somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বনসাই

২২ শে জুন, ২০০৯ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বনসাই যুগপৎ হতাশা, ক্রোধ ও ঘৃনা নিয়ে আসে।

ছোট্ট একটা কুঠুরীতে বন্দী প্রাণ ভোমরা। শিল্পের নামে সৌন্দর্যের নামে বাণিজ্যের নামে এই আজব লীলা। ...৩৭ বছর বয়সী বনসাইয়ের দাম ৫৫ লাখ টাকা। একটা বৃক্ষ শিশুকে বছরের পর বছর অগুনিত অত্যাচার করে তার নাম দিই শিল্প। জানি না এই শিল্পের কি মূল্য। শিল্পের মূল্য এতোই টুনকো.... অপর একটি প্রাণের অস্তিত্ব , বিকাশকে ধ্বংস করে দেয়। শিল্পের জন্য শিল্প- এর কোন মূল্যই হতে পারে না। সে অর্থহীন। মানুষের এই বর্বরতার মধ্য সে তার জঘন্য প্রবৃত্তিগুলোকে চরিতার্থ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আমার মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় পড়া 'চীন জাপানের শিশু' লেখাটি। মেয়েদের পায়ের আকার ছোট হলেই নাকি সৌন্দর্য, তাই লোহার জুতো পড়িয়ে রাখা হতো। অনেক আগে রহস্যপত্রিকায় কোন এক উপজাতি গোষ্টির উপর একটা লেখায় পড়েছিলাম, তারা মেয়েদের গলা লোহার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দিত। একসময় গলাটা লম্বা হয়ে যেতো। এই হলো সৌন্দর্য। এই সকল সৌন্দর্য কলা না নির্যাতন ! যখন আমাদের দেশের শিশুরা উটের জকি হয়ে বাজারে বিক্রি হয় তখন কেন তা আর শিল্প হয়ে উঠে না।

বিকৃতিতে আমাদের পরিবেশ প্রাণ বৈচিত্র্য থমকে গেছে। ঝরাগ্রস্থ পৃথিবীতে আমরা হাজারো শংকা নিয়ে বসবাস করছি। ধর্মগ্রন্থ অথবা মানবিক জ্ঞান সবাই মানুষকে বসায় শ্রেষ্টত্বের আসনে। এই মানুষ কোন মানুষ আমরা কি খেয়াল রাখি। মনে হয় রাখি না। ব্যক্তি স্বাধীনতা বা আপন বুঝাপড়ার শূন্যতায় জগত ভেসে যায়- তখন মানুষ নিজেও হয়ে অন্য কোন নিয়তির হাতে গড়া পুতুল। সে জানে না আপনাকে চিনতে তার নিজের ভূমিকা কি।

আমাদের কোন আচরনই অনর্থক নয়। তা কোন না কোন ফল উৎপাদন করে এবঙ বিচারযোগ্য। ভালো বা মন্দ সকল কিছু চর্চার বিষয়। আপনি যখন একটা প্রানের উপর অত্যাচার করেন, একই সাথে সে অত্যাচারের চর্চা করছেন, যা মানুষের উপরও করতে পারেন। ভালো বা মন্দ যেকোন আচরন অভ্যাসের ভেতর এমন স্থানে পৌছে, যখন আপনাকে ভালো বা মন্দ কাছের ইচ্ছা প্রকাশ করতে হবে না। আপনার অবচেতনই সে কাজটির দিকে নিয়ে যাবে।

কিছু গল্প শোনা যাক..

হযরত মুসা (আঃ) একটা জলাশয়ের পাশ দিয়ে যেতে খেয়াল করলেন, জলাশয়ের পানি কালো বর্ণ ধারন করেছে। তিনি আল্লাহর কাছে এর কারন জানতে চাইলে আসমান থেকে উত্তর আসল, " এই জলাশয়ের পানি দ্বারা একজন পাপিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে ধৌত করেছে।"
মুসা অবাক হয়ে বললেন," একলোকের কারনে সকলের ক্ষতি।"
এটি তার কাছে নায্য মনে হলো না।
মুসা (আঃ) গাছের চায়ায় ঘুমাচ্ছিলেন, হঠাৎ পিপড়ের কামড়ে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি দেখলেন এক ঝাক পিপড়ে তার সামনে দিয়ে যাচ্ছে। রেগে গিয়ে তিনি পুরো দলটাকে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেললেন। তখন আসমান থেকে বলা হলো," হে মুসা, তোমাকে একটা পিপড়ে কামড়িয়েছে আর তুমি সবগুলোকে মেরে ফেললে।"

সম্ভবত হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রাঃ)'র কাহিনী।
তিনি একবার কোথা যেন যাচ্ছিলেন। অনেক পথ চলার পর খেয়াল করলেন তার জামার মধ্যে একটা পিপড়ে আটকে আছে।
তিনি যেদিক হতে এসেছিলেন সেদিকে হাটা শুরু করলেন। কয়েক ক্রোশ আসার পর দেখতে পেলেন পিপড়ের সারি, তখন তিনি পিপড়েটাকে সেই সারিতে রেখে পুনরায় গন্তব্যে রওয়ানা দিলেন।

কোন এক সাধুর গল্প।
তিনি দেখতে পেলেন একটা বৃশ্চিক যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে পানি জলাশয়। অর্থ্যাৎ বৃশ্চিকটার বিপদ। তিনি বৃশ্চিকটাকে হাতে নিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলেন। কিন্তু বৃশ্চিকটা তার হাতে কামড় দিলো, আবার আগের পথে রওয়ানা দিলো। তিনি আবার একই কাজ করলেন।
তার শিষ্য বলল," আপনাকে কাপড় দেয়া সত্ত্বেও আপনি আবার একই কাজ করলেন।"
সাধু বললেন," বৃশ্চিকের ধর্ম কামড় দেয়া। সে তার ধর্ম পালন করেছে, আমি আমারটা।"

এবার নিজের কথা বলি।
আমার একটা নদী ছিলো।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা যেকোন নাম দিতে পারেন।
আপনারা শুধু বৃক্ষের বনসাই দেখেছেন।
আমি নদীকে বনসাই বানাচ্ছি।
চমৎকার সব শিল্পকর্ম।

"আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে..."
শিশুটি আমাকে বলল," নদী কি?"
" বাবা তোকে তো আসল নদী দেখাতে পারব না। নদীর বনসাই দেখ।"
শিশুটি নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে অপলক তাকিয়ে রইল।
সে বিস্মিত।
আমি জানি সকল কিছু কেড়ে নিলেও শৈশবের এই মুগ্ধতা, বিস্ময় কেউ কেড়ে নিতে পারে না। আপন নিয়মেই সে জগতে প্রাণ প্রতিষ্টা করে।




সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:৩০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×