আলমী শুরা বনাম মাওলানা সাদ দ্বন্দ্বঃ
তাবলীগ জামাতের সাথিরা শুরা ও আমির কেন্দ্র করে নযিরবিহীন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। তাদের পুরনো সিফাত ও গুনাবলী, সহনশীলতা ও ধৈর্যেকে ভূলুন্ঠিত করে আলমী শুরা ও মাওলানা সাদের অনুসারিরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকে। ফলে বাড়তে থাকে বিভক্তি, বিঘ্নিত হয় দাওয়াতী পরিবেশ।
নেযামুদ্দিন মার্কাযে দাঙ্গাঃ
২০১৬ সালে এই বেদনাদায়ক ঘটনা সংঘটিত হয়। মুখোমুখি অবস্থানে থাকার পরে মাওলানা সাআদ অনুসারী গ্রুপ ও আলমী শুরার অনুসারিদের মধ্যে ব্যাপক, রক্তক্ষয়ী ও প্রাণঘাতী দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় পক্ষের অনুসারীরা বিপরীত মতের মুরুব্বিদের লাঞ্চিত করতে কুন্ঠিত হয় নি। তবে এ ঘটনার পরে মাওলানা সাআদের অনুসারী গ্রুপ নেযামুদ্দিনের দখল নিয়ে নেয় এবং আলমী শুরার মুরুব্বিদেরকে মার্কায থেকে বের কড়ে দেওয়া হয়। যারা চলে যান, তাদের মধ্যে প্রবীন বরেন্য আলেম মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা, আলীগরের প্রফেসর সানাউল্লাহ, খালেদ সিদ্দিকী, নাদের আলী, ভাই ফারুক, মুফতি ইয়াকুব, প্রমুখ। এর মধ্যে মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা স্বয়ং সাআদ সাহেবের ওস্তাদ। এই দুঃক্ষজনক ঘটনার পরে পুরা ভারতের তাবলীগ জামাত দুই ভাগ হয়ে যায়, আলমী শুরা স্বতন্ত্রভাবে কাজ শুরু করে । দুনিয়ার বিভিন্ন মহল থেকে মাওলানা সাআদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন অনেকে।
বিশ্বব্যাপী এর প্রভাবঃ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তাবলীগী মার্কাযে-ও বিভক্তি দেখা যায়। কেউ আলমী শুরাতে যোগ দেন, অন্যদিকে কেউ বা মাওলানা সাদের নেতৃত্ত্ব মেনে নেন। তবে বর্তমানে আলমী শুরার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশ্বের বেশিরভাগ প্রভাবশালী (তাবলীগের ক্ষেত্রে) দেশ।
বাংলাদেশের কাকরাইলে মার্কাযে এর প্রভাবঃ
ঢাকার কাকরাইল মার্কাযেও এর প্রভাব পরে। কাকরাইল মার্কাযের শুরা সদস্য ১১ জনের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ৪ জন আলেম (মাওলানা যোবায়ের, মাওলানা মোহাম্মাদ হোসেন, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা রবিউল হক্ব) প্রবলভাবে মাওলানা সাদের একক আমীরত্ত্বের বিরধিতা করেন ও আলমী শুরার পক্ষে যোগ দেন। অধিকাংশ আলেম ওনাদের পক্ষে মত দেন। কিন্তু অপরদিকে প্রভাবশালী শুরা সদস্য ওয়াসিফুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা মাওলানা সাদের আমীরত্ত্ব মেনে নেন।
বাংলাদেশের কাকরাইলে মার্কাযে দাঙ্গাঃ
ফলে কাকরাইল মার্কাযে এ দু গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে দন্দ্ব তৈরি হয় এবং এক পর্যায়ে গত বছরের ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখে দাঙ্গা বাধে। কাকরাইলের অনেক কক্ষ ভাংচুর হয় এবং অনেকে আহত হয়। পুলিশের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে এবং এরপর থেকে কাক্রাইল মার্কাযে সর্বদা পুলিশি প্রহরা নিযুক্ত হয়।
কাক্রাইল মার্কাযের শুরাদের বিশেষ উপদেষ্টা কমিটি গঠনঃ
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, কাকরাইল মসজিদে শান্তি, শৃংখলা ও স্থিতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে, ও কাকরাইলের শুরাদের দেখভাল করার জন্য ও তাদের মধ্যে সম্প্রিতী ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র-মন্ত্রীর বাসায় দেশের বরেন্য ওলামা ও কাকরাইলের শুরাদের বৈঠোকের আলোকে দেশের শীর্ষ ৫ জন আলেম-কে বাংলাদেশের তাবলীগী শুরা ও তাবলীগী জনতার “উপদেষ্টা” করা হয়। এনারা হলেন-মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল মালেক, মাওলানা আশরাফ আলী ও মাওলানা ফরীদুদ্দিন মাসুদ। উদ্দেশ্য হোল- যে কোন কঠিন ও ঝামেলার বিষয়ে তাবলীগের শুরা এনাদের পরামর্শ নিয়ে চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৭