প্রচলিত মিলাদ-কিয়ামের আদি কথা : ঈদে মিলাদুন্নাবী পালনের যেৌক্তিকতা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
একথা সর্বজনবিদিত যে আখেরি নবী মুহাম্মাদ স. এর প্রতি ভালোবাসা, গভীর মহব্বত রাখা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রিয় নবীজি সা. এর জন্মলগ্ন থেকে তিরোধানের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তার পবিত্র জীবনাদর্শ I কর্মকান্ডের আলোচনা I পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তা অনুসরণ করা মহান আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির বড় মাধ্যম এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতI বটে।
তবে উক্ত ইবাদত আমাদের অবশ্যই সে পদ্ধতিতে করতে হবে যে পদ্ধতি স্বংয় নবী করিম সা. তার সাহাবাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। অত:পর সাহাবায়ে কেরাম শিখিয়েছেন তাবেঈনগণকে এবং তাবেঈনগণ পরবর্তীদের শিখিয়ে গেছেন। সে পদ্ধতি হচ্ছে দিন ক্ষণ I সময় নির্ধারণ এবং আনুষ্ঠানিকতার বাধ্যবাধকতা ব্যতিরেকে রাসূল সা. এর জীবনী আলোচনা করা এবং দরুদ শরিফ পাঠ করা। মনগড়া বা ভিত্তিহীন কোনো তরীকায় করলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না। এজন্য রাসূল সা.এর জীবনাদর্শ, আহকামে দ্বীন, শরঈ বিধি বিধান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি।
সুতরাং রাসূল সা. এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা সুয়াব-বরকতের বিষয়। এ দ্বীনি কাজ শরঈ সীমারেখা উপেক্ষা করে আমাদের দেশের কিছু ভণ্ড মুর্খ লোকেরা নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট দিবসের সংঙ্গে নির্দিষ্ট করে মীলাদ শরিফ নামে সম্মিলিত সুরে গদবাধা কিছু পাঠের অনুষ্ঠান I কিয়ামের রীতি চালু করেছে। কুরআন-হাদিসে এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন I তাবে তাঈনদের যুগে খুজে পাIয়া যায় না। অথচ সর্ব স্বীকৃত সত্য হলো তারাই ছিলেন প্রকৃত নবীপ্রেমি খাটি আশেকে রাসূল এবং তার আদর্শের পরিপূর্ণ অনুসারি ধারক-বাহক I বাস্তব নমুনা।
প্রচলিত এ মিলাদ-কিয়ামের উদ্ভব ঘটে ৬০৪ হিজরি সনে। ইরাকের মাসুল শহরের গর্ভনর আবু সাঈদ মুজাফফর কাকরি I তার দরবারি আলেম আবু খাত্তাব উমর ইবনে দিহইয়া। এ দুজন মিলে এর প্রচলন ঘটায়। এরা উভয়েই দ্বীনের ব্যাপারে খুবই উদাসিন এবং ফাসিক প্রকৃতির লোক ছিল। পরবর্তীতে অজ্ঞতা, মুর্খতা I জাহালতের অন্ধকারে নিমজ্জিত শ্রেণীর লোকদের মাধ্যমে আরো অনেক কুসংস্কার, শরিয়ত বিরোধ বিশ্বাস I কার্যাবলী এতে সংযোজিত হতে থাকে। যার প্রায় সব কিছুই শরিয়তের মেৌলিক প্রামাণ্য সব দলিলেরই পরিপন্থী।
এ সকল কারণে প্রচলিত মিলাদ কিয়াম না জায়েজ I বিদাতের অন্তর্ভুক্ত বলেই সকল হক্কানি উলামায়ে কেরাম একবাক্যে ফতোয়া দিয়ে থাকেন।
[দেখুন : আদ দুররুল মুখতার ৬/৫২, ফাতহুল কাদীর ১/৩০৪]
এবার দ্বিতীয় বিষয়ে আসা যাক। এক্ষেত্রেI সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনগণই হলেন আমাদের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। ঈদে মিলাদুনন্নাবী যদি উম্মাহের পালনীয় দিন হয়ে থাকে_ তাহলে অবশ্যই আবু বকর রা., উমর রা. উসামান রা. I আলী রা. পালন করে থাকবেন। কারণ তারাই ছিলেন রাসূলের সবচেয়ে প্রিয়ভাজন সাথী। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে উক্ত চার খলীফার খেলাফতের ৩০ বছরের সোনালী যুগে কেউ কোনো দিন ঈদে মিলাদুন্নাবী নামে কোনো অনুষ্ঠান করেছেন। এমনকি পরবর্তী তাবেঈন, তাবে তাঈন I আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের কেউ এর পক্ষে কোনো মতামত দিয়েছেন। তাহলে যে দিবসটি বিগত ১৪০০ বছরে কেউ ঘটা করে পালন করেনি। ১৪০০ বছর পরে তা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হIয়া_ মায়ের চেয়ে মাশির দরদ বেশি এমন হয়ে গেল না?
পাঠক! আপনিই বলুন_ সমাজের চোখে সেই ছেলে কেমন বলে বিবেচিত হবে, যে তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে আনন্দ ফূর্তি করে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ভোজ সভা করে? কারণ, নবীজি সা. ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছে_ এবিষয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতো বিরোধ রয়েছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকদের মতে নবীজি সা. এর জন্ম তারিখ ছিল_ ৯,১১,১২,১৩। সেমতে ১২ তারিখকেই জন্ম তারিখ নিশ্চিত ধরা যায় না। পক্ষান্তরে নবীজি সা. এর মৃত্যু তারিখ ১২ রবিউল আউয়াল ছিল এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
কিছুদিন পূর্বে আমার এক ব্লগার ভাই তথাকথিত আশেকে রাসূল I ভণ্ড রাজারবাগিতের বিরোদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন_ বলুন তো, ঈদে মিলাদুন্নাবী শব্দটি কোন ভাষার শব্দ I এর অর্থ কী? তখন দেখলাম ভণ্ডরা সব লেন্জা গুটিয়ে দেৌড়।
মূলত : এদিনটি নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে এক দশক থেকে। ইতিপূর্বে সরকারী I জাতীয়ভাবে এমন ঘটা করে দিবসটি পালন হয়নি। বলা যায় এদিনটিকে জীতিয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে বেদ’য়াতী পত্রিকার মালিক ইকিলাবের বাহাউদ্দীনের ভূমিকা ছিল মুখ্য।তিনিই বায়তুল মোকাররমে ভন্ড খতীব নিয়োগ I প্রকাশ্যে বেদাতী কাজের পৃষ্টপোষকতা করে যাচ্চেছন। তাই তথাকথিত আশেকে রাসূলদের লম্ফজম্ফ দেখে আমার বারবার মনে পড়েছে রাসূল সা. এর সে বাণীর কথা_ হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. ইরশাদ করেন_ শেষ জামানায় দাজ্জাল-কাযযাবদের (প্রতারক-মিথ্যুক)আর্ভিবাব ঘটবে, তারা তোমাদের নিকট এমন এমন অভিনব বিষয় নিয়ে আসবে যা তোমরা I তোমাদের পূর্বসুরিগণ কখনো শুননি। অতএব, সে সময় তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকেI তোমাদের থেকে দূরে রাখবে।যেনো তোমরা পথভ্রষ্ট না হI এবং তারাI তোমাদেরকে ভ্রষ্ট করতে না পারে। মুসলিম
পরিশেষে, সকল বন্ধুদেরকে সঠিক পথ বুঝে তা অনুসরণের আহব্বান জানাই। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাউফিক দান করুন। আমিন।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকারের বিয়াইন

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?
কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।
রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।
রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন
দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।