somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোছনা আমার বোন

২৭ শে মে, ২০০৯ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জম্ম আষাঢ়ী পূর্ণিমায়।

আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন, তার এক কোলে সূর্য, অন্য কোলটা খালি। চাঁদ ঝুলে আছে ঠিক তার মাথার উপর । তিনি বললেন, বাছা তুইও আমার কোলে আয়। সাথে সাথে চাঁদ নেমে আসল তার কোলে।

এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিলেন আমার দাদীমা। তিনি বললেন, বউ
তোর যমজ বাচ্চা হবে। সূর্য হলো ছেলে আর চাঁদ হলো মেয়ে। আমার মা এমন ভাব করলেন, এ আর কি ? আমিও বুঝেছি। নামও ঠিক হলো, ছেলের নাম সুরুজ আর মেয়ের নাম জোছনা। আমার বাড়ী পালানো স্বভাবের বাবা বাড়ী ছাড়ার ধারে না দিয়ে, বউয়ের যত্ন আত্তি মনোযোগ দিলেন। তিনি সুরুজ আর জোছনা নিয়ে নতুন গান বাঁধলেন। সময়ে অসময়ে মাকে গান শুনাতেন। মা বড়ই লজ্জা পেতেন। মা ভালো গান জানতেন।

একটানা তিনদিনের বৃষ্টি। চারদিকে কাদা পানি। বৃষ্টি ঠেলে বাবা গেলেন দাই ডাকতে। ঘরের দাওয়ায় উঠার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি থেমে গেলো। তিনি আমার কান্না শুনতে পেলেন। বাইরে চাঁদের আলোয় ঝলমল করে উঠল পৃথিবী। তিনি কান পেতে রইলেন অন্য শিশুটির কান্না শোনার আশায়।

আমার নাম সুরুজ।
আমার আর কোন ভাই-বোন নেই। আমার বাবা কোন দূরদেশে চলে গেছে কেউ জানে না। হঠাৎ হঠাৎ খবর আসত তাকে এই হাটে ও ঘাটে দেখা গেছে। আর আমার মা অদ্ভুত ঘোরের ভেতর জীবনপাত করে গেলেন। তার অদৃশ্য মেয়েটা ছিলো তার চোখের মনি।

তিনি সারাক্ষন জোছনাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। হয়তো আমাকে ডেকে বলতেন, 'তুই জোছনার সাথে খেলা কর, আমি তরকারীটা দেখে আসি।'
একসময় আমার দাদার বাড়ীর লোকেরা মাকে তার বাপের বাড়ীতে রেখে আসল। শুনেছি তিনি মারার সময় শুধু এই বলতে লাগলেন, 'আমি মারা গেলে জোছনাকে কে দেখবে?'
আমার নানী কাদঁতে কাদঁতে বললেন, 'আমি আছি না? তুই শান্ত হ।'
মা মুখে হাসি নিয়ে মারা গেলেন।

আমার জীবনের আট দশটা সাধারন ঘটনার মতোই বাড়ি ছাড়ি। বাড়ি নামের শব্দটি আমার অনুভূতিতে কোন আবেগীয় প্রকরন হিসেবে হাজির হয়নি। বরঙ, জাগতিক অর্থহীনতারুপেই তাকে দেখেছি।

নানান দেশের নানা পথ ঘুরে কোন এক স্বপ্নকে তাড়া করেছি যেন।

আমার মা বা বাবা কারো কোন ছবি আমার মাথায় আসে না। এক বর্ষার রাতে মন কেমন যেন আকুলি বিকুলি করছিল। কোন ধরনের বৈপরীতে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম সেই ছোট্ট মেয়েটিকে। তখন বুঝতে পারলাম আমার ছোট বোনটি আমার ভেতরই রয়ে গেছে।

আমার মা ক্রমাগত সেই বোধটি আমার ভেতর ঢুকিয়ে গেছেন, তাকে আমি কখনো অতিক্রম করে আসতে পারেনি। কিন্তু পরক্ষনে সবকিছুকে নিস্ফল মনে হয়, যেন অবচেতনে কোন সংস্কারকে নিজের সাথে বেঁধে রাখছি। আবার ভাবি জীবন মানে কি? যুক্তি সর্বস্বতা, নৈব্যক্তিকতা এসব কি? যুক্তি নিজে দাড়িয়ে থাকে অনুমানের উপর আর নৈব্যক্তিকতা তো অলীক কল্পনা।

আমার সকল নির্মোহ চেতনা ধ্বসে যায় যেন। ধাবমান পৃথিবীতে কিছু একটা আকঁড়ে ধরতে ইচ্ছে করে। হঠাৎ অনেকদিন পর মায়ের মুখটা ভেসে উঠে। বাবার বৈরাগ্যের অর্থহীনতা তাকে অলীক সন্তানের ভেতর ঠেলে দেয়। মা তার বাস্তব জগতকে এমনভাবে দলিত করেছেন, যেখানে আমি যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো।

জানি না জোছনা নামের মেয়েটি আমার ভেতর কেমন করে বসত করে। সে আমার সহদোরা। আমার আমিত্বের প্লাবনটাতে ক্রমশ সে স্থান করে নেয়। আমার মায়ের মতো কি? আমার ভেতর স্নেহের যে আকুলতা আছে তা টের পেতে থাকি। জোছনা আমার সাথে বলে। গান শুনায়। তার গলা অবিকল মায়ের মতো। জানি না এটা কেমন করে বললাম। জীবনের কাঙ্খাগুলো স্পষ্ট উঠে। হাঁ জীবন মানে মায়া, আর কি!

এক সময় বাবাও যেন আমার ভেতর গেড়ে বসে। অদ্ভুতভাবে ঘটনা চক্রে তার সাথে আমার দেখা হয়। তাকে জিজ্ঞেস করি সংসারে আপনার কে কে আছে? তিনি বলেন, 'জোছনা নামের একটা মেয়ে আছে।' আমি বিস্ময় নিয়ে তার দিকে তাকাই। তিনি কিছুই টের পান না। তার হাতের বাদ্য যন্ত্রটা বাজাতে থাকেন।

তখন আমিও পুরোপুরি নিমজ্জিত হই জোছনা নামক বিভ্রান্তিতে। যার থেকে আমার মা, বাবা কেউ মুক্তি পাননি। বুঝলাম, সংসার নামক অদ্ভুত জিনিসটি কিছু না কিছুতে ভর দিয়ে টিকে থাকে। জোছনা নামক অলীক মেয়েটি আমাদের অদৃশ্য সংসারকে টিকিয়ে রেখেছে।

আমি জোছনার হাতটা ধরে বলি, চল এই আজব দুনিয়াটা ঘুরে দেখি।
জোছনা শুধু মাথা নাড়ায়।


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:২১
২৫টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×