somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এন্টিবায়োটিক নিয়ে লড়াই

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ছড়িয়ে আছে সবখানে



এরা আছে সবখানে। বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে। এক মুঠো মাটিতে আপনি এদের লাখখানেক পাবেনই। ফুটন্ত পানিতেও এরা আছে। এমনকি আপনার-আমার শরীরের ভেতরে-বাহিরেও এরা আছে। দেখতে খুবই ছোট এরা, আমরা খালি চোখে দেখি না। কিন্তু এরাই পৃথিবীর অন্য̈তম নায়ক। এরা হলো অণুজীব, মূলত ব্যাক্টেরিয়া। মাত্র ৫ ভাগ অণুজীব আমাদের জন্য ক্ষতিকর। ক্ষতিকর অণুজীবদের আমরা জীবাণু নামে চিনি। বাকিরা হয় আমাদের উপকার করে,
অথবা তারা নিরপেক্ষ। কিন্তু এই ৫ ভাগ জীবাণুই নানারকম রোগ তৈরি করে মানুষকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে।

শরীর নামের দূর্গে



অণুজীবরা মূলত এককোষী জীব। তারা বাঁচতে চায়, খাদ্য গ্রহণ করে টিকে থাকতে চায়, বংশবৃদ্ধি করতে চায়। এ জন্য তারা সবসময় উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে বেড়ায়। অনেক জীবাণুর কাছেই মানবদেহ এক লোভনীয় জায়গা। শরীরের সুনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা তাদের জন্য আরামদায়ক। এখান থেকে তারা প্রয়োজনীয় খাবারও খুঁজে নিতে পারে। অনেক সময় তারা ক্ষতিও করে, তৈরি করে রোগ। তবে শরীরে অনুপ্রবেশ করা তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। খাবার বা
পানি দিয়ে ঢুকলে পাকস্থলীর অম্লীয় রস তাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। নাকের সূক্ষ্ণ লোম তাদের আটকিয়ে দেয়। এ রকম নানা প্রতিরোধ বর্ম আছে মানবদেহের। আরো ব্যাপার আছে। জীবাণুরা কষ্ট করে শরীরে ঢুকলেও এত সহজে নিস্তার পায় না। রক্তে এক রকমের সৈনিক আছে, যারা হলো এন্টিবডি। একেক ধরণের সৈনিক একেক ধরণের জীবাণুকে চিনে রাখে। যখন কোন অণুপ্রবেশকারী জীবাণুর জন্য নির্দিষ্ট সৈনিক রক্তে থাকে, ঐ সৈনিকেরা জীবাণুকে ঘিরে ফেলে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করে। জীবাণুরাও বসে থাকে না, তারাও বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। অনেক সময় এরকম কোন নির্দিষ্ট সৈনিক রক্তে থাকে না। তখন জীবাণুরা ফাঁকা মাঠে গোল দেয়। শুরু হয় মানবদেহের সাথে যুদ্ধ। যদি এ যুদ্ধে শরীর হেরে যায়, তখনই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তখনই দরকার হয় বাইরের সাহায্য।

উন্নত অস্ত্র চাই



রোগাক্রান্ত দেহকে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইতে বাইরে থেকে যে সাহায্য আমরা নেই তার নাম এন্টিবায়োটিক। এন্টিবায়োটিক কখনো ব্যাক্টেরিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে, কখনো তার বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়, কখনো বা ব্যাক্টেরিয়াকেই মেরে ফেলে। বিভিন্নভাবে এন্টিবায়োটিক কাজ করতে পারে।
ক) ব্যাক্টেরিয়ার কোষের বাইরে একধরণের দেয়াল থাকে। এ দেয়াল ব্যাক্টেরিয়ার জন্য̈ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দেয়াল না থাকলে কোষ ফেটে বা সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। কোন কোন এন্টিবায়োটিক এই দেয়ালই ভেঙে দেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ইট দিয়ে দেয়াল গাঁথতে বাঁধা দেয়। া
খ) ব্যাক্টেরিয়ার বাইরের দেয়ালের পরেই এক ধরনের পর্দা (কোষ ঝিল্লী) থাকে। এ পর্দা ঠিক করে দেয় কোষ হতে বাইরে কি আসবে আর কোষের ভেতরে কি যাবে। কোন কোন এন্টিবায়োটিক এই পর্দার সাধারণ বৈশিষ্ট্য̈ এমন ভাবে পরিবর্তন করে দেয় যে কোষের ভীষণ ক্ষতি হয়।
গ) ব্যক্টেরিয়ার কোষে ডিএনএ-র ভেতরে যাবতীয় তথ্য থাকে। এ তথ্য̈ অনুযায়ী কোষের যাবতীয় কাজ হয়। কোন কোন এন্টিবায়োটিক ডিএনএ কপি করতে এবং এখান হতে তথ্য কাজে লাগাতে বাধা দেয়।
ঘ) যে কোন কোষে যাবতীয় কাজ হয় প্রোটিনের মাধ্যমে। কোন কোন এন্টিবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার প্রোটিন তৈরিতে বাধা দেয়।

বুদ্ধিমান শত্রুরা



এন্টিবায়োটিক সেবনের বেশ কিছু ̧গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম আছে। কোন রোগে এন্টিবায়োটিক দিতে হলে আগে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরী যে কি ধরণের জীবাণু আক্রমণ করেছে, তাদের জন্য কি ধরণের এন্টিবায়োটিক দরকার ইত্যাদি। আবার যে কোন রোগে এন্টিবায়োটিক একটি নির্দিষ্ট সময় (এক সপ্তাহ ইত্যাদি) ধরে সেবন করতে হয়। এ সময়ের আগেই রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সকল জীবাণু নিষ্ক্রিয় নাও হতে পারে। কারণ জীবাণু সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা ধরে ঔষুধ সেবন করতে হয়। তাই এ সময়ের আগেই এন্টিবায়োটিক সেবন ত্যাগ করলে একটি বিচিত্র ব্যাপার ঘটে। তা হলো, যে সকল জীবাণু সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয় নি, তারা ঐ এন্টিবায়োটিককে চিনে ফেলে। তারা তখন নিজেদের দেহে এমন কিছু পরিবর্তন করে ফেলে যে ঐ এন্টিবায়োটিক পরবর্তীতে আর এর উপর কাজ করে না। উন্নত বিশ্বে এক একটি এন্টিবায়োটিক ঔষধ ১০ থেকে ১৫ বছর ব্যবহারের পর জীবাণু ঔষধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের দেশে দুই বছরের মধ্যেও এন্টিবায়োটিক এরকম প্রতিরোধী হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে
জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৮% এন্টিবায়োটিক ঔষধ ডাক্তার কর্তৃক প্রেসক্রিপশন করা। ভুল ঔষধ রোগীর দেহে ঢুকলে শরীরের কিছু কিছু জীবাণু এমনিতেই মরে যায়। বেঁচে থাকা জীবাণুলো ঐ এন্টিবায়োটিকে ববহৃত উপাদান ̧লোকে চিনে নেয়। পরবর্তীতে তারা নিজেদের মত প্রতিরোধ দেয়াল তৈরি করে লুকিয়ে থাকে।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মূত্রনালীর ই. কলাই নামক ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে বহুল ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক ‘এমপিসিলিন’ শতভাগ কার্যকারীতা হারিয়েছে। গনোরিয়া চিকিৎসায় ‘সিপ্রোপ্রক্সাসিন’ এখন আর কাজ করে না। টাইফয়েড জ্বরের সালমনেলা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ‘নেলিডিক্সিক এসিড’ এন্টিবায়োটিক ঔষধের শতকরা ৯০% প্রতিরোধী জীবাণু হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে গবেষণা করে এন্টিবায়োটিকের আরো উন্নতি করা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলো এ দিকে আগ্রহী নয়।

সকল ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। উন্নতবিশ্বে ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর হার চতুর্থ স্থান অধিকার করে আছে। এন্টিবায়োটিকগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হতে পারে। তাই কখনই নিজে নিজে ডাক্তারী করে বিশেষত এন্টিবায়োটিক সেবন করা উচিত নয়। এন্টিবায়োটিকের কোর্স পূরণ করা জরুরী।


তথ্যসূত্র
১. Microbiology An Introduction
২. ‘তিক্ত ঔষধ, রুগ্ন চিকিৎসা ও জিম্মি জনগণ’; নতুন দিগন্ত, জানুয়ারী-মার্চ, ২০০৯
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৬
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×