স্বপ্ন বিজ্ঞান নিয়ে শুরুর দিকের গবেষনা ছিল ধুসর। গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারব বলে মনেই হয়নি তখন। স্বপ্নের জ্যামিতিগুলো অসংখ্যবার একেছি আর মুছেছি। এখন মনে হচ্ছে আসল রহস্যের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এখন সময়, প্রকৃত স্বপ্ন রহস্য সবার কাছে তুলে ধরা উপযুক্ত ব্যাক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা আসলে কিভাবে ব্যাক্ষা করা উচিৎ আমার কাছে এখনও অনেকটা অস্পষ্ট মনে হচ্ছে।
২০১৩ থেকে আমার গবেষনার গুরুত্বপূর্ন ধাপের শুভসূচনা ঘটেছিল। তবে ২০১৪ - ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়টা ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই সময়টাতে অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় আবিষ্কার করতে পেরেছি। তবে আবিষ্কারগুলোর মধ্যে যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ন, যা নিউরো বিজ্ঞানীদের চিন্তাধারাকে অন্য ধারায় নিয়ে যেতে পারে, সেগুলো আপাদত প্রকাশ করতে চাচ্ছিনা। আপাদত স্বপ্ন বিজ্ঞান নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
আমার গবেষনা শুরু হয়েছিল স্বপ্ন নিয়ে। মানুষ কেন এবং কিভাবে স্বপ্ন দেখে, তার প্রকৃত বিজ্ঞান রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আমার গবেষনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার ব্যাখ্যা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কার্যকলাপের উপর। তাই মস্তিষ্কের কার্যকলাপের বিজ্ঞান সম্মত কৌশল নিয়ে গবেষনা করতে হয়। যার ব্যাখ্যা জীবন রহস্য পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
যাই হোক, মস্তিস্কের কার্যকৌশল আর জীবন রহস্য আপাদত এড়িয়ে যাচ্ছি। আপাদত স্বপ্নের প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করছি। স্বপ্নের সংজ্ঞা আর স্বপ্ন সাহিত্য নিয়ে না আউড়িয়ে সরাসরি স্বপ্ন বিজ্ঞানের দিকে অগ্রসর হতে থাকি। তার আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া যাক।
মানুষিক অনুভূতিঃ প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্কে সর্বদা অনুভূতি কাজ করতে থাকে যার মাধ্যমে ব্যাক্তি নিয়ন্ত্রিত হয়। একে ব্যক্তির মানুষিক অনুভূতি বলে। মানুষিক অনুভূতি সবসময় ব্যাক্তির কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে। কোন ব্যাক্তি কোন কাজ কিভাবে করবে কিংবা কেন করবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির মানুষিক অনুভুতির উপর। এই মানুষিক অনুভুতির আরেক নাম হল বুদ্ধি মত্তা। একেক ব্যক্তির মানুষিক অনুভুতি বা বুদ্ধিমত্তা একেক রকম হয়। কারো মানুষিক অনুভূতি বা বুদ্ধিমত্তা অন্য কারো সাথে মিলবে না। বিষয়টা একটা উদাহরনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
ধরুন একজন লোক রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। কিছু লোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, গল্প করছে। হঠাৎ দেখা গেলে কোন কারনে লোকটি হোচড় খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল। ধরুন লোকটি তেমন ব্যাথা পেল না। সে উঠে দাঁড়িয়ে আবার হাটতে শুরু করল। ঠিক সেই মূহুর্তে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো কি করবে লোকটাকে পড়ে যেতে দেখে। নিশ্চয় তখন সবার মানুষিক অনুভুতি একরকম থাকবে না। ওই দৃশ্য দেখার পর কেউ হাসবে মজা পেয়ে আবার কেউ আফসোস করবে এই ভেবে যে, ইশ লোক টা ব্যাথা পেল কিনা। আবার এক দল হাসবেও না আবার আফসোসও করবে না। হয়ত কেউ কেউ বলবে লোকটা কানা নাকি, দেখে পথ চলতে পারে না!
এভাবে প্রতিটা ঘটনার পরে ব্যাক্তির মনে এক ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। একে বলা হয় মানুষিক অনূভুতি। মানুষিক অনুভূতি কখনও কখনও ব্যাক্তির বুদ্ধিমত্তাকে প্রকাশ করে।
প্রতিটি মানূষিক অনুভূতি আবার দুই প্রকার। ১। ইতিবাচক মানুষিক অনুভূতি। ও ২। নেতিবাচক মানুষিক অনুভুতি।
১। ইতিবাচক মানুষিক অনুভুতিঃ যে মানুষিক অনুভূতির কারনে ব্যক্তি মনে প্রশান্তি লাভ করে, সেই মানুষিক অনুভুতিকে ইতিবাচক মানুষিক অনুভুতি বলে। যেমন উপরের উদাহরনে যারা লোকটির হোচড় খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছে, ওই মূহুর্তে তাদের মনে ইতিবাচক মানুষিক অবস্থা কাজ করছিল।
২। নেতিবাচক মানুষিক অবস্থাঃ বিপরীতে যারা ওই ব্যাক্তির পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আফসোস করছিল, তাদের মধ্যে ওই মূহুর্তে নেতিবাচক মানুষিক অবস্থা করছিল। যে মানুষিক অবস্থার কারনে কোন ব্যক্তির মানুষিক অবস্থার অবনতি ঘটে, তাকে নেতিবাচক মানুষিক অবস্থা বলে।
এই দুই ধরনের মানুষিক অবস্থা ছাড়াও আরো এক ধরনের মানুষিক অবস্থা রয়েছে যা নেতিবাচক নয় আবার ইতিবাচকও নয়। এধরনের মানুষিক অবস্থাকে মধ্যবর্তী মানুষিক অবস্থা বলা যেতে পারে। যদি কোন মূহুর্তে কোন ব্যাক্তির মানুষিক অবস্থা ইতিবাচক ও নেতিবাচক না হয় তখন তাকে মধ্যবর্তী মানুষিক অবস্থা বলে। মধ্যবর্তী মানুষিক অবস্থাকে ব্যাক্তির আবেগহীন মূহুর্তও বলা যেতে পারে।
যাই হোক, এখানে তিন ধরনের মানুষিক অবস্থা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলাম।
এখন দেখা যাক, এই তিন ধরনের মানুষিক অবস্থার সাথে স্বপ্নের কি সম্পর্ক রয়েছে। এই তিন ধরনের মানুষিক অবস্থা স্বপ্নের মধ্যেও সমানভাবে সক্রিয় থাকে। আর তার উপর ভিত্তি করেই স্বপ্নকে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। ব্যাক্তির মানুষিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে স্বপ্নকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়।
১। ইতিবাচক স্বপ্ন
২।নেতিবাচক স্বপ্ন
ও
৩। মধ্যবর্তী স্বপ্ন।
যে স্বপ্ন দেখার ফলে ব্যক্তির মধ্যে মানুষিক প্রশান্তি কাজ করতে থাকে তাকে ইতিবাচক স্বপ্ন বলা যায়।
কিন্তু যে স্বপ্ন দেখার ফলে ওই মুহুর্তে ব্যাক্তির মনে বিষাধ সৃষ্টি হয় তাকে বলা চলে নেতিবাচক স্বপ্ন।
কিন্তু কিছু কিছু স্বপ্ন দেখার ফলে ব্যাক্তি মনে কোন ধরনের অনুভুতি সৃষ্টি হয়না। এ ধরনের স্বপ্ন হল মধ্যবর্তী স্বপ্ন।
মানুষের জীবনে উক্ত তিন প্রকারের স্বপ্নের গুরুত্ব অপরিসীম। কিভাবে এসকল স্বপ্ন মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে- তা জানা যাবে পরবর্তী লেখার মাধ্যমে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩