বেলা উঠিবার আগেই আজ ঘুন ভাঙ্গিয়া গেলো মন্টুর্। প্রত্যেকদিন এমনটা হয়না তাহার্। হাজার বার কেনো লক্ষ কোটিবার চেষ্টা করিয়াও সূর্য উঠিবার আগে উঠিতেই পারেনা। মন্টু, সুন্দরপুরের দরিদ্র এক চাষার ঘরে যাহার জন্ম।বয়স বারো কি পনের তাহা মন্টুকে সামনাসামনি দেখিয়া কেউই ঠাওর করিতে পারিবেনা। তাহার চেহারার মাঝে না আছে তারুণ্য না আছে লাবণ্য!! চাষার ছেলের আবার কিসের লাবণ্য তারুণ্য? ??:-) .
.
গ্রামের নামটা সুন্দরপুর হইলে কি হবে এই গ্রামের ত্রিসীমানার মাঝে সৌন্দর্যের বালাই নাই। দূর থেকে দেখলেই যে কেউই বলে দিতে পারে ইহা প্রকৃত পক্ষে কোনো গ্রামই না। ইহা হয়তো কোনো উদ্বাস্তু শিবির!!! এই গ্রামের লোকেরা এমনই দরিদ্র। নুন আনতে যাহাদের পান্তা ফুরায় তাহাদের আবার কিসের নাম লইয়া মাতামাতি? ??
.
আজ সকাল সকাল বিছানা থেকে উঠিয়াই মন্টুর মনে পড়িয়া গেলো শাপলা তুলিবার কথা। আজ কেহ একজন শাপলা তুলিতে আসিবে গ্রামের শেষ কোনে যুগ যুগ ধরিয়া বহমান মন্ডুর বিলে।মন্ডুর বিল!! নামখানা অদ্ভুত মনে হইলেও ইহার নামকরণের ইতিহাস অনেকটা বিষাদের!!
.
সেই সেন যুগের কথা! জমিদার রামলক্ষণের শখ হইলো প্রজাদের সুবিধার জন্য একখানা খাল খনন করিবে। যেই কথা সেই কাজ। খাল কাটিবার জন্য গ্রামের লোকেরা কাধেঁ কাধ মিলাইয়া নামিলো। দিন রাত কষ্ট করিয়া খাল কাটিয়া শেষ করিলো। কিন্তু কিছুতেই খালে পানি জমানো যাইতেছিলোনা।
হঠাৎ এক রাতে রামলক্ষণ স্বপ্নে দেখিলো জলপরী আসিয়া বলিতেছে খালে পানির বদলে রামকে নিজের মন্ডু বির্সজন দিতে হইবে। স্বপ্ন দেখিয়া রাম প্রজাদের কল্যাণে.নিজের মন্ডু বিসর্জন দিয়া দিলো আর সেই থেকে খালের নাম হইয়া গেলো মন্ডুর খাল। দিন বাড়িবার সাথে খালখানা বিলে পরিনত হইয়া গেলো, দখল করিয়া নিলো বিশাল এলাকা। .
মন্ডুর বিলে প্রতিদিন শাপলা তুলিতে আসে টিংকু, রোটন, সাথে মাঝে মাঝে আসে টিংকুর কিশোরী বোন জোনাকি!!
শ্যামবর্ণ গায়ের রং, মাথাভর্তি কালো চিকচিকে চুল। দূর থেকে কেউ দেখিলে ভাববে নিশ্চয়ই মাথায় তেল দিয়া মাথা চুবিয়ে রাখিয়াছে কিন্তু না। রাতের জোনাকির মতোই উজ্জ্বল তাহার চুল, মুখের হাসি যা দেখিয়া যে কোনো মানুষই পাগল হইতে বাধ্য!!.
.
দ্রুত দরজার ছিপ খানা খুলিয়া, লুঙ্গিটা হাটুতে বাধিয়া একটা মেছওয়াক হাতে লইয়া দাত ঘষিতে ঘষিতে বিলের রাস্তায় পা বাড়াইল মন্টু। সকালের সুর্য খানার মুখ এখনও দেখা যাইতেছেনা। দূরের ঐ সুখ তারাটি এখনো বেশ উজ্জ্বল উজ্জ্বল তারাটি দেখে হঠাৎই মন্টুর মনে গান জাগিয়া উঠে!!
আকাবাকা পথে ঘাসে পা ফেলিতে ফেলিতে মন্টু গলা ছাড়িয়া গাইতে থাকে ……… " আশা ছিলো মনে বন্ধু,
হাটবো তোরি সনে,
আমার মনেই রইলি বন্ধু
উড়াল দিলি কোনে??? """
.
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৪