somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Akira Kurosawa____ এক কিংবদন্তী পরিচালক, মুভিসমগ্র পর্বঃ ১

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আকিরা কুরোসাওয়া___ মুভিজগতের এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী পরিচালকের নাম, যার নামের পাশে বিশেষণ কম পড়ে যাবে। মুভি একটা শিল্প এই ব্যাপারটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কে? টোটাল পারফেকশনিস্ট কে? সবচেয়ে বেশী রিস্ক নিয়ে নুতন মুভি করতেন কে? প্রতিটা মুভিতেই একের পর এক এক্সপেরিমেন্ট করেছেন কে? একের পর একে ডিফারেন্ট অ্যাঙ্গেল থেকে শট নেওয়ার ব্যাপারে কার সবচেয়ে বেশী শ্রম দিতে হয়েছে? এডিটিং-এ সবচেয়ে বেশী সময় ও পরিশ্রম দিয়েছেন কে? মুভিজগতের একটা সম্পুর্ন আলাদা, গোটা চ্যাপ্টার কার? এমন অজস্র প্রশ্নের একটাই উত্তর আসবে 'আকিরা'। দীর্ঘ ৫৭ বছরের চলচ্চিত্র পেশাতে ৩০টি মুভি পরিচালনা করেন উনি, পারফেকশনের উদাহরণ এটা।



২৩শে মার্চ, ১৯১০__ মুভি জগতে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম নিঃশাস নেন আকিরা। জাপানের রাজধানী টোকিও'র 'মোরি উপশহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আট ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন উনি। বড় ভাইয়া হেইগোর অনেক বেশী প্রভাব ছিল আকিরা'র উপরে। ভীতিকর কোনকিছুকে সরাসরি মুখোমুখি করলে যে ভীতির প্রভাব থেকে বের হয়ে আসা যায় এ শিক্ষা তিনি বড় ভাইয়ের কাছ থেকেই পান। '২৩ এর কান্তো ভূমিকম্পের পরে একদিন পরিদর্শনকালে বিভৎস স্তুপাকৃতির লাশের কাছাকাছি এলে আকিরা তা থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে গেলে হেইগো সেটাকে মুখোমুখি মোকাবেলার কথা বলেন। পরবর্তিতে আকিরা'র অনেক কাজের মধ্যে এ শিক্ষার পরিপূর্ন বাস্তবায়ন দেখা যায় বলে সমালোচকরা মন্তব্য করেন।



মুভিতে তার আসার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। যদিও মুভিবিষয়ক কাজে তার পূর্ববর্তি কোন আগ্রহ ছিল না তবুও '৩৫-এ P.C.L[পরবর্তিতে Toho] নামের একটা চলচিত্র স্টুডিও সহকারী পরিচালকের জন্য বিজ্ঞাপন দিলে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এজন্য তিনি যে 'Essay' পরিবেশন করেন তার টপিক ছিল, তৎকালীন জাপানী মুভির মৌলিক ঘাটতি ও তা কাটিয়ে উঠা সম্পর্কে আলোচনা। তিনি বিদ্রুপমিশ্রিতভাবে এরকম মতামত দেন যে, ত্রুটি যদি মৌলিক হয় তাহলে সেটা কাটিয়ে উঠার কোন উপায় নেই! এই ভিন্নধর্মি মন্তব্য-পূর্ন রচনা তাকে পরিচালক কাজিরো ইয়ামামোতো'র নজরে আনে। এরপরে তিনি কাজিরো'র সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে ছিলেন। Sanshiro Sugata (1943)___ আকিরা'র প্রথম পূর্ণ-দৈর্ঘ্য মুভি। Madadayo (1993)__ তার জীবনের সর্বশেষ সৃষ্টি।



পরিচালক হিসেবে তিনি অনেক খুঁতখুঁতে ছিলেন, সেট-এর সামান্য একটা আইটেম এর জন্যও পুনরায় শট নিতেন উনি। যেটা চাচ্ছেন তা একেবারে শতভাগ সেরকম না হওয়া পর্যন্ত বা পুনরায় নুতন কোন বেটার আইডিয়া মাথায় আসলে শট বারেবার নিতে উনি একটুও দ্বিধাবোধ করতেন না। ক্যারিয়ার শুরু করার ১০বছরের মধ্যেই উনি নিত্য-নুতন কৌশল আয়ত্ত করেছিলেন যা তার সৃষ্টিকে অসাধারণ ফ্রেম দিয়েছিল। উনার একটা দৃষ্টিনন্দন বৈশিষ্ট হল সেট ডিজাইনের সময় আবহাওয়ার সহায়তা নিতেন শতভাগ, প্রাকৃতিক ব্যাপারটা মুভির মধ্যে রাখার চেষ্টা করতেন প্রায়শই। যেমনঃ Ikiru-তে প্রচন্ড তুষারপাতের দৃশ্য, Seven Samurai-এর ক্ষেত্রে যুদ্ধের দৃশ্য, Yojimbo-তে কণকণে ঠাণ্ডার ব্যাপারটা, Throne of Blood-এ কুয়াশা, আরো কয়েকটা মুভিতে এমন সাহায্য নিয়েছেন উনি তবে সেগুলো এখনও দেখা হয় নি আমার।



চিত্রকলাতে আগ্রহী আকিরা'র মুভিতে পেইন্টিং এর ছাপ পাওয়া যায়। নিজে নির্বাক মুভির ভক্ত হওয়ায়, তার স্ববাক মুভির ক্ষেত্রে আর্টিস্টদের এক্সপ্রেশনের ব্যাপারে খুব খেয়াল রাখতেন। দেখা যায় এমন যে শুধু এক্সপ্রেশন দিয়েই উনি তার মুভিতে একটা চিত্র ফুটিয়ে তুলতেছেন। মুভিতে শব্দের ব্যবহার নিয়ে উনার নিজস্ব মতামত এমন, শব্দ মুভির ভাষাকে আরো বেশী জটিল করে দেয়, শব্দ মুভির সহকারী না বরং শব্দকে তার নিজের কাজ দিয়ে মুভির গুণকে আরো বেশী বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাই তার মুভির সংলাপের আলাদা স্বাদটা টের পাওয়া যায় বেশ দারুণভাবে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর নিয়েও তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ছিল। একটা পূর্ণ ট্র্যাক মুভির সাথে যায় না বলে বিশ্বাস করতেন উনি। এ কারণে তিনি একটা বাদ্যযন্ত্র দিয়েই একটা সুর তৈরি করতেন। অর্থাৎ একটা সুর শুধুমাত্র একটা সুরই, পূর্ন সঙ্গীত না। অবশ্য মুভির এন্ডিং সিন-এ পরিপূর্ন সঙ্গীত ব্যবহার করতেন। আরেকটা ব্যাপার হল মিউজিক দিয়ে উনি ইমোশনাল সিনগুলোকে ম্যাগনিফাই করতেন যেখানে হলিউড ভিত্তিক মুভিতে মিউজিক দিয়ে ইমোশনাল সিন বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।

সেট ডিজাইন ও কাঙ্ক্ষিত ভিজুয়াল ইফেক্ট আনার জন্য তার চেষ্টা অসামান্য, Throne of Blood__ মুভিতে হিরো মিফুনেকে তীরমারার একটা দৃশ্য আছে। এই শটের জন্য উনি দক্ষ তীরন্দাজদের ব্যবহার করেছিলেন, একেবারে পারফেক্ট শটের লক্ষ্যে। Ran__ মুভিতে দূর্গের জন্য আলাদা করে একটা বিশাল দূর্গ সেট তৈরি করেছিলেন। Rashomon____ মুভিটা ছিল সাদা-কালো, তাই শুরুর দিকের অঝোরে বৃষ্টির সিনগুলো সুন্দর করা পসিবল ছিলনা। ভারী বৃষ্টি যেন বোঝা যায় তার জন্য ক্যালিগ্রাফির কালি মিশিয়ে ব্যবহার করেছিলেন, শ্যুটিং এর সময় এলাকার প্রায় পুরো পানি সাপ্লাই শেষ করে ফেলেছিলেন বলে জানা যায়। এছাড়াও এই মুভিতেই উনি প্রাকৃতিক আলো ভাল ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে পর্যাপ্ত আলোর অভাব হওয়ায় অনেকগুলো আয়না ব্যবহার করে প্রতিফলনের মাধ্যমে সেট-এ দরকারী আলোর ব্যবস্থা করেছিলেন। আর্টিস্টদেরকে মুভির মধ্যে একেবারে নিখুতভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য কস্টিউম অন্তত এক সপ্তাহ আগেই উনি সরবরাহ করতেন যেন এর মধ্যে সবাই অভ্যস্ত হয়ে যায় ঠিকমতন। Seven Samurai___ মুভিতে দুঃস্থ কৃষকদের দেখানো হয়েছে, তাই আর্টিস্টদেরকে কড়া নির্দেশ ছিল যেন এমন করে ড্রেস-আপ করে বোঝায় যেন যায় এগুলোর অবস্থা একেবারে যাচ্ছেতাই।_______ এইসমস্ত নানাকারনে তাকে একনায়ক বলা হত পরিচালক হিসেবে :P

৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮, আকিরা ৮৮ বছর বয়সে তার সমস্ত ধরনের ক্যারিয়ার শেষ করে শেষ নিঃশ্বাস নেন।

আকিরা'র টোটাল ৩০টা মুভির লিস্ট ও ডাউনলোড লিঙ্ক দেবার ইচ্ছে আছে, আপাতত আমার দেখা মুভিগুলোর ডাউনলোড লিঙ্ক দিচ্ছি, বাকীগুলো পরের পর্বে যুক্ত করে দেব।

১। Sanshiro Sugata (1943)


Download Link =>

২। Sanshiro Sugata Part Two (1945)


Download Link =>

৩। Drunken Angel (1948)


Download Link =>

৪। Rashomon (1950)


Download Link =>

৫। Seven Samurai (1954)


Download Link =>

৬। Ikiru (1952)


Download Link =>

৭। Throne of Blood (1957)


Download Link =>

৮। Sanjuro (1962)


Download Link =>

৯। Yojimbo (1961)


Download Link =>

১০। Ran (1985)


Download Link =>
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৪
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×