somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অনন্যা নাসরিন অবন্তি
আমি একজন মুক্তমনা ,বিজ্ঞান মনষ্ক ,যুক্তিবাদী।সব কিছুকে আমি বিজ্ঞানে ও যুক্তির আলোকে বিচার বিশ্লেষন করে সিদ্ধান্ত নিই ।প্রচলিত ধর্ম মতে আমি বিশ্বাসী নই,আমার দৃষ্টিতে কথিত স্রষ্টা এবং ধর্ম দুটোই মানুষ তার নিজের দুর্বলতাকে,অজ্ঞতাকে আড়াল করার জন্যই তৈরি করেছ

চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা কেন বাড়বেনা?

০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধির জন্য চাকরি প্রত্যাশী সহ সচেতন নাগরীক সমাজ আন্দোলন করে যাচ্ছে। তারা দাবি করে আসছে চাকরিতে প্রবেশের বর্তমান বয়স সীমা ১৮-৩০ কে ১৮-৩৫ উন্নীত করনের জন্য এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে অনেক সংসদ সদস্যও ।জাতীয় সংসদে এ বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে বেশ কয়েকবার। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ ,বিভিন্ন গনমাধ্যমে এর যৌক্তিকতা ও উপযোগীতা তুলে ধরা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।প্রথম দিকে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কথাবার্তাই পবিবেশিত হতো।কিন্তু সব কথা,সব জল্পনা কল্পনাকে বায়ে ঠেলে দিয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘুষনা দিলেন চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হবেনা। এর কারন হিসাবে তিনি দেখালেন-

১। সেশনজট কমে গেছে।অর্থাৎ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সঠিক সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এবং যথা সময়ে ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে।
২।২২-২৩ বছরে মাস্টার্স শেষ করে ৩০ এর আগে ৭-৮ বছর সময় পাওয়া যাবে চাকরিতে প্রবেশের জন্য।
৩। যার নয়ে হয়না, তার নব্বইএ ও হয়না অর্থাৎ ৩০ বছরের মধ্যে যারা চাকরিতে প্রবেশ করতে না পারবে তার সারা জিবন চেষ্টা করেও পারবে না।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে আমার মত অনেকেই হয়তো একমত হবেন না।
প্রথমত সেশনজট নেই বা কমে গেছে সেটা পুরোপুরি সঠিক নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৩-০৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা ২০০৪ সালে কিন্তু মাস্টার্সের রেজাল্ট পাবলিস্ট হয় ২০১১ এর শেষের দিকে।০৪-০৫ সেশানের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা ০৯ এ কিন্তু এই রেজাল্ট পাবলিষ্ট হয় ২০১৩ এ। ২০১৩ সালের মাস্টার্স পরীক্ষা ২০১৬ সালে নেওয়া হচ্ছে।এভাবে দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীর জিবন থেকে ৩-৪ বছর অবলীলায় হারিয়ে যায়। বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেশনজট নিরসনের উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন হচ্ছেনা খুব একটা।
সেশনজট মুক্ত হলেও একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ করতে বয়স দাড়ায় ২২-২৩ বছর। অতপর তার হাতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় থাকে ৭-৮ বছর। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তব প্রেক্ষাপট তো আর এতটা সহজ সরল নয়।সরকারের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে পরিপুর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। যার মামা কাকার জোর বেশি সেই চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে অগ্রাধীকার পায়।এ ছাড়া প্রতি বছর যে পরিমান শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে পড়াশোনার পর্ব শেষ করে চাকরি প্রাপ্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে পরিমান কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছেনা। বেকারত্বের অভিষাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রতি বছর অনেক স্টুডেন্ট আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।এর দায় কি সরকার তথা রাষ্ট্র নেবে?

সারা পৃথিবীর মত এদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গড় আয়ু যখন ৪৫ বছর ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর, গড় আয়ু যখন ৫০ বছর হল তখন ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত হল। আর এখন গড় আয়ু ৭১ বছর। তবুও কি বয়স বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না? মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও উপজাতীয় কোটার প্রার্থীদের বয়স ৩২ বছর। এ ছাড়া জুডিসিয়াল ও ডাক্তারদের ৩২ বছর এবং নার্সদের ৩৬ বছর। তাহলে মেধাবীদের কেন ৩০ বছরের বেশি নয়? মেধাবীরা কি দেশের বোঝা?

আমরা যদি উন্নত বিশ্বের বিশ্বের দিকে তাকাই তাহলে চিত্রটা একটু ভিন্ন দেখা যায়।আমাদের দেশের তুলনায় তারা অনেক বেশি বয়সে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পায়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০,এ ছাড়া বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০।

* শ্রীলংকায় ৪৫,

* ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫,

* ইতালিতে ৩৫-৩৮,

* ফ্রান্সে ৪০,

* ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিম্ন ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত।

* আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যেকোনো বয়সে আবেদন করা যায়।

* রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন।

* যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও স্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর।

* কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে, তবে ৬৫ বছরের উর্ধে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনিম্ন ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়।

আমরা আজ বিশ্বায়নের যুগে বসবাস করছি। নিজেদের সব কিছুকে উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করছি। যে সকল বিষয়ে আমরা পিছিয়ে আছি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের এগিয়ে নেয়ার কথা ভাবছি। অনেক ক্ষেত্রে আমরাও অন্যান্য দেশের অনুস্বরনীয় হচ্ছি।তাহলে চাকরি প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের পিছুটান কিসের?
চাকরি হবে নিজ যোগ্যতাবলে। জিবনের যে বয়সে যদি যোগ্যতার প্রমান দেয়া যায় তাহলে চাকরিতে প্রবেশের জন্য বয়স কোন বাঁধা হওয়ার কথা নয়। এই সিস্টেমটিই বর্তমান অগ্রসরমান পৃথিবীর জন্য নেতিবাচক ।
এছাড়া আমরা তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ।আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অনেক কিছু করতে হবে।আমাদের মেধাশক্তির সবটুকুর যথাযত ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু দেশের আইন যদি প্রতিবন্ধক হয় তাহলে এটা কি দেশের জন্যই ক্ষতিকর নয়?

প্রতি বছর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে বেকারত্বের অভিষাপ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।এদের সুষ্ঠু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে।উপরন্তু ২০১১সালে ২৬ ডিসেম্বর এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে চাকরিরতদের বয়স বৃদ্ধি করে দিল ।এতে করে ঐ বছর যে সরক কর্মকর্তা অবসরে যেত তাদের স্থলে নিন্ম পদস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারিরা পদায়ন পেত এবং ধারাবাহিক ভাবে বেসিক লবেলে পদশূন্য হতো ফলে নতুন প্রার্থী নিয়োগ দেয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হতো। কিন্তু এই চাকরিকালিন বয়স সীমা বাড়ানোর ফলে সে সুযোগ থেকে বনঞ্চিত হচ্ছে ।
প্রশ্ন হচ্ছে চাকরি থেকে অবসরের সীমা যদি বাড়ানোর প্রয়োজন পরে,তাহলে চাকরিতে প্রবেশের সীমা কেন বাড়বেনা? কি যুক্তি আছে এর পেছনে?এটা কি সামঞ্জস্যহীন একটা বেপার হয়ে গেলনা?তার উপর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাচ্ছিল্য সহকারে বলে দিলেন যার নয়ে হয়না তার নব্বইএও হয়না। এই ক্রিটিজমের মানে কি? প্রতি বছর বেকারদের মিছিল যেভাবে বেড়ে চলছে এর কোন সুরাহা কি তিনি করতে পেরেছেন? চাকরিতে প্রবেশের সময় লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে মেধাহীনদের জায়গা হচ্ছে বিভিন্ন দপ্তরে।এতে করে মেধা থাকা সত্যেও মেধাবীদের চাকরির বয়স চলে যায় ভাইবার বারান্দায় কড়া নাড়তে নাড়তে।এটা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন না?তবে কেন এই ক্রিটিজম?
আজকের এই লেখার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয় আবেদন বেকারদের মিছিলটা খাট করে আনুন।বেকারত্বের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিন লক্ষ লক্ষ যুবককে। বিশ্বায়নের এই যুগে সমগ্র বিশ্বের সাথে সমান তালে পা ফেলে চলার সুযোগ করে দিন আমাদের।
চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বাড়ান।আমরা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বরন করব আপনাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×