somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাগুরায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিন-চারদিন আগের কথা; টিভিতে একটা নিউজ দেখে নজড় কাড়লো। মাগুরার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক নেতা দুর্বৃত্তদের দ্বারা নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় জনতা বলছে, জমির বিরোধের জের ধরে বেআইনীভাবে জমি দখলের জন্য কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে। পরদিন রাজধানীতে জাতীয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে ব্যানার-ফেস্টুনসহ প্রতিবাদী কন্ঠস্বরে বলা হচ্ছে- “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার”, “সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও”, ইত্যাদি একঘেয়ে/অযৌক্তিক বুলি। কেন বলছি একঘেয়ে/অযৌক্তিক, সেটা ব্যাখা করছি।
ধরা যাক, মোল্লা-হুজুরদের কেউ মসজিদে মিলাদের সময় টাকার ভাগাভাগি নিয়ে হাতাহাতিতে নিহত হল; বা মাজারের শিন্নি নিয়ে কাড়াকাড়ির সময় পায়ের চাপায় মারা গেল কোন মাজারভক্ত। পরদিন সব দাড়ি-টুপিওয়ালারা যদি মানববন্ধন বা প্রতিবাদী মিছিল করে; এবং বলে- “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার”, “সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও” ইত্যাদি, তখন তা কি অযাচিত, অনাকাঙ্খিত হবে? তারাও তো একটা সম্প্রদায়, তারাও তো একটা ধর্মের, তারাও এই রাষ্ট্রের। তাদের কোন স্বজনকে খুন করাও কি তখন সাম্প্রদায়িক আচরণ হবে না? উলটো তাদের মিছিলে তো পুলিশ-টুলিশ গিয়ে পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে “চরম সাম্প্রদায়িক আচরণ” করবে!

প্রথমত, “হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ” নামে-কাজে চরম সাম্প্রদায়িক একটা সংগঠন! তাদের মুখে এই বুলি মানায় না! তদুপরি, এই খুনটা হয়েছে জমি বেদখলের কারণে। আমার জানামতে এই উপমহাদেশে, অন্তত এই বাংলাদেশে, “সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ” শব্দটা যতবার উচ্চারিত হয়েছে, তার বেশির ভাগই হয়েছে ভূমিদস্যুদের কল্যাণে। ভূমিদস্যুরা কোন ধর্ম বা সম্প্রদায়কে টার্গেট করে তাদের অপরাধ করে না; তারা সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী বা দাঙ্গাকারী নয়, তারা “সাম্প্রদায়িক ভেজালের” আড়ালে অপেক্ষাকৃত দুর্বল-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়। এরকম না যে, এসব ফৌজদারী অপরাধীদের একমাত্র “ভিকটিম” সংখ্যালঘুরা, বরং সংখ্যাগুরু অসীম-সংখ্যক দরিদ্র জনগণ এদের অপকর্মের শিকার হয়। তাছাড়া, যেকোন ভূমি জবরদখলের সময় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব “ভিকটিম”রা-ই একসাথে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করে।
তাহলে, কেন এই নাটক? কেন অন্য ধর্ম, অন্য সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করা? এটা কি শুধুই “ইনফেরিয়রিটি কম্পলেক্স”-এর কারণে?

আর “অসাম্প্রদায়িকতা” মানে “কোন সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে সুবিধা না দেওয়া, কোন সম্প্রদায়কে বঞ্চিত না করা, সব সম্প্রদায়কে সমান গুরুত্ব দেওয়া!” সেই বিবেচনায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের লোকেরাই তো সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, যেই ভূমিদস্যুদের আক্রমণে সব ধর্মের সাধারণ লোকেরাই জমিজমা হারায় তাদের বিরুদ্ধে “হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের” ব্যানারে প্রতিবাদ করাই তো “চরম সাম্প্রদায়িক আচরণ”। যদি প্রতিবাদ করতেই হয়, নতুন সংগঠন খুলতে হবে- “আমরা ভূমিদস্যুদের শিকার”! এভাবে কারণে-অকারণে সংখ্যালঘুদের একটা সাজানো প্রতিবাদ-দাবিদাওয়া দেখিয়ে কারা, কি প্রমাণ করতে চায়? বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির যে আবহমান ধারা, তা’ কারা নষ্ট করতে চায়? এটা ভাবনার বিষয়।
আমি মাগুরার মানুষ না। অনেক দূরে থাকি। টিভি-পত্রিকা-ইন্টারনেটে যা পড়লাম-দেখলাম, তাতে বুঝা গেল জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে; সেরকম প্রায়ই চিটাঙ্গেও হয়।
যদি এরকম হতো যে- "হিন্দু হওয়ার অপরাধে বা অমুসলিম হওয়াতেই" এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তবে এর প্রতিবাদ "হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ"-এর ব্যানারে করলে সেটা খুবই প্রাসঙ্গিক ও স্বাভাবিক হতো।
কিন্তু, আমাদের দেশে যেকোন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরেই যেরকম টিভি-পত্রিকা-ইন্টারনেটে বলা হয় "মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীর মৃত্যু"; ঠিক তেমনিই অমুসলিম কেউ অপরাধী/সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিহত হলেই সেটা হয়ে যায় দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের দোষ, সাম্প্রদায়িকতার দোষ!
কেন? এটা কি অযৌক্তিক নয়? এর ফলে কি দেশের ভিন্ন-ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে না? এই অনাকাঙ্খিত বিভেদ কি পরবর্তীতে দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে না।

যদি আমি ভুল কিছু বলে থাকি, পুরো মাগুরাবাসীকে নিয়ে এসে আমার গালে-গালে থাপ্পড় মেরে যাইয়েন। দাওয়াত রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×