৫ টি ভুয়া মৌলিক অধিকারের কথা বাল্যকাল থেকে বই-এ পড়ে এসেছি।
খাদ্য, পরনের কাপড়, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা- এগুলো শুধু ব্যবসার মাধ্যম, অনৈতিক লাভের উৎস, সুযোগসন্ধানীর গোপন হাতিয়ার।
যেখানে দেশের মানুষের এই ৫টি ক্ষেত্রেই বৈষম্য দূর করা যায় নি, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের বা স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা উঠানোকে ধান্দাবাজী ছাড়া আর কিছু মনে হয় না!
গলাকাটা শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, ভাড়াবাসা বা ক্লিনিকের মত বেসরকারি স্কুল/কলেজ/ভার্সিটি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য আতঙ্ক আর নিপীড়নের সমার্থক শব্দ। বাকি ৪ সেক্টর নিয়ে আজ বলতে আসিনি। আজ বলব শিক্ষা নিয়ে।
ব্যবসার নামে খোলা অগণিত প্রাইভেট ভার্সিটি ও মেডিক্যালগুলো অনুমতি দেওয়ার আগে কোন নির্দিষ্ট বেতন (ছাত্রছাত্রীদের ফিশ) কাঠামো বানানো হয়নি। দেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের নিরীখে প্রায় একশরও বেশি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।
খুব সুচিন্তিতভাবে পাবলিক ও প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি সুবিধাভোগী মহল সামাজিক, শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক পার্থক্য/দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। ওই ফায়দালোভীরা একই সাথে দুইধরণের ভার্সিটির সাথেই সম্পর্কিত; এটা আমরা সবাই জানি ও বুঝি। এই দূরত্বগুলি সৃষ্টির মাধ্যমে তারা দুই পক্ষের বিভিন্ন অধিকারকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে, দুই পক্ষ থেকে দুইরকম ফায়দা লুটে যাচ্ছে।
সম্প্রতি আরোপিত ভ্যাট বাতিলের দাবিতে দেশের (মূলত শুধু ঢাকার) প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো (বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে কোন আওয়াজ নাই!) থেকে বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু, কেন তারা সম্মিলিতভাবে একটি নিয়ন্ত্রিত/একীভূত বেতন, শিক্ষাপদ্ধতি, সিলেবাস ও পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করবেনা?
কিভাবে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি উচ্চশিক্ষার বেতন এত বেশি হয়? অথচ, বিশ্বের কোন ভার্সিটি রেঙ্কিং-এ সুবিধাজনক কোন অবস্থানেই নেই এই ভার্সিটিগুলো। সিংহভাগ প্রাইভেটের ডিগ্রিকে দেশে-বিদেশে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়না বললেই চলে। তার উপরে, দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি, কাজের অভাব, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির এই সময়ে কিভাবে, কোন আশায় অভিভাবকেরা এত অর্থ খরচ করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন সন্তানদের?
সবক্ষেত্রে "দুষ্ট চক্রের" কবলে পরেছে এই দেশ। আমলারা বলছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে বলেই বেতন বাড়ানো হচ্ছে। আর দেশের সবরকম ছোটবড় ব্যবসায়ীরা গত কয়েকমাস ধরে তাদের পণ্য/সেবার মূল্য বাড়ানোর কারণ হিসেবে সাধারণ মানুষকে বলছে- "চিন্তা কি? বেতন তো বাড়ছে! আমাদেরও আয় বাড়তে হবে তো!"
- বাড়িওয়ালার উপর বসানো ট্যাক্স সে দ্বিগুণ হারে আদায় করে ভাড়াটিয়া থেকে!
- বেসরকারি ক্লিনিকের উপর বসানো কর তারা তিনগুণ হারে আদায় করে রোগী থেকে।
- রেস্টুরেন্টের সারচার্জ আর ভ্যাটের নামে গলাকাটা মূল্যে খাবার খায় ভোক্তারা!
- সিএনজি চালিত যানবাহনের মালিক-ড্রাইভারেরা বর্ধিত দরের ৫/৬ গুণ বেশি আদায় করে সাধারণ যাত্রীদের থেকে!
- প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও এই মাইর খাওয়া থেকে বাদ যাবে কেন?
মানুষের অধিকার আর আবেগকে পুঁজি করে এভাবেই কি এদেশের স্বল্পসংখ্যক চালবাজেরা চাল চেলে যাবেন!?
#উদোরপিন্ডিবুধোরঘাড়ে
সিএনজি-চালিত যানবাহনে নতুন দর ঠিক করে দিল সরকার।
অটোরিকশা প্রতি দুই কিমি ৪০ টাকা।
চট্টগ্রামে গত বাজেটের পর থেকে ২০ মিটার যেতেও সিএনজিতে ৭০ টাকার নিচে কেউ এক পয়সাও নেয় না!
যেখানে সামান্য সিএনজি মালিক-চালকদের লাভের লোভে সরকার/প্রশাসন লাগাম দিতে পারে না, সেখানে কিভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ভ্যাটের প্রকোপ থেকে তারা লক্ষ শিক্ষার্থীকে বাঁচাবে?
বলা হচ্ছে, কর দিবে ভার্সিটি অথরিটি, স্টুডেন্টরা না! কিন্তু ইতিমধ্যেই ছাত্ররাই দিয়ে এসেছে। আর, কোথায় প্রাইভেটের লাগামহীন শিক্ষাখরচকে কমাবে- তা না; উল্টা তাদেরকে ছাত্রদের বেতন বাড়ানোর উছিলা দিয়ে দেওয়া হল!
এ কেমন অত্যাচার!!!
#অবাক হব না, যদি ক্ষমতাসীন দলের কারো পক্ষ থেকে বলা হয়-
"এসব বিএনপি-জামাতের সরকার পতনের ষড়যন্ত্র"!
তাদেরকে বলা দরকার, ক্ষমতায় যদি বুশ-ক্লিন্টনও থাকত, তাও প্রাপ্য অধিকারের আন্দোলন থেকে কেউ বঞ্চিতদের হটাতে পারত না!
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের যৌক্তিক দাবি ও প্রাপ্য অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
আন্দোলন-অবরোধ মানেই খারাপ কিছু না। আবার, নিজেকে বাঁচানোর নামে লুকিয়ে থাকলে হবে না; ঘুরেফিরে সবাই সিস্টেমের অংশ, সিস্টেমের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমাদেরই।
ভুলে গেলে চলবে না- সংবিধান অনুযায়ী, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




