যাত্রাপথে ভুল বানান
মো. আবুল হোসেন
'আল্লাহ ধর্মশিলদের পচন্দ করেন' ... 'মাল নীজ দায়ীত্বে রাখিবেন' ... 'পকেট সাবদান' ... 'মহীলাদের জন্য' ... 'ভীতরে থুতু ফেলিবেননা' ... 'অবৈধ্য মালের জন্য বাস কত্রীপক্ক দায়ি নয়' ... 'সতোতাই শরবোতকৃষ্ঠ পত' ... 'হিংস্রতা বর্যন করুন' ...।
কথাগুলো কোনো সরকারি বিজ্ঞপ্তি অথবা নির্দেশনামা নয়। আমাদের দেশের যে কোনো বাস আরোহী এমন ধরনের বানানযুক্ত অসংখ্য বাক্যের সাথে নিশ্চয়ই পরিচিত। বাসে উঠলেই চোখে পড়বে কত সুন্দর ধরনের শৈল্পিক হস্তলিপির প্রচারণা। দেখলে চোখ জুড়ায়। কিন্তু বানানগুলির প্রতি লক্ষ্য করলে যেন লজ্জায় মরে যাই।
বাস আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও সুবিধাজনক 'যান'। এদেশে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যিনি জীবনে অন্তত একবারও বাসে চড়েন নি। সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র 'যান' বলতে বাসকেই বুঝায়। ওটা একদিকে যেমন সহজপ্রাপ্য, অপরদিকে তেমন স্বল্প খরচসাপেক্ষ। তাই বাস চলাচলের বিস্তৃতি এখন আর কোনো নির্দিষ্ট এলাকাতে সীমাবদ্ধ নেই, দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।
'বিজ্ঞপ্তি' গণশিক্ষার পর্যায়ভুক্ত। এর মাধ্যমে গোটা সমাজকে সচেতন করা অনেকখানি সহজ। কারণ, প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপনের প্রতি মানুষের একটা স্বাভাবিক মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতা থাকে। শ্রেণিপাঠ্য বই পড়তে যে ছাত্রের অনীহা, সেই ছাত্রকেই দেখা যায় রাস্তার ধারে বিজ্ঞাপনগুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছে। সামান্য অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিও বানান করে করে রাস্তার সাইনবোর্ডগুলি পড়ে। বিজ্ঞাপনের লেখাগুলিকে অনেক সময় তারা মুখস্থ করেও ফেলে। সাথে সাথে বানানোর ভুলগুলিও তাদের মুখস্থ হয়ে যায়। এভাবে ভুলগুলিও তাদের কাছে সত্যে পরিণত হয়। সে ভুল তাদেরকে ধরিয়ে দিতে গেলে তারা তা মানতে চায় না। এই শ্রেণির ব্যক্তিও বাসে কম চড়ে না। বাসে উঠে বেশ কিছুটা কর্মহীন অবসরও পাওয়া যায়। এ সময় তারা বাসের মধ্যকার লেখাগুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে থাকে। ইচ্ছে না থাকলেও পড়তে হয় সময় কাটাবার জন্য।
এ মনস্তাত্ত্বিক সত্যের কথা স্মরণ রেখে আমাদের বাসসমূহের গায়ের লেখাগুলির দিকে তাকালে ভবিষ্যৎ ভেবে শঙ্কিত হতে হয়। এমন একটি বাস খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যার মধ্যকার প্রতিটি নীতিবাক্য বা সতর্কবাণীর একটি বানানও বিকৃত নেই। এর ফলে আমাদের সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণি, বিশেষ করে শিক্ষানবিশ কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করি। এটা আমাদের জাতীয় ক্ষতিও বটে। সুতরাং বিষয়টিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে না দেখে এর প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবিশেষ দৃষ্টি প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




