব করে ও অধুনা ইরানও এই প্রযুক্তি আয়ত্ব করেছে।কিছু ড্রোন আছে যেগুলো শুধু গোয়েন্দা নজরদারীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় আবার কিছু ড্রোন যেগুলো শুধু কমব্যাট শ্রেনীর আবার কিছু ড্রোন একই সাথে গোয়েন্দা নজরদারী ও কমব্যাট শ্রেণীর।তবে কমব্যাট ড্রোনধারী দেশের সংখ্যা খুবই সীমিত। নিচে ড্রোন প্রযুক্তির অধিকারী দেশের কিছু ড্রোনের ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হলো।
আর কিউ -১৭০ সেন্টিনেল ড্রোন( RQ-170 Sentinel)
মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মারটিন এই ড্রোন নির্মান করে।সিআইএ নিয়ন্ত্রিত এই ড্রোন বিশ্বের সর্বাধিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ড্রোনগুলোর একটি।যুক্তরাস্ট্র এই ড্রোন সম্পর্কে খুবই সামান্য ধারণা প্রকাশ করেছিল। তবে ড্রোনটি স্টিলথ প্রযুক্তির হওয়ায় এই ড্রোন সম্পর্কে আগে তেমন কিছু জানা ছিল না ।মূলত এই ড্রোন শত্রুদেশের রাডার ফাকি দিয়ে তার আকাশ সীমায় নজরদারী করার জন্য ব্যবহার করা হত।বিশেষ করে পাকিস্থান, আফগানিস্থান ও ইরানের আকাশ সীমায় ব্যবহারের ফলে এই ড্রোন আলোচনায় আসে তবে ২০১১ সালে ইরান নিজ প্রযুক্তির সাহায্যে এই মডেলের একটি ড্রোন নিজ আকাশ সীমা থেকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় যা সেসময় সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিল ইরান! যুক্তরাস্ট্র প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা তাদের ড্রোনটি ফেরত চায়, কিন্তু ইরান তা ফেরত দিতে অস্বীকার করে ও ইরান নিজেই এই ড্রোন বানাবার ঘোষণা দেয়।
এম কিউ (MQ-1 Predator
এই ড্রোনটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানজেনারেল এটোমিক্স এরোনটিক্যালস দ্বারা নির্মিত একটি কমব্যাট ড্রোন।এই বিমানটি একই সাথে গোয়েন্দা নজরদারী ও কমব্যাট মিশনে সমান পারদর্শী। মার্কিন বিমান বাহিনী ও সিআইএ এই ড্রোনটি ব্যবহার করে। এই ড্রোনটি প্রযুক্তির অত্যাধুনিক ক্যামেরা, সেন্সর সংবলিত ও এই ড্রোনটি মার্কিন যুক্তরাস্ট্র আফগানিস্থান, পাকিস্থান, বসনিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, লিবিয়াসতে ব্যাপকহারে ব্যবহার করেছে। কন্ট্রোল ইউনিটের নির্দেশনা ও স্যাটেলাইটের সাহায্যে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যস্থির করে মিসাইল হামলা চালায়।পাকিস্থান ও আফগানিস্থানে ব্যাপকহারে নারী, পুরুষ ও শিশুর মৃত্যুর জন্য মূলত এই ড্রোনটি দায়ী।যুক্তরাস্ট্র পাকিস্থানে এই ড্রোনটিকে গুপ্তঘাতক হিসাবে ব্যবহার করেছে।
অ্যাভেন্জার ।( Avenger -Predator C)
এই ড্রোনটি প্রিডেটর সিরিজের তৃতীয় প্রজন্মের ড্রোন।এর প্রথম উড্ডয়ন হয় ২০০৯ এর এপ্রিলে।এই ড্রোনটিতে প্রথমবারের মত অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির টারবুফান ইন্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।রাডার ফাকি দিতে সক্ষম যুক্তরাস্ট্র কর্তৃক নির্মিত ব্যায়বহুল, শক্তিশালী ও উন্নত প্রযুক্তির ড্রোনগুলোর মধ্যে এটি একটি।২০১১ সালে এই ড্রোন আফগানিস্থানে মোতায়েন করা হয়। তবে ড্রোনটিকে এখনো আপডেট করানো হচ্ছে।
আএআই ইতান ( IAI Eitan)।
এটি ইসরায়েল নির্মিত একটি অত্যাধুনিক গোয়েন্দা ও কমব্যাট ড্রোন। ড্রোনটি আএআই হেরনের উন্নত সংস্করণ।ড্রোনটি ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা ও সুদানে হামলায় ব্যবহার করেছিল।জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও ব্রিটেন এই দেশগুলি ইসরায়েলের কাছ থেকে এই ড্রোন কিনে নেয়।হারপি, হেরন এই ড্রোনগুলিও ইসরায়েলের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গোয়েন্দা ড্রোন।তবে ভারত ইসরায়েলের কাছ থেকে হেরন ড্রোন ক্রয়ের চুক্তি করেছে যা এই ২০১৪ সালেই ভারতের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করতে পারবে।
শার্প সোর্ড( Sharp Sword)
চীনের তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি স্টিলথ ড্রোন।শুধু তাই নয় চীন ড্রোন প্রযুক্তিতে প্রায় এখন যুক্তরাস্ট্রের কাছাকাছি পর্যায়ের।
শাহেদ-১২৯ ( Shahed 129)।
ইরানের সর্ববৃহৎ বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান HESA কর্তৃক নির্মিত উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষমতাসম্পন্ন ইরানের কমব্যাট ড্রোন।এই ড্রোনটি ইরানের সাদিদ-১ মিসাইল ব্যবহার করে থাকে। ড্রোনটি ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় আকাশে ভেসে থাকতে পারে এবং সর্বোচ্চ ২০০০ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত এলাকায় অপারেশন চালাতে পারে।
কাররার( Karara)
এটি হলো ইরানের বোমারু ড্রোন।এই ড্রোনটি একই সাথে ১১৫ কেজি ওজনের বোমা ও চারটি কাওসার মিসাইল বহন করতে পারে।
ফটরস ("Fotros)
এই অত্যাধুনিক ড্রোনটি ইরানের সমর প্রযুক্তির সর্বশেষ সংযোজন। ড্রোনটি স্টিলথ প্রযুক্তির সম্পন্ন। এই ড্রোনটি একটানা ৩০ ঘণ্টা উড়তে পারে ও একই সাথে ২০০০ কি.মি বিস্তৃত এলাকা অপারেশন চালাতে পারে।ড্রোনটি গোয়েন্দা নজরদারী ও আকাশ থেকে ভুমতি মিসাইল হামলা করতে পারে।
শেষ কথাঃ
যাইহোক, ড্রোন নি:সন্দেহে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে একটি বিষ্ময়কর সংযোজন। যদিও কমব্যাট ড্রোন শান্তি নয় যুদ্ধের বার্তা বহন করে তবে বেসামরিক কাজে এর বহুবিধ ব্যবহার আছে।বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, তেল, গ্যাস অনুসন্ধানে, দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকার ছবি তুলতে, শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন শান্তিমূলক কাজে ড্রোনের বহুবিধ ব্যবহার আছে। ড্রোন যুদ্ধ নয় শান্তির কাজে ব্যবহার হোক এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
উৎসর্গ-ব্লগার মিজানুর রহমান মিলন।
তিনি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা না করলে এত বিস্তারিত লিখতে হয়তো পারতামনা... আবারো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মিলন ভাইকে।