somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের অন্যতম ক্ষুদ্রতম মসজিদ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এতো ছোট মসজিদ পৃথিবীতে আছে নাকি তা জানা নেই। ছোট হলেও একটা মাপ থাকে কিন্তু এ কেমন মাপ? দৈর্ঘ্যে প্রস্থে এতোই ছোট যে, মাত্র তিনজন মানুষ এক সাথে নামাজ পড়তে পারবে এই মসজিদে। অবিশ্বাস্য হলেও এটিই সত্যি।

আজ থেকে প্রায় তিনশ সাড়ে তিনশ বছর আগের ঘটনার। এমন একটি মসজিদ তৈরি হবে যার আকৃতি হবে অনেক ছোট। মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারবে এমন ভাবেই নির্মান করা হবে একটি মসজিদ। জানালা থাকবে না, দরজা থাকবে তবে ছোট আকৃতির। এক গুম্বুজ বিশিষ্ট হবে, ভিতরে একটি মিনার থাকবে হয়তো এমনই নির্দেশনায় তৈরি এই ক্ষুদ্রাকৃতির মসজিদটি।

বগুড়ার সান্তাহার এক আজব জায়গায় পরিনত হয়েছে। এখান থেকে উঠে আসলো অন্ধগাছী, ক্ষুদ্রতম মানুষ আব্দুল হাকিম, অদ্ভূত বাগান গড়ার মানুষ এস এম জুয়েল, লাইটার সংগ্রহক সোহেল রানা সহ আরো অনেকে অনেক কিছু নিয়ে। এবার আবার সেই বগুড়ার জেলার প্রাচীনতম শহর সান্তাহার। সেই সান্তাহার থেকে ৩ কিলো ভেতরে একটি গ্রাম; গ্রামের নাম তারাপুর। তারাসুন্দরী নামের একটি মহিলার নামানুসারেই এই গ্রামের নাম করন করা হয়। তবে তারা সুন্দরী কে বা তিনি কিভাবে এই গ্রামে আসলো তা জানা যায়নি। তারাপুর গ্রামের দক্ষিন পাড়ায় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে সেই মসজিদ যেই মসজিদটি হয়তো বাংলাদেশের অন্যতম ছোট মসজিদ।

সকাল সকাল আমরা বের হলাম তারাপুর গ্রামের উদ্দ্যেগে। আঁকাবাঁকা রাস্তা, রাস্তার দুই ধারে প্রচুর গাছ। গ্রামে ঢুকতেই কেমন জানি মনটা ভরে গেলো। মাটির বাড়ি সাড়ি সাড়ি একতলা, দুইতলা বাড়ি। বেশ কয়েকটা বাড়ি পেরিয়ে পৌছে গেলাম একটা প্রাইমেরী স্কুলে। সেখানে সবাইকে এই মসজিদের কথা বলতে আমাদের এর ঠিকানা বলে দিলো। শুরু হলো মাটির রাস্তার। গ্রামের যে এতো সৌন্দর্য তা তারাপুর গ্রাম দেখলেই বোঝা যাবে না। আমরা কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আমাদের লক্ষ্য স্থান সেই ক্ষুদ্র মসজিদের কাছে।

শুনসান জায়গা। আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে এখানে নামাজ পড়া হতো। দেড়শ বছরের অধিক সময় ধরে এই মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে আছে। কে বা কারা, কেন এই মসজিদ নির্মান করেছে এ নিয়ে বর্তমান গ্রামবাসীর মধ্যে অনেক মত বিরোধ আছে। আমরা সবারই কথার গুরুত্ব দেই সেখানে যেহেতু এই মসজিদের কোন ইতিহাস নেই সেহেতু এই মসজিদটির যে দুই চারটে কথিত ইতিহাস আছে হয়তো এর মাঝেই একটি ইতিহাস আছে যেটি সত্য। তাই আমরা আশে পাশে থাকা বয়স্ক, যুবক, তরুন সব ধরনের লোকজনদের কাছে থেকেই মসজিদ সম্পর্কে জানতে চাই।

মসজিদটি সম্পর্কে ওই গ্রামের যুবক আজমুল হুদা রিপন জানায়, তারা ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছে এই মসজিদ এই ভাবে, এই অবস্থায় থাকে। কেউ কেউ এখানে মান্নতও করে। তবে তার দাদা তাদের কাছে গল্প করেছে। দাদার, দাদার আমলে এখানে নামাজ পড়া হতো আর এখানে নামাজ পড়তো একজন মুসলামান। সম্ভবত তার নাম শিতন। গ্রামবাসী তাকে ও তার পরিবারকে একঘরে করে দেবার কারনে সেখানে তিনি নিজে নিজে মসজিদ স্থাপন করে এবং একা একা নামাজ পড়া শুরু করেন। এই শিতনেরই নামাজ পড়ার জন্য এই মসজিদ নির্মান করা।

গ্রামবাসীর মধ্যে আরো একজন বয়স্ক মানুষ আব্দুর রাজ্জাক আমাদের জানালেন, ঘটনা ঠিকই আছে তবে একটু প্যাচ আছে এর মধ্যে। আমার দাদারা গল্প করতে তারাপুরে আজ থেকে তিনশ সাড়ে তিনশ বছর আগে তেমন কোন মসজিদ ছিলো না। জমিদার অধ্যষিত এলাকা হবার কারনে এখানে জমিদারে কয়েকজন মুসলমান পেয়াদা কাজ করার জন্য বেশ কিছু দিনে জন্য স্থায়ী হন। আর তারা তাদের নামাজ পড়ার জন্য স্বল্প পরিসরে একটি মসজিদ স্থাপন করে যেখানে হাতে গোনা এক সাথে দুই তিন জন নামাজ পড়তে পারবে। জমিদারে পেয়াদাদের নামাজ পড়ার ব্যাপারে এই মসজিদ নির্মিত বলে এটি জমিদারের বিশেষ ব্যবস্থায় নির্মান করা হয়। আর তার জন্য এইটি দেখতে রাজকীয় একটি পুরানর্কীতির মতো।

গ্রামের আরো একজন তরুন আরিফুল ইসলাম জনি বললেন, সান্তাহারের ছাতিয়ান গ্রাম ইউনিয়নের রানী ভবানীর বাবার বাড়ি। আর সান্তাহারের আশপাশসহ আমাদের তারাপুরও রানী ভবানীর বাবার রাজ্যত্ব ছিলো। তারই অংশ হিসাবে রানী ভবানীর আসা যাওয়া ছিলো এই গ্রামে। একজন মুসলমান মহিলা এই গ্রামে ছিলো গ্রামে যিনি পরহেজগারী। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হবার কারনে ওই মহিলার নামাজপাড়ার অনেক অসুবিধা হতো। রানী ভবানী এমন কথা জানতে পেরে তিনি নিজেই এই গ্রামে চলে আসে আর সেই মহিলাকে যেন কেউ তার নামাজ পড়াতে অসুবিধা না করতে পারে তারই জন্য তার পেয়াদাদের হুমুক দেয় তার জন্য রাজকীয় নকশায় একটি মসজিদ তৈরি করে দেওয়া হোক। এই ভাবেই এই মসজিদটি নির্মান করা হয়। তবে এটাও তার দাদার মুখ থেকে শোনা। তার দাদা আবার শুনেছে তার দাদার কাছে।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মধ্যে এই মসজিদ সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারনা আছে। আমরা যখন এই মসজিদের ইতিহাস সংগ্রহ নিয়ে কাজ করছিলাম তখন রাসেল নামের একটি ছোট ছেলে আমাদের জানালেন এখানে কয়েকটি জ্বীনকে বোতলে তুলে এই ছোট মসজিদে আটকে রেখেছে হুজুর তাই তারা এই মসজিদের আশে পাশে আসে না। এটা তাদের বাবা-মা তাদের বলেছে আরো বলেছে এই মসজিদের কাছে আসলে সেই জ্বীনগুলো তাদেরও ধরবে।

ইতিহাস যেটাই হোক না কেন? আমাদের জানতে হবে মসজিদটির সম্পর্কে। ওটি যে একটি মসজিদ আর ওখানে যে নামাজ পড়া হতো তা নিয়ে কারো মনে সন্দেহ নেই। শুধু প্রয়োজন এর সত্যিকার ইতিহাস।

এক পর্যায়ে আমরা এই মসজিদটি মেপে দেখি। লম্বায় এই মসজিদের উচ্চতা ১৫ ফুট আর প্রস্থ ৮ ফুট, দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। মসজিদের দরজার উচ্চতা ৪ ফুট আর চওড়া দেড় ফুট। একটি মানুষ অনায়াসে সেখানে ঢুকতে বা বের হতে পারবে। একটি গুম্বুজ আছে যেটা অনেকটাই উচুতে। আর দেওয়ালের পুরুত্ব দেড় ফুট। এছাড়া দেওয়ালটি ইটের তৈরি। তবে যে ইটগুলো মসজিদের দেওয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর সবটার অর্ধেক ভাঙ্গা (এই ইটকে গ্রামে অধলা ইট বলে)। মসজিদের দরজায় দুইটি রাজকীয় নিদের্শনার আদলে নির্মিত খিলান আছে। মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন সম্বলিত মিনার, দরজার খিলান এবং মেহরাবই মসজিদটির প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হয়ে আছে।

আসলে এটি এতো পুরানো আর সংস্করনের অভাবে এটির যে অবস্থা এতে এই মসজিদের ব্যাপারে মসজিদটি দেখার পরও তেমন ভাবে বিশেষ চি‎‎হ্ন বা নিদের্শনা চোখে পড়ে না। এমন একটি আজব নিদর্শন আমাদের সংরক্ষন করা এখনই দরকার কারন এই ধরনের রেকর্ড গড়ার মতো একটি নিদর্শন আমাদের দেশকে এনে দিতে পারে সম্মান আর সেই সাথে রেকর্ডের পাল্লাও ভারী হতে পারে এই ক্ষুদ্রাকৃতির মসজিদটির কারনে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×