সাগরমুখো রুম পাবার জন্য আমার বরাবরই একটা কাঙালপনা থাকে। যতবার কক্সবাজার গিয়েছি, খুঁজে-টুজে আমি একটা সাগরমুখো রুম পেতে চেষ্টা করেছি।
প্রথমবার যখন কলম্বো এসেছিলাম তখন মা প্রকৃতির দানেই বুঝি এমন একটা রুম মিলেছিল যেটি সাগরমুখো না হলেও, জানালা খুলে দিলেই সাগর দেখা যায় আর ঢেউয়ের শব্দে ঘরের ভেতর সাগর নেমে আসে।
এবার যখন রাবনের দেশে এলাম তখনো, সাগর দেবতার ভক্ত বলেই হয়তো, কী করে যেনো আমার কপালে একটা সাগরমুখো রুম জুটে গেলো।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, সাগরমুখো রুম পেয়ে আমার যা সুখ লেগেছিল!
তো, আমি যে কাজে এসেছি সেই কাজে এই লংকায় দক্ষিণ এশিয়ার আরো অন্যান্য দেশ থেকেও অতিথিরা এসেছেন। চা বিরতির ফাঁকে আলাপ হচ্ছিলো মালদ্বীপ থেকে আসা গোল-গোল ডাগরচোখের কন্যার সাথে।
নানা কথার ফাঁকে কোন কথা থেকে কোন কথায় আমি বল্লাম, কলম্বো আমার এতো ভালো লেগেছে! সাগরের শব্দ শুনতে, সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে আমার কী যে ভালো লাগে!
তিনি বড় নিরস বদনে উত্তরে জানালেন, কলম্বোর সাগর তার মোটেই ভালো লাগে না। দেখতে একদমই সুন্দর না। বরং তাদের দেশের সাগরের নীল জলরাশির তুলনায় এই জল ঘোলা, অসুন্দর।
এইসব বলে তিনি আমাকে তার মোবাইল থেকে তার দৈনন্দিন জীবনের ফাঁকে ধরা কয়েকটা ছবি দেখালেন। নীলজলরাশি!
নীল। উপচে পড়া নীল! মায়াবী নীল!
এই নীল দেখাতে দেখাতে সাগর কন্যা বললেন, দেখুন! এই নীল দেখে কারো আর কলম্বোর এমন তীর ছাড়া ঘোলাজলের সাগর দেখতে ভালো লাগে!
তারপর স্বগতোক্তির মতন বললেন, তবু কলম্বো এসে মানুষ কেন যে সি-সাইড রুম নিতে চায় আমি একদম বুঝি না! আমি এমন একটা রুম নিয়েছি যেখান থেকে সিটি ভিউ ভালো পাওয়া যায়। আমাদের দেশে মানুষ খুবই কম। আমি যে দ্বীপে থাকি সেই দ্বীপে মানুষ আরো কম। তাই, আমার মানুষ দেখতে ভালো লাগে।
এইসব বলতে বলতে আমরা আবার অন্য কথায় চলে গেলাম।
কিন্তু আমার ভেতর গুমরে গুমরে উঠলো তার সিটিভিউ। আমার ভেতর গুমরে গুমরে উঠলো সাগর তীরে ঢেউ ভেঙার কলরোল।
২৭ জুলাই। শুক্রবার। ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭