somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্মোহ দৃষ্টিতে শেখ হাসিনার ভারতসফরের ফিরিস্তি

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খালেদা ম্যাডামের শিক্ষাগতযোগ্যতা নিয়ে যতই হাসাহাসি করিনা কেন, উনার বচনখানি কিন্তু বাণী-চিরন্তণী স্থান পাবার যোগ্যতা রাখে।"পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়"।তথাস্তু আমিও নিরপেক্ষ নয়।তবে নিরপেক্ষ না হয়েও নির্মোহ বিশ্লষণ করা বোধকরি সম্ভব।

মোহগ্রস্ততা ভিন্ন জিনিস যেটা এখন এবং শেখ হাসিনা'র ভারত সফরের পুর্ব থেকেই দেখা যাচ্ছে আওয়ামী এবং আওয়ামী বিরোধী শিবিরে; ব্লগ, দৈনিক পত্রিকা, টকশো সবখানেই।

সফরের ফিরিস্তি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করা যাক।

ভারত চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পাবে।এটাতে আমি সত্যিকারভাবে দোষের কিছু দেখিনা।রেজিওনাল কানেকটিভিটি সময়ের বাস্তবতা।চট্রগ্রাম এবং মংলাবন্দরে যদি সেই ধারনক্ষমতা থাকে, তাহলে ব্যবহারের অনুমতি দিতে বাধা কোথায়।বরং রাজস্ব দিয়ে বাংলাদেশই লাভবান হবে।তবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রকৃতি যেহেতু জটিল তাই শুধু রাজস্বই শেষ কথা নয়। বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার বিনিময়ে আমরা কি পাচ্ছি!

বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দাবী নেপাল-ভুটান'কে চিকেন'স নেক দিয়ে ট্রানজিট প্রদান।যৌক্তিক দাবী অবশ্যই।ল্যান্ডলকড এই দুটি দেশের বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পেলে তা হবে সত্যকারের রিজিওনাল কানেকটিভি।সেখানে অগ্রগতি কতদুর!দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে হাসিনা সরকারের ডিপ্লোম্যাটিক ডেবাকল এবং ভারতের অনুদার নীতিতে এক্ষেত্রে অর্জন সামন্যই।

"নেপাল ও ভুটানকে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসতে দেওয়ায় ভারত সম্মত হলেও বাংলাদেশি পণ্যবাহী গাড়ি নেপাল ও ভুটানে যেতে একই সুবিধা পাবে কি না, তা স্পষ্ট নয়"।

আবার নেপাল ও ভুটানে পণ্যবাহী যান সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ২০০ মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করতে দিতে ভারতের সম্মতিকে এই সুবিধার কার্যকারিতা সীমিত করে ফেলবে বলে মনে করেন তিনি।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মনজুর আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতরে কোন স্থান পর্যন্ত নেপাল-ভুটানের গাড়ি যাবে, তা নির্ধারণের এখতিয়ার এককভাবে বাংলাদেশের। এখানে ভারত কোনো সীমা টেনে দিতে পারে না। আমাদের পক্ষে যাঁরা এ বিষয়ে সমঝোতা করেছেন, তাঁরা এ ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেননি।’
সুত্র

পারস্পরিক দরকষাকষির এই ক্ষেত্রে এই পর্যায়ে " উই আর লুজারস, ইনডিয়ানস আর গেইনারস"।ভবিষ্যতে হাসিনা সরকার যদি সত্যিকারের "রিজিওনাল কানেকটিভটি" প্রতিষ্ঠা করতে পারে, সেটার জন্য আগাম অভিনন্দন।

ভারত আখাউড়া থেকে ত্রিপুরা সীমান্ত পর্যন্ত নিজ খরচে ১৪ কিমিরেলপথ নির্মান করবে।ঢাকা-কলকাতা ট্রেনসার্ভিস নামকাওয়াস্তে হলে বলবৎ; ত্রিপুরা থেকে পশ্চিমবংগ সরাসরি ট্রেন যাবে।এতে ত্রিপুরা থেকে কলকাতা যাওয়ার পথ প্রায় ৯০০ কিমি কমবে।ভালো কথা!যেহেতু এই দীর্ঘপথ যেতে মানুষ (হিউম্যান বিইং) সবচে কষ্ট সহ্য করতে হয়।সুতরাং এইটা প্যাসেনজার ট্রেনসার্ভিস হওয়া উচিত ছিলো কিন্তু সেটা হবে শুধু পন্যপরিবহনের জন্য।যেখানে উত্তরপূর্ব ভারতে হাজারও বাধাও সত্বেও বাংলাদেশি পন্য কম্পটিটিভ এবং সম্ভাবনাও উজ্জল, সেখানে এইভাবে "নিজের পায়ের নিজেই কুড়াল মারা'র অর্থ কি!

ভারত তার উত্তর-পুর্ব অংশের বাজার পুরোপুরি কন্ট্রোল করতে চায়।ভালো কথা তোমরা করো সেজন্য চট্টগ্রাম বন্দরে একসেস দেওয়া হবে, কিন্তু এই রেলওয়ে ট্রানজিট কেন!

বাংলাদেশি ডিপ্লোম্যাটরা বোধহয় ঘাস চিবোয় নইলে এই সাধারণ ব্যাপারটা তাদের মাথায় আসবে না কেন।এগেইন "বাংলাদেশ লুজেজ, ইন্ডিয়া উইনস"।

ভারত বাংলাদেশের ৪৭টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছে।এতে আমাদের সরকার বগল বাজাচ্চেন।শালার বলদরা এইটা জানেনা ভারতে বাংলাদেশের রপ্তাণীর প্রধান বাধা শুল্ক নয়, অশুল্ক বাধা(নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার)।বাংলাদেশি পণ্য ভারতে ঢুকতে হলে ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টেষ্টিং ইনস্টিউইট থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়, যে ছাড়পত্র কখনোই আসেনা, যদিওবা আসে ততদিনে সেইসব পণ্যের অবস্থা কাহিল।

"কিন্তু অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা না গেলে অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন তিনি।
মনজুর আহমেদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে অশুল্ক বাধা অপসারণের বিষয়টি উঠে এলেও তা আরও জোরালো হওয়া প্রয়োজন ছিল।"

উচিত ছিলো বি,এস,টি,আই আর আই,এস,টি,আই কোলাবোরেশন।যাতে বাংলাদেশি পণ্য বাংলাদেশেই ছাড়পত্র পায়।কিন্তু পেলাম কি !

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আগেই থেকেই লুজারস ছিলো নতুন করে হওয়ার কিছু নাই।তবে
সাউথব্লক যে কিভাবে তাদের ঘোল খাওয়াইলো সেটা যদি বাংলাদেশি ডিপ্লোম্যাটরা বুঝে থাকেন তাইলেই সেইটাই বড় এক প্রাপ্তি।

ভারত সরকার বাংলাদেশকে ১০০কোটি ডলারের লাইন ক্রেডিট দিবে রেইলওয়ে খাতের আধুনিকীকরনের জন্য।এইটা অবশ্য ভালো যদি এতেও ইচ্ছাকৃতভাবে "ঘাটের মরা'য় পরিণত করা রেলওয়েকে সরকার পুনর্যৌবন দিতে পারে।তবে সরকার চাইলে এই অর্থ স্থানীয় বাজার থেকেই যোগাড় করতে পারতো, লোন করার প্রয়োজন ছিলোনা।
বিদেশী ঋণ জিনিসটাকে আমি বরাবরই ভয় পাই।কারন বিদেশি ঋণ খালি খালি আসেনা, আসে হাজার রকম বায়না সহকারে।অমুক (নভিশ)ভারতীয় কোম্পানীকে সাবকন্ট্রাক্ট দিতে হবে(যাতে তারা হাত পাকায়), তমুক দেশমুখ কিংবা পান্ডেকে কনসাল্টেন্ট নিয়োগ দিতে হবে যার বেতন হবে মাসে ১৫-২০ হাজার ইউ,এস,ডি। এইটা অবশ্য শুধু ভারত করেনা, যেদেশ ঋণ দেয় তারাই এইসব আবদার(শর্ত) জুড়ে দেয় সাথে।

আর কিছু অনেক বিষয় টিপাইমুখ, তিস্তার পানিবন্টন সব লিখতে ইচ্ছা করতেছে না...।অন্যকেউ লিখবে।

তবে শেখ হাসিনা সরকার আপাতত বাংলাদেশকে ভারতীয় মিডিয়া এবং মিডলক্লাসের বদান্যতায় প্রাপ্ত জংগী রাষ্ট্রের তকমা থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন।এইটা অবশ্য বড় প্রাপ্তি।শভিনিস্টিক ভারতীয় মিডিয়া অবশ্য কতদিন ঠান্ডা থাকে তা বলার উপায় নেই।

আচ্ছা আরেকটি প্রাপ্তি আছে শেখ হাসিনা "ইন্দিরা গান্ধি" পুরস্কার।আকালের দিনে এইটাই বা কম কি!
৪৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×