-"মেয়ে হয়ে জন্মেছিস আর রোজার দিনে বসে বসে ন্যাংটা ছবি আঁকছিস!! তুই তো মেয়ে জাতির কলঙ্ক!! তোর উচিৎ এখন আনটির সাথে পাকঘরে রান্না শেখা। বিয়ের পর আমার জন্য রান্না করবি না??"
-"তোর রান্না আমি করব??? ভালই তো স্বপ্ন দেখিস!! নিজে তো বেকার, বাপ মা এর ঘাড়ে বসে বসে এই বুড়া কালেও খেয়ে যাচ্ছিস। আমার তো তোর মত রাজকপাল নেই, একদিকে চাকরি করি আরেকদিকে পড়াশোনা, সময় কই?? তুই ব্যটা ছেলে হয়ে যে কয়বার পার্লারে যাস, ঐ কবার তো আমি পার্লারের রাস্তাতেও যাইনা!!"
-"তার মানে তুই বিয়ে করবি না!!! মা হবি না??? মা হতে ইচ্ছা করে না?"
-"বিয়ে করা মানে তোর মত আরেকটা আপদের পাল্লায় পরার কথা বলছিস? শোন, তোরা যেমন ১০০টা মেয়ে ঘাঁটিস তারপর বড় গলায় ভাব নিয়ে বলিস 'এদের সাথে প্রেম করাই যায়, বিয়ে আর করা যায় না', আমিও তোকে বলি আজকে, তোদের মত ছেলেদের সাথে দুই সপ্তাহ কি দুই মাস কাটানো যায় বড়জোর। এরপরেই বোরিংং!! রস কষ শেষ। কার যে কত জোর তা তো জানিই!! এই জোর নিয়ে আর কথা বলতে আসিস না। এখন আমি তোর মন রাখার জন্য তোকে মিথ্যা করে বলতে পারব না যে তোর সাথে সারাজীবন থাকতে চাই!!! মাথা খারাপ!!! যাকে আমি খুশি করতে পারলাম না পারলাম না এই নিয়ে ১০০ কথা দিনের মধ্যে শুনতে হয় তাকে নিয়ে তো আমিই খুশি না। বিয়ে তো বহুত দুর কি বাত!!
একটি কুকুর বা একটি বিড়ালের সাথেও সারাজীবন থাকা গেলেও যেতে পারে কিন্তু পুরুষ মানুষ??? তাও বিবাহিত??? তওবা তওবা!!! কি যে বলিস!!!
আর মা হবার কথা বলছিস?? বাচ্চা ৯ মাস পেটের মধ্যে ক্যাঙ্গারুর মত নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারটা আমাকে মোটেও টানে না। আর বের হবার পরে ওটাকে খাওয়ানো, হাগানো সব তো আমারই করা লাগবে। তুই যদি করিস তাহলে তোর পেটেই ধর। শুনেছি পুরুষরাও নাকি বাচ্চা ধরতে পারবে এমন কিছু উপায় বের হচ্ছে। নিয়ে ণে একটা।
-"তুই একটা আজিব বস্তু!! কীসব ভাবিস!!!"
-"আজিব না, বাস্তব, যুক্তিসম্মত কথা ভাবি। আচ্ছা ধর, এরপরেও চিন্তা করে দেখলাম, যদি বিয়ে করেও ফেলি ঐ আপদ কী করবে বলতো?? দিনের বেলা তো আমার বাইরেই কাটবে, রাতে এসে একটু নিজের মত গড়াগড়ি করব তার মধ্যে এসব জ্বালা কার ভাল লাগে?? ধর ছবি আঁকতে বসলাম বা গল্প লিখতে বসলাম। ঐ আপদের চেহারার ছিরি ছাদ যদি ঠিক না থাকে ছবি আর গল্প তো চুলায় উঠবে। জানিস তো ব্যাটা ছেলে একটু বয়স হলেই ফুলে হাতি হতে থাকে। তো ঐ ভুঁড়ি আর চর্বিময় পুরুষ মানুষ দেখলে গল্প কবিতাও ভুঁড়ি আর চর্বির থলথলে দলার মত হবে!! তা কি হতে দেয়া যায় বল। হোক না আমার আঁকা ছবি আর আমার লেখা গল্প চরম অখাদ্য, তারপরেও তো ওদের এই সর্বনাশ করতে দেয়া যায়না কি বলিস??
_"......না তা যায়না...।"
-"সবশেষে তাহলে থাকল কি তোর করার?? আমার তো কিছু করার ইচ্ছা নাই তাই করব না। তোর যেহেতু বিয়ের ইচ্ছা তাই তুইই আমার জন্য কর। কিন্তু কী করবি?? রান্না তো করার দরকার পড়বে না কারন আমি তথাকথিত খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত না। তাহলে রাতের সুখ দেয়া ছাড়া আর কাজ কি তোর?? ওটার জন্যও তো মেশিন কিনতে পাওয়া যায়। দরকার পরলে কিনে নিব। তোকে পালব কেন? আমার ঘর ঝাড়পোঁছ করার জন্য?? নাকি কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য??
-"তাহলে তুই করবি কি??"
-"আমার ইচ্ছা জীবনটা নিজের মত কাটাব। খাব, দাব, ঘুমাব। মাস্টার্স শেষে একটা ভাল চাকরি নিব। বাসায় ফিরে ছবি আঁকব আর গল্প লিখব। এইতো এভাবেই একদিন বুড়ো হয়ে যাব। তখন দেশ বিদেশ ঘুরতে বের হব। যা টাকা কামাব নিজেই খরচ করব। বাকিটা গরীবদের মরার আগে দান করে দিব। শেষ!!"
-"এভাবে তো ছেলেরা ভাবে মাঝে মাঝে। তুই তো মেয়ে তুই এমন ভাববি কেন??"
-"ছেলেরা ভাবে মানে কি ওরা এই 'ভাবনা' কিনে নিয়েছে??? বাপের সম্পত্তি?? বাপের সম্পত্তি না হলে কি সরকারি সম্পত্তি?? তাও না হলে চুপ থাক।"
-"তাহলে আমি তোর জন্য কিছুই না?? কোন মুল্য নেই আমার???"
-"কষ্ট পেতে পারিস শুনে তবে সত্যি কথা বলতে, আমার জীবনে তোর মুল্য একটা টিস্যু পেপার থেকেও কম। ওটা দিয়ে তাও সর্দি সাফ করা যায়। তোর তো ঐ যোগ্যতাও নেই। তোরাও একটা মেয়েকে নিয়ে একই ধরনের চিন্তা করতে পারিস। আমি পারলে এত অবাক হবার কিছু নেই।"
অতপর টিস্যু পেপারটি বাতাসে উড়িয়া গেল।
________________________________________________
বহুকাল আগে জনৈক প্রেম করিতে ইচ্ছুক ছোকছোক করা এক পুরুষের কলঙ্ক কুপুরুষের সাথে আমার কথোপথন এমনি ছিল। তা নিয়েই গল্পটি লেখা। তখন কিছু বলতে পারিনি, বয়স কম ছিল, বুদ্ধিও কম ছিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা ঐ কুপুরুষের প্রতি আমার ভালবাসা নামক অসুখ ছিল। এখন আর সেই অসুখ নেই।