somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন আহমেদঃ একজন স্বপ্নবাজের অগ্যস্ত যাত্রা।

১৯ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোগী ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করলেন- ডাক্তার, আমি কি মারা যাচ্ছি?
ডাক্তার বললেন- আমরা সবাই মারা যাচ্ছি।
এই কথা গুলো হিমুর মুখে মানায়। জীবনের শেষ বেলায় এভাবে কথা গুলো বলে চলে গেলেন। তিনি আমাদের হিমু। আমাদের হুমায়ুন আহমেদ।


লেখকের জানাযায় অংশ নেয়া মানুষের গাড়ী বহরের একাংশ।

এই অরন্যের পথ ধরে নুহাশ পল্লীতে যেতে হয়

নুহাশ পল্লীর প্রবেশ দ্বার

যেখানে লেখক চির নিদ্রায় সমাহিত।
বাংলা সাহিত্যে তাকে হ্যামিলিওনের বাঁশি ওয়ালার সাথে তুলনা করা যায়। সরাসরি হ্যামিলিওনের সাথে তুলনা করলে অন্য রকম ব্যাখ্যা দাড়ায়। হ্যামিলিওনের বাঁশিওয়ালা তো সব বাচ্চাদের নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে চলে গেছেন আর ফিরে আসেনি। তিনি হ্যামিলিওনের বাঁশির মত পাঠকদের নিয়ে হারিয়ে যাননি, তার বই মুখী করেছেন। তিনি এতটাই যাদু জানতেন যে, বাংলা সাহিত্যে এমন যাদুকর আর নেই নির্দিধায় বলা যায়। বাংলা সাহিত্যে অনেক রথি মহারথি আছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের রথি মহারথি কেউ নন, তিনি বাংলা সাহিত্যের যাদুকর। শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা যাচাই করে নোবেল দেয়ার প্রথা থাকত তাহলে তিনি বাংলা সাহিত্যে নোবেল পেতেন। সাহিত্যে একটা কথা আছে যে, জনপ্রিয় সাহিত্য আর ক্লাসিক্যাল সাহিত্য এক নয়। যে সাহিত্য ক্ল্যাসিক ভেঙ্গে পাঠকরে কাছাকাছি আসে তাহা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। হুমায়ুন আহমেদ সেই কাজটি করেছেন। তিনি মানুষের জীবনের জটিল গূঢ় কথাগুলি অতি স্বাবাবিক ভাবে বলেছেন। তখন একথা গুলি আর দির্ঘশ্বাসের হয়ে থাকেনি তখন তা কষ্টের না হয়ে হয়েছে সাহিত্য রস। তা থেকে পাঠক আনন্দ উপভোগ করেছেন।

পিতার জানাযায় লেখকের বড় ছেলে নুহাশ।

পুকুর লীলবতীর সৌন্দর্য।

লেখকের বাড়ী বৃষ্টি বিলাস। এই ঘরটি লেখক খুব পছন্দ করতেন। এই ঘরের চাল টিন দিয়ে তৈরি করেছেন বৃষ্টির শব্দ ও সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।


লেখকের বাড়ী- ভুত বিলাস

জমিদার বাড়ীর আদলে তৈরি ঘর বাড়ী

তিনি তার সাহিত্যে বাংলার প্রকৃতিকে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে তিনি জ্যোছনাকে তুলে ধরছেন অন্য মাত্রায়। বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতির এ বিশাল রহস্য এবং সৌন্দর্য জ্যোছনাকে নিয়ে এত করে লিখেননি যেমনটি লিখেছেন হুমায়ুন আহমদে। জ্যোছনা সৌন্দর্যকে তিনি যেমন ভালবাসতেন তেমনি তিনি পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন। পাঠক এখন তার জ্যোসনাকে উপভোগ করেন।

একজন মানুষ কতটা স্বপ্নবাজ হলে জীবনে এভাবে হেয়ালিপূর্ণ করে তুলতে পারেন। আমি তাঁহার লেখা পড়ি স্কুল জীবনের শেষের দিক থেকে। হুমায়ুন আহমেদের বই চোখের সামনে ফেলেই পড়ার শুরু করতাম এবং শেষ না করে রাখতাম না। তাঁর সম্পর্কে একথা প্রায় সবাই বলে থাকেন যে, তাঁর বই শেষ না করে রাখা যায় না। আমি তাঁর বই গুলো যেমন পড়তাম তেমন তাঁর একজন কড়া সমালোচক ছিলাম। বিশেষ করে তার চরিত্র গুলো যথেষ্ট খামখেয়ালী। যেমন হিমু- কাজ নেই, ব্যবসা চাকুরী কিছুই নেই তিনি অন্যের উপর খেয়ে মহত্ব দেখান আর ঘুরে বেড়ান। কিন্তু হিমুর জন্য কষ্ট হত। কারণ তার বাবা মা ছোট বেলা মারা যান। আবার তার বাবা চাইত যে তার ছেলে মহা মানব হবে। তার ছেলে মহা মানব হতে হলে তাকে অনেক দু:খ কষ্ট সহ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তার মা অন্তরায় হবে। তাই হিমুর ছোট বেলায় বাবা তার মাকে মেরে ফেলে। যা হিমুর মনে দাগ কাটে। আবার হিমুর অতি প্রিয় একটি পোষা টিয়াকে হিমুর সামনে টান মেরে ছিড়ে ফেলে। এগুলো হিমুর বাবা করেন তার ছেলেকে মহামানব বানাবেন বলে। কিন্তু বাবা একসময় মারা যান। হিমু অনেকটা বন্ধনহীন ভাবে মুক্ত হয়ে পড়ে। যা তার জন্য দু:খের হলে বিশাল মুক্তি এনে দেয়। এই পৃথিবীতে তার কোন বন্ধন নেই। সে একজন মুক্ত মানুষ। অনেকটা পথের প্যাঁচালীর অপুর মত। পথের প্যাঁচালী উপন্যাসের শেষে দিকে- 'পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া কহিলেন- মুর্খ বালক, এখানেই পথের শেষ নয়......................................।

আমি হুমায়ুন আহমেদের দ্বিতীয় বিবাহের পর তার সকল সাক্ষাৎকার এবং বইয়ের মুখ বন্ধ পড়তাম। সেখানে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন ও দুই ছেলের কথা বেশি বলতেন। তার যে ছেলে নুহাশের নামে নুহাশ পল্লী গড়ে তুলেছেন তার কথা বলতেন না এবং তেমন লিখতেন না। আমার ধারণা ছিল তা এ ছেলে মারা গেছে এজন্য তার নামে নুহাশ পল্লী গড়ে তুলেছেন। কারণ লেখকের এক লেখায় পড়েছি “ পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী বস্তু হল- পিতার কাধে সন্তানের লাশ”। প্রত্যেক সাহিত্যিকের সাহিত্য কর্মে তার চারিপাশের পরিবেশ, সমাজ ব্যবস্থা, মনন ও মানস চরিত্র ফুটে উঠে। জীবিত থাকা অবস্থায় নুহাশ পল্লীতে যাবার ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারিনি। মৃত্যুর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। নুহাশ পল্লীতে তার জানাযায় অগনিত ভক্তদের সাথে আমিও উপস্থিত হয়েছি। গিয়ে দেখলাম যে তিনিই হিমু, তিনিই মিসির আলী তার সকল চরিত্রে কোন না কোন ছাপ তার নিজের মধ্যে বিদ্যমান। নুহাশ পল্লীতে তার ঘর গুলোর নাম- ভুত বিলাস, বৃষ্টি বিলাস। পুকুরের নাম- লীলাবতী। আমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি যিনি এত জীবনবাদী, জীবনকে যিনি পরতে পরতে উপভোগ করতে চেয়েছেন। তিনি অবুঝের মত মরতে চানটি। মৃত্যু থেকে অনেক দুরে থাকতে চেয়েছেন। চিকিৎসকদের কাছ থেকে ২০ দিনে ছুটি নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে গেছেন নুহাশ পল্লীতে। তিনি বলেছেন- নুহাশ পল্লীর প্রতিটি ইঞ্চির সাথে তার স্বপ্ন জড়িয়ে আছে। তাই নুহাশ পল্লীতে লেখককে দেখতে গেলাম। সত্যিই নুহাশ পল্লী হুমায়ুন আহমেদের আর এক সৃষ্টি। সাহিত্য প্রেমীদের কাছে এটি তীর্থ স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে। আর নুহাশ পল্লীকে দেখতে হবে হিমুর চোখ, হুমায়ুন আহমেদের চোখ দিয়ে অথবা মিসির আলীর চোখ দিয়ে। তবেই নুহাশ পল্লীর সৌদর্য, মর্মকথা জানা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৩৮
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×