মহাবিশ্বে প্রানের সূচনা হয়েছে জৈব যৌগের অগনিত লিভিং কোডের (Living Code) মাধ্যমে। আর লিভিং কোড সূচনা হয়েছিল জৈব যৌগ, অজৈব যৌগ, মহাকর্ষ বল, সূর্যের তাপ ইত্যাদির মাধ্যমে।
জৈব যৌগের লিভিং কোড কি?
"যদি একটুকরো জৈব যৌগ, পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত জৈব ও অজৈব যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে নিজের ভৌত ধর্ম সামান্য পরিবর্তন করে পরিবেশ অনুযায়ী নিজের আকারের পরিবর্তন করতে পারে, তবে জৈব যৌগটি টিকে থাকার জন্য যে সকল রাসায়নিক ধর্ম পরিবর্তন করে সেগুলোকে ওই জৈব যৌগের লিভিং কোড (Living Code) বলে।"
#মূল বক্তব্যঃ পৃথিবীর সৃষ্টির সূচনায় পৃথিবীতে কোন জৈব যৌগ ছিল না। ছিল অসংখ্য প্রকার অজৈব যৌগ। পরে যখন পৃথিবীর অবস্থা জৈব যৌগ সৃষ্টির জন্য অনুকুলে আসল, তখন অজৈব যৌগের বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ তৈরি হল। এ সকল জৈব যৌগের মধ্যে এমন কিছু জৈব যৌগ তৈরি হল, যাদের মধ্যে 'লিভিং কোড' ধর্ম বিদ্যমান ছিল।
আমরা এই জৈব যৌগগুলোর নাম দেব 'লিভিং কোডেড জৈব যৌগ' বা 'Living Coded Organic (LCO)'। আর এসকল জৈব যৌগ অসংখ্য লিভিং কোড ধর্ম প্রাপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে প্রানীর বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয়েছিল।
যেসকল LCO এর মাধ্যমে প্রানের সূচনা হয়েছিল, প্রথম দিকে তাদের মধ্যে মাত্র দুটি লিভিং কোড ধর্ম বিদ্যমান ছিল। যার একটি হল বিভিন্ন রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করে আকার বৃদ্ধি করা, অপরটি হল, নিজের ধর্ম ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা করা।
এই লিভিং কোডেড যৌগগুলো বাতাশ, পানি ইত্যাদির প্রবাহের সাথে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াত। এদের গায়ে এমন একটি আস্তরণ তৈরি হয়েছিল, যার কারনে এসকল জৈব যৌগ স্বাধারন কোন রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করত না। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে এমন সব রাসায়নিক পদার্থ ছিল, সূর্যের আলোর অনুউপস্থিতে বিক্রিয়া করতে বাধ্য হত আর নিজের আকার বৃদ্ধি করত। সম্ভবত এটাই ছিল LCO এর প্রথম লিভিং কোড ধর্ম। আর দ্বিতীয় লিভিং কোড ধর্ম হল LCO এর উপরে সূর্যের আলোর মাধ্যমে স্বাধারন রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করে প্রটেকশন কোট তৈরি হওয়া যাতে কোন স্বাধারন রাসায়নিক তার সাথে বিক্রিয়া না করে।
তৃতীয় লিভিং কোড ধর্মটি হল বিভাজন। যখল LCO খন্ডের আকার অনেক বড় হয়ে যেত, তখন অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে LCO যৌগটি দুইভাবে বিভক্ত হয়ে যেত ; কিন্তু তাদের ধর্ম অপরিবর্তিত থাকত। আর এটাই সম্ভবত LCO এর তৃতীয় লিভিংকোড।
এই তিন প্রকার লিভিং কোডের মাধ্যমে জৈব যৌগগুলো তাদের ধর্ম অপরিবর্তিত রেখে হাজার হাজার বছর পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রান ছিল না; কিন্তু প্রানের কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন, ১।এরা প্রানীদের মত প্রতিকুল পরিবেশ থেকে নিজের ধর্ম অপরিবর্তিত রাখতে নিজেদের গায়ের উপর প্রটেকশন কোট তৈরি করতে পারত। আর প্রটেকশন কোট তৈরী হত স্বাধারনত বাতাশে ভেসে বেড়ানো কিছু রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে। রাসায়নিক পদার্থগুলো যখন LCO এর সংস্পর্শে আসত, তখন LCO এর সাথে উপরিভাগে বিক্রিয়া করে এই প্রটেকশন কোটগুলো তৈরী করত। ফলে বাতাশে ভেসে বেড়ানো অন্য স্বাধারন রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করত না।
২। কিন্তু LCO এর নিচের দিক ভূমির সাথে লেগে থাকার কারনে বাতাশে ভেসে বেড়ানো রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করতে পারত না। ফলে ভূমির সাথে লেগে থাকা অংশে কোন প্রটেকশন কোট তৈরী হতে পারত না। ভূমিতে কিছু কিছু জৈব যৌগ বিরাজ করত যাদের ধর্ম LCO খন্ডের কাছাকাছি। সে সকল জৈব যৌগ LCO এর নিচের অংশের সাহায্যে বিক্রিয়া করত। ফলে LCO এর আকার আস্তে আস্তে বেড়ে যেত। LCO ছিল খুব নরম, তাই আকার খুব বেশি বেড়ে গেলেই অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে তা ভেংগে দুই টুকরা হয়ে যেত। আর এই ধর্মটা হল LCO এর (৩।)বিভাজন ধর্ম। LCO এর বৈশিষ্টের সাথে বর্তমান প্রানীদের অনেক মিল আছে। যেমন, LCO প্রটেকশন কোট তৈরি করে নিজের ধর্ম অপরিবর্তিত রাখার জন্য আত্মরক্ষা করতে পারত। বিভিন্ন কেমিক্যালের সাথে বিক্রিয়া করে নিজের আকার বৃদ্ধি করতে পারত। এবং আকার বেশি বড় হলে অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে নিজেকে বিভক্ত করতে পারত।
প্রানের এই সকল বৈশিষ্ট্য থাকা স্বত্বেও সে সকল LCO প্রানী ছিল না; বরং তারা ছিল জড় বস্তু মাত্র, যাদের মধ্যে সামান্য কিছু প্রান বৈশিষ্ট্য ছিল। এবং যা তৈরি হয়েছিল লিভিংকোড ধর্মের মাধ্যমে। এই তিনটি লিভিং কোডের মাধ্যমে জৈব যৌগগুলো পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারত। হাজার হাজার বছর টিকে থাকার পর, সেই সকল জৈব যৌগ এমন কিছু রাসায়নিক বৈশিষ্ট প্রাপ্ত হয়েছিল যার মাধ্যমে LCO এর তিনটি Living Code ধর্ম নিয়ন্ত্রিত হত। এর ফলে প্রটেকশন কোটগুলো আরো উন্নত হল, কিছু অগ্রহনযোগ্য কেমিক্যাল গৃহিত হতে লাগল এবং জৈব যৌগগুলো দ্রুত অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে বিভাজিত হতে লাগল। আর এই ধর্মটাই হল LCO এর চতুর্থ লিভিংকোড। কিন্তু আগের তিনটি লিভিংকোডের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। LCO তে চারটি লিভিংকোড তৈরী হওয়ার কারনে, প্রানীদের সাথে এদের বৈশিষ্ঠের মিল আরো অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু তাকে প্রানী বলা যায় না। পরিপূর্ন প্রানের বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হতে আরো অনেকগুলো লিভিংকোড দরকার ছিল। হাজার হাজার বছর পরে, সেই সকল LCO পদার্থগুলো এমন কিছু লিভিংকোড প্রাপ্ত হল, যার ফলে তাদের অভ্যন্তরে অক্সিজেন ব্যাবহৃত হতে শুরু হল। অক্সিজেনের সঠিক ব্যবহার হল ঐ সকল LCO এর আরো একটি লিভিংকোড ধর্ম। এর ফলে LCO এর বৈশিষ্ট্য বর্তমান প্রানীর সাথে বহুগুন মিলে যেতে লাগল। এভাবে কোটি কোটি বছর ধরে Living Coded Organicগুলো লক্ষ লক্ষ বার নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী লিভিংকোডগুলো পরিবর্তন, যোজন ও বিয়োজন করে বর্তমান প্রানের বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয়েছে। যাকে আমরা প্রানী বলে চিনি। আর এই প্রানীগুলো জৈব যৌগের হাজার হাজার উন্নত লিভিংকোডের সমন্বয় ছাড়া আর কিছুই নয়। (সংক্ষেপিত)
abujakaria:2009

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



