somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলা : মৌসুমি দেশপ্রেম এবং প্রতিবাদের সুস্থ ভাষা

১৭ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পেপসির বিজ্ঞাপন একটি সবিশেষ ইত্রামী, আমাকে আহত করেছে। কেউ কেউ বলেছেন, ঐটা পেপসির বানানো এড না, কোন ক্রেজি ভারতীয়ের কাজ। এডটা পেপসি করুক আর পেপসির নামে করুক, কিছু আসে যায় না, পয়েন্টটা হল, আমাদের হেয় করে এড বানাইয়া ভারতীয়রা তাদের একটা অংশের সাইকির পরিচয় দিছে। একই কথা প্রসেনজিতের কমেন্টের ব্যপারে। আমি এর নিন্দা জানাই, ১৯ তারিখে আমরা হারলেও নিন্দা জানাই। অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আসলে আমরাও করি, আফ্রিকানদের অনায়াসে বলি কাল্লু, বাঙালির মুখে শুনেছি আফ্রিকানদের 'চারকোল ব্যাগ' বলতে। এগুলো এত সহজে আমরা আয়ত্ব করেছি যে, এগুলো যে বর্ণবাদ তা মনেও আসে না। ইউরোপীয়ানরা এই বর্ণবাদীতা কৌশলে করে, আমরা এশিয়রা করি স্থূলভাবে। আমাদের সৌদিতে মিসকিন বলে, পশুর মত করে বাঙালি পিটায় - এটা বর্ণবাদীতা ও তাচ্ছিল্যের ফল। আমি কোন ভারতপ্রেমী না, ভারত বাংলাদেশের সত্যিকারের কোন শুভাকাঙ্খী সেটাও আমি বিশ্বাস করি না। তবে আমরা ভারতের মত বিশাল হলে বাংলাদেশ-আকৃতির ভারতকে তাচ্ছিল্য করতাম না-ই, আমি হলফ করে বলতে পারি না। এইসব তাচ্ছিল্যের কারণ দুইটা, প্রথমটা হল বড়র ক্ষমতার দাপট আর অন্যটা হল ছোটর হীনমন্যতা ও দীনতা। আজ আমরা সিঙাপুর, মালয়েশিয়া হলে ভারতের কেউ আমাদের সাথে ইত্রামী করতে আসত না। আমাদের না আছে কোন গুনের বড়ত্ব, না আছে আত্মমর্যাদাবোধ। আমি হিন্দি চ্যানেল, গান বা মুভি দেখিনা, এটা আমার আত্মমর্যাদাবোধ। ভারতের সবকিছুতে অবসেসড একটা জাতির এইসব মৌসুমি দেশপ্রেম আমার ভাল লাগে না, এটা আমার কাছে আলগা প্রেম মনে হয়। আর প্রতিবাদের ভাষাটাও শেখা দরকার। পেপসির পাল্টা ক্লিপ যে গুলা বানাইসে সেগুলা বেশিরভাগ ইত্রামীমুক্ত। আমি পাকিস্তানি জামশেদ বা ভারতীয় প্রসেনজিতের উত্তরে কতিপয়ের যে নির্জলা গালাগাল দেখেছি, তাতে লজ্জিত। তারা তো বিদেশি, কদিন আগে মাহমুদুর রহমান মান্নার ফেসবুকে যে গালাগালের বহর দেখেছি তাতে আমি নিজের বাঙালিত্বের কাছে খুবই লজ্জিত। সমাজ, রাজনীতি, ব্লগ, ফেসবুক – সবখানে যে অসুস্থ সমালোচনার ধারা চালু করেছি, তা থেকে আমাদের জাতি হিসাবে বেড়িয়ে আসতে হবে।

তবে খেলা হল খেলা। জিততে পারলে অবশ্যই ভাল লাগে। একটা ভাল খেলে হারলেও মেনে নিতে আপত্তি নাই। কিন্তু বাংলাদেশ দল যেটা করে, শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মনোভাব রাখে না, গা ছেড়ে দেয়, অতীতের মত সেটা হলে বিলাই বলে টিটকারি করলে দোষ দেখি না। ইংল্যান্ডের সাথে জিতে পলাশির যুদ্ধের প্রতিশোধ আমরা নেই নাই, আর নিউজিল্যান্ডের সাথে হেরে স্বাধীনতার সূর্য ডুবে যায় নাই। হার-জিত সত্ত্বেও দুটাতেই বাংলাদেশ ভাল খেলেছে, জেতার ইচ্ছা নিয়ে খেলেছে, সেটাই চাই। ১৯ মার্চে ভারতের সাথে শেষ ট্রেঞ্চে লড়াই করার ইচ্ছাটাকেই আমি মূল্যায়ন করি, সেটা বিজয় হলে আমার আনন্দ ধরবে না, কিন্তু হেরে গেলে স্বাধীনতার সাথে, মার্চ মাসের সাথে তার কোন যোগ নাই। প্রসেনজিত বা পেপসির উত্তর মাঠেই দেয়া উত্তম পন্থা। তার মানে এই না, হেরে গেলে আমাদের স্বাধীনতা বা স্বাধীনতার চেতনা জলে যাবে। যদি আবারও গা ছেড়ে দিয়ে খেলে তবে আবারও দুঃখ পাব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা একটা খেলা, শুধু খেলা। আমি এই খেলার মাঠের বাইরে যেতে চাই না।

ব্লগে ও কিছু ফেসবুক পেজে কুতসিত গালাগাল দেখছি, এসবেরও নিন্দা জানাই। আমাদের সুস্থ প্রতিবাদের ভাষা শিখতে হবে। আর খেলোয়ারদের দ্বারা মাঠে খেলে জয় আশা করতে পারি, কিন্তু কেউ কেউ বাংলাদেশ টিম দিয়া যুদ্ধজয় করতে চায়, এই বালখিল্যতা, এই মৌসুমি দেশপ্রেম পরিহার করতে হবে। আমার পয়েন্টটা পেপসির এডের চেয়ে আমাদের বেসামাল আবেগী ব্লগ ও স্ট্যাটাস নিয়ে। তাই আবেগ সামলে...

সার কথা, আমাদের ভারতপ্রেম থেকে বেড়িয়ে আত্মমর্যাদাবোধে দীক্ষিত হতে হবে আর প্রতিবাদের সুস্থ ভাষা শিখতে হবে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×