লক্ষীর লজ্জা (সত্যি ঘটনা)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমি তখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের ক্লাসে সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের যে কয়জন ছাত্রছাত্রী তাদের একজন লক্ষী দাশ। সে লেখাপড়ায়ও ভালো ছিল না। তাই প্রতিদিনই তাকে সহ্য করতে হত শিক্ষকদের বকা, গালি এমনকি শারীরিক শাস্তি। সবকিছুর পরও লক্ষী নিয়মিত স্কুলে আসত। হয়তো সংসারের অভাব-অনটনকে ভুলে থাকতে বা ঘরের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম থেকে নিজেকে বাঁচাতে।
ঈদ উপলক্ষে স্কুল বন্ধ। ঈদের দিন সকালে আমাদের বাড়ির সামনে ভিখারিদের ছোটখাটো জটলা। ঈদের দিন নিয়মিত ভিখারির পাশাপাশি পার্টটাইম ভিখারিরাও সক্রিয় থাকে, সহজে কিছু দান খয়রাত পাওয়ার আশায়। আমার বড় ভাই এদেরকে জাকাত-ফিতরার টাকা দিতেছিল। পাশে দাঁড়িয়ে আমি তাকে সাহায্য করছিলাম। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একটা ভিখারিকে টাকা দিতে গিয়ে তার মুখের দিকে দেখে আমি হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম, সেও একিভাবে আমার দিকে চেয়ে রইল। এভাবে কতক্ষণ কাটলো জানি না। হঠাৎ সে পিছন দিকে ফিরে দৌড় দিল। আমরা ওকে টাকা দেওয়ার সুযোগই পেলাম না। আমি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখলাম সে আমাদের গ্রাম ছেড়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। সেই ভিখারি মেয়েটি আর কেউ নয় আমারই সহপাঠিনী লক্ষী দাশ! এধরনের অপ্রত্যাশিত মুহুর্তের জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিল না। আমি কখনো ভাবতেই পারি নি যে লক্ষী ভিক্ষা করে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। যাই হোক সিদ্ধান্ত নিলাম লক্ষীর ভিক্ষা করার কথা স্কুলে কাউকে বলবো না। সে এমনিতেই বিরাট লজ্জা পেয়েছে।
ঈদের বন্ধের পর স্কুলে গেলাম। লক্ষীকে দেখলাম না কোথাও। সে আজ স্কুলে আসে নি, পরের দিনও আসে নি, তারপরের দিনেও আসে নি। ... ... ... না, সে আর কখনোও স্কুলে আসে নি। সরকারি স্কুলে ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসলে শিক্ষকরা যা বেতন পায়, না আসলেও তাই পায়। সে কারণেই হ্য়তো শিক্ষকরা লক্ষীর খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে নি। লক্ষী হ্য়তো ভেবেছিল ক্লাসে সবাই আমার থেকে জানবে সে ভিক্ষা করে। কেউ ওর সাথে মিশবে না, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে। এ লজ্জায় স্কুলের সবচেয়ে নিয়মিত ছাত্রী লক্ষী আর কোনদিন স্কুলে আসে নি। ঈদের দিন কাকতালীয়ভাবে ওর সাথে আমার দেখা না হলে হ্য়তো সব অভাব-অনটন সহ্য করে সে আরও কয়েকটি ক্লাস এগিয়ে যেত। আমার কারণে তা আর হল না। বঞ্চিত হল একটি মেয়ে শিক্ষার আলো থেকে। এটা মনে হলে আমার এখনও কষ্ট হ্য়, নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়।
অভাবের তাড়নায়, বাঁচার তাগিদে একজন ভিখারি হয়েও লক্ষী দাশের যতটুকু লজ্জাবোধ ছিল, আমাদের দেশের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ-আমলাদের তার বিন্দুমাত্র নেই। এইসব নির্লজ্জ-বেহায়ারা কোটি টাকার মালিক হয়েও দুর্নীতি করে, দুর্নীতির দায়ে শাস্তি পায়, আবার জনতার সামনে আসে, ভোট চাই এবং দেশপ্রেমের কথা বলে।
১৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য
আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই
দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।
সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন
রম্য : মদ্যপান !
প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=
এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।
বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই
শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন