somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজরাইল তুই এত কাছে ছিলি?শাহীনকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশের উক্তি

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুলিশ শাহীনের জামার কলার ধরে টেনে ঘরের বাইরে আনতে চাচ্ছে আর শাহীন যাচ্ছিল পেছনের দিকে। তিনজন পুলিশ তার দিকে বন্দুক তাক করে আছে। শাহীন ছিল অনেক উঁচু লম্বা ও শক্তসমর্থ পুরুষ। পুলিশ তাকে টেনে ঘর থেকে বাইরে আনতে পারছিল না। কলার ধরে টানার ফলে শাহীন সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ সময় দরজার পাশে দাঁড়ানো দারোগা তিনবার বলে, ‘গুলি কর’। তখন বন্দুক তাক করে থাকা একজন পুলিশ গুলি করে। শাহীন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। উপুড় হয়ে মাথাটা ডানে-বামে ঘোরাতে চেষ্টা করে শাহীন। রক্ত গড়িয়ে দরজা পর্যন্ত চলে আসে। এর কিছুক্ষণ পর শাহীনের একটি পা একবার ঝাঁকি দিয়ে উঠল। পরে আর তিনি নড়াচড়া করেনি। নিস্তব্ধ হয়ে গেল সব কিছু। এরপর শাহীনের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে একজন পুলিশ বলে, ‘আজরাইল, তুই এত কাছে ছিলি’?
শাহীনকে ঘর থেকে টানাটানি করে বের করার চেষ্টা এবং পুলিশ গুলি করে হত্যার সময় ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ানো ছিলেন শাহীনের বìধু মাহফুজের চাচা আজহারুল হক।
পুলিশ কর্তৃক এভাবে শাহীনকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য বর্ণনা করে আজহারুল হক বলেন, “আমি যেন কেমন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাই এ ঘটনা দেখার পর। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী হচ্ছে এসব। শাহীনকে মারার পর দেখলাম একজন পুলিশ (এসআই ইয়ামিন) গেটের কাছে গিয়ে ফোনে বলতে লাগল, ‘স্যার একটা বোমা ফুটছে। একটি লাশ পাওয়া গেছে। আত্মহত্যা করেছে মনে হয়।’ তখন আমি বুঝলাম এর মধ্যে ষড়যন্ত্র আছে। আমার এখানে থাকা এবং এ বিষয়ে কথা বলা নিরাপদ নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে টিভি রুমে হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন। ফারুক হত্যা মামলায় আসামি করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র মিজানুর রহমান শাহীনকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহীন মামলার ১৬ নম্বর আসামি। তার বাড়ি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচ ী গ্রামে। গ্রেফতার এড়াতে শাহীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার চৈতন্যপুর গ্রামে তার বìধু মাহফুজের বাড়িতে যান ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে। সে দিনই গভীর রাতে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালায় ।
পুলিশের সাথে থাকা চৌকিদার আনোয়ারুল এবং অভিযানে অংশ নেয়া একজন পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ দেয়াল টপকে প্রথমে মাহফুজের চাচা আজহারুল হকের বাড়িতে ঢোকে। তিনজন অবস্খান নেয় বাড়ির ছাদে। দেয়াল টপকে পুলিশ বাড়ির উঠানে প্রবেশের পর গেটের দরজা খুলে দিয়ে অন্যান্য পুলিশকে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এরপর চৌকিদারকে সাথে নিয়ে মাহফুজের চাচা আজহারুল হকের শোয়ার ঘরের দরজায় নক করে পুলিশ।
আজহারুল হক জানান, ঘুম থেকে ওঠার পর চৌকিদার জানাল বাড়িতে পুলিশ এসেছে। দরজা খোলার পর তারা আমাকে বলল, আপনাদের বাড়িতে বহিরাগত আগন্তুক আছে। আমি বললাম বাড়িতে কোনো নতুন লোক নেই। তারা সার্চ করা শুরু করল এবং কোনো নতুন লোক পেল না। তখন আমাকে পুলিশ জিজ্ঞেস করল, মাহফুজদের ঘর কোনটা। আমি দেখিয়ে দিলাম। (আজহারুল হক ও মাহফুজদের ঘর দেয়ালঘেঁষা। আজহারুলের বাড়ি থেকে মাহফুজদের বাড়িতে ঢোকার ছোট একটি গেট আছে।) তারা ওদের বাড়িতে ঢুকল।
আজহারুল হক জানান, আমিও তাদের সাথে গেলাম এবং পুলিশের কথামতো বড় ভাইকে (মফিজুল ইসলাম) ডাক দিলাম। বড়ভাই উঠতে দেরি করছিলেন। তিনি কানে কম শোনেন। পুলিশ আমাকে জোরে ডাক দিতে বলল। বড় ভাই তখনো ওঠেননি। এরই মধ্যে আমি কুঠিঘরে (স্টোর রুম, উঠানের এক প্রান্তে অবস্খিত) টানাহেঁচড়া এবং ‘আও আও’ শব্দ শুনে সে দিকে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি পুলিশ একজনের (শাহীন) জামার কলার ধরে বাইরের দিকে টানছে। আর লোকটি পেছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। টানাটানির সময় লোকটি (শাহীন) সামনের দিকে ঝোঁকা অবস্খায়ই গুলি করল পুলিশ। গুলি করার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দারোগা তাকে তিনবার বলল, ‘গুলি কর’। আমি মনে করলাম বড়ভাইয়ের ছেলে মাহফুজকে মেরেছে পুলিশ। কারণ মাহফুজের বìধু যে তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে, তা আমার জানা ছিল না। আমি দৌড়ে মাহফুজের ঘরে গেলাম। তার স্ত্রী দরজার সামনে দাঁড়ানো ছিল। আমি তাকে বললাম, মাহফুজ তো শেষ। তার স্ত্রী জানাল, না মাহফুজ ঘরে আছে।
মাহফুজের মা মরিয়ম জানান, পুলিশের প্রথম ডাকই আমি শুনেছি। আমার ঘরে ছোট একটি শিশু ছিল। সে না ঘুমানোর কারণে আমিও তখন পর্যন্ত সজাগ ছিলাম। ডাকাডাকির শব্দে আমি মাহফুজের বাবাকে ডাকলাম। কিন্তু সে কানে কম শোনায় উঠতে দেরি করেছে। দরজা খোলার আগেই আমি কুঠিঘরে ঠাস করে একটি শব্দ শুনতে পেলাম।
মাহফুজের আব্বা মফিজুল জানান, দরজা খুলে আমি কুঠিঘরের দিকে গেলাম। আমার মেহমানের (শাহীন) প্রাণ তখনো যায়নি। আমি কাছে যেতে চাইলাম। পুলিশ আমাকে যেতে দিলো না। আমি এ দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।
মাহফুজের স্ত্রী নাজমা আক্তার জানান, এরপর পুলিশ ‘মাহফুজ কোথায় মাহফুজ কোথায়’ বলতে বলতে আমাদের ঘরে এলো। মাহফুজকে ধরে উঠানে নিয়ে হাতকড়া পরাল । আমাকেও তার পাশে দাঁড় করাল। নাজমা জানান, পুলিশ বাড়িতে প্রবেশের পরই আমরা কুঠিঘরে গুলির শব্দ শুনেছি।
মাহফুজের মা মরিয়ম, বাবা মফিজুল ও স্ত্রী নাজমা জানান, ওই রাতে শাহীন ছাড়া তাদের বাড়িতে কোনো নতুন লোক ছিল না। মাহফুজের বাবা মফিজুল কুঠিঘরসংলগ্ন মেইন গেট দেখিয়ে বলেন, শোয়ার আগে আমি নিজে তালা লাগিয়েছি। হত্যাকাে র পর পুলিশের সামনে আমি গেটের তালা খুলেছি। বাড়ি থেকে কারো পালিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। থাকলে শাহীন পালিয়ে যেতে পারত। পালাতে পারেনি বলেই সে কুঠিঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। কুঠিঘরের পাশে রান্নাঘর। রান্নাঘরের দরজায়ও তালা দেয়া ছিল। ফলে শাহীন পালাতে পারেনি। কুঠিঘরের বারান্দার কোনায় লুকিয়ে ছিল। পুলিশ তাকে সেখান থেকে টেনে বের করে গুলি করে হত্যা করেছে।
ঘটনার পর শাহীনের ঘরে একটি বিছানো জায়নামাজ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে বোঝা যায়, পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত শাহীন সজাগ এবং নামাজরত ছিলেন। বাড়ির চার দিকে পুলিশের আগমন এবং মাহফুজের চাচার ঘরে পুলিশের ডাকাডাকির বিষয়টি শাহীন টের পেয়ে যান। তখনই তিনি ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাড়ির গেট ছিল বìধ। পুলিশ টের পেয়ে যাবে সে জন্য সে কাউকে ডাক দেয়ারও সাহস পায়নি। অবশেষে সে কুঠিঘরে প্রবেশ করে।
মাহফুজদের চারজন প্রতিবেশী রয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, মাহফুজের চাচা ও মাহফুজদের বাড়িতে পুলিশ ঢুকে যখন ডাকাডাকি করে, তখন তাদের সবার ঘুম ভেঙে যায়। পুলিশ মাহফুজদের বাড়িতে প্রবেশের পরই তারা গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন। এরপর কী হয়েছে তা জানার জন্য তারা বাড়িতে ঢুকতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
মাহফুজের চাচা আজহারুল হক ও বাবা মফিজুল হক বলেন, শাহীনের গলার সামান্য নিচে গুলি করা হয়েছে। গুলিটি নিচের দিক থেকে করায় ঘাড়ের মাঝখান থেকে বেরিয়ে শাহীনের পেছন দিকে থাকা রান্নাঘরে দরজায় আঘাত করে। কাঠের দরজাটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় দরজা ভেদ করে গুলিটি চালে আঘাত করে এবং মাটির চালা ছিদ্র হয়ে যায়। শিবগঞ্জ থানার ওসি ফজলুর রহমান বলেন, এসআই ইয়ামিনের নেতৃত্বে নয়জন পুলিশ অভিযানে অংশ নেয়। তাদের সাথে এএসআই রেজাউল করিম ও এএসআই আমিনুল ইসলাম ছিলেন।
শাহীনকে দেখামাত্র গুলি করার কোনো নির্দেশ ওপরের মহলের ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি না-সূচক জবাব দেন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৫:৩৮
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×