somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব-তিন)

১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দুটা পর্বে শুধু ছবি দিয়েছিলাম। লেখার ইচ্ছা হচ্ছিল না একদম ই। কিন্তু আজকে কেউ একজন নক করল আর লেখার অনুপ্রেরনাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। ধন্যবাদ স্বর্নাকে। নতুন ভাবে বলার আসলে কিছুই নাই। গবেষনা করে পেট চালাই। ডোনারদের দালালি করি। তো গেলাম রাঙ্গামাটি। আইন ও ন্যায় বিচার নিয়ে কাজ করতে হবে। শুরুর দিকে নিরাপত্তা জনিত কারনে রাঙ্গামাটির কোন উপজেলায় কাজ করার কোন অনুমতি পাচ্ছিলাম না উপজেলা প্রশাসন থেকে। পরে কাপ্তাই উপজেলার ইউ এন ও সাহেব নরম হয়ে যদিও বা অনুমতি দিলেন কিন্তু তার সাথে জুড়ে দিলেন অনেক অনেক শর্ত। প্রথম শর্ত হল বিকাল চারটার পর আমার টিম কোন ভাবেই কোন গ্রামে অবস্থান করতে পারবে না। আদীবাসী নারীরা অনেক খোলামেলা চলাফেরা করে তাই এমন কোন আচরন করা যাবে না যাতে করে তাদের মান সম্মানে আঘাত আসে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ ইউ এন ও কে অবহিত করতে হবে। পাহাড়ি- বাঙ্গালী কনফ্লিক্ট সংক্রান্ত প্রশ্ন গুলো খুবই সতর্কতার সাথে করতে হবে। আরো অনেক অনেক শর্ত। আর এই শর্ত গুলোর সাথে আমাদের রিসার্চের ইথিকস তো ছিলই। কাপ্তাই উপজেলায় কাজ করতে গিয়ে শুধু যে ইউ এন ও র অনুমতি পেলেই কাজ শুরু করতে পারব বিষয়টা তেমন ছিল না। এখানে পুরো একটা সিস্টেমকে রাজী করাতে হয়েছে আমাকে। এই সিস্টেমের প্রথমে ছিলেন ইউ এন ও। তারপর চেয়ারম্যান। তারপর মেম্বারেরা। তারপর হেডম্যান এবং সবার শেষে কারবারী। এদের সকলকে আলাদা আলাদা রাজী করাতে হয়েছে আমাকে। বিষয় টা এমন ছিল না, যে ইউ এন ও কে রাজী করাতে পারলেই হল অথবা চেয়ারম্যানকে রাজী করালেই হল। ইনারা প্রত্যেকেই একেকটা আলাদা আলাদা প্রশাসন। কেউ একজন রাজী না হলে, আমার আসলে কাজ করা আর হত না। ইউ এন ও সাহেব ওয়াজ্ঞা নামক ইউনিয়নে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। ইউ এন ও কে রাজী করানোর পর পর্ব ছিল চেয়ারম্যানকে রাজী করানো। ওয়াজ্ঞা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অংলাচিন মারমা অত্যন্ত বিনয়ী লোক। কথিত আছে যে তিনি নাকি তার হাসি দিয়ে নির্বাচন জিতে যান।


চেয়ারম্যান অংলাচিন মারমা
চেয়ারম্যান আমাকে তার ইউনিয়নের চারটা গ্রাম- তম্বু পাড়া, নোয়া পাড়া, শিল ছড়ি এবং কুকি মারাতে কাজ করার অনুমতি প্রদান করেন। এবং মেম্বারদেরকে অবহিত করেন। মেম্বাররাও সানন্দে রাজী হন। গ্রামগুলোর তিনটাই মারমা এবং তংচঙ্গা পাড়া। আর শিলছড়ি গ্রামটাতে মারমা এবং বাঙ্গালীরা একত্রে বাস করে। এরপর আসে হেডম্যানকে রাজী করানোর পালা। সব শুনে হেডম্যান রাজী হন এবং গ্রামের কারবারীদের সাথে কথা বলতে বলেন।

হেডম্যানঃ ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪১ নং বিধিমতে হেডম্যান তাঁর জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ করবেন। ৪২ নং বিধিমতে তাঁর মৌজায় বসবাসকারী জুমিয়া জমির মালিক তথা জুম চাষীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করবেন। তিনি পরিবার প্রধানের নাম ও সদস্য সংখ্যা, খাজনা পরিশোধকারী কিংবা খাজনা পরিশোধ অব্যাহতি প্রাপ্ত নতুন বা পুরাতন পরিবার ইত্যাদি সংক্রামত্ম তথ্য সম্বলিত একটি জুম তৌজি (জুমিয়া তথা জুম চাষীর তালিকা) প্রস্ত্তত করে প্রত্যেক বছর ১লা জুনের আগে সার্কেল চীফ তথা রাজার কাছে দাখিল ডেপুটি কমিশনারের কাছে রাজাকে দাখিল করতে হবে। হেডম্যানের (খাজনার) দাবীর অমত্মতঃ ৫০% রাজপূণ্যহর দিন এবং অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী বছরের ১লা জানুয়ারীর মধ্যে সার্কেল চীফের কাছে পরিশোধ করবেন। হেডম্যান যদি মনে করেন যে, কোনো প্রজা জুম খাজনা প্রদান থেকে রেহাই পাবার জন্য অন্যত্র পালিয়ে যাবার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে, তাহলে তিনি সেই চীফ ও ডেপুটি কমিশনারকে জানাবেন। যদি কোনো হেডম্যান অনুরূপ ব্যবস্থা্ গ্রহণে অবহেলা করেন, তাহলে সেই প্রজার অনাদায়ী খাজনার জন্য তিনি দায়ী হবেন। ৪৩ বিধিমতে তিনি ঘাস (শনখোলা) ও গর্জনখোলার খাজনা এবং ৪৫ (বি) বিধিমতে গোচারণ ভূমির ট্যাক্স আদায় করবেন।


হেডম্যানের সাথে কথা বলছি আমি
কারবারীঃ কারবারী নামক ব্যাক্তিটি আসলে একটা গ্রামের মাথা স্বরুপ। তিনি মূলত গ্রামের ছোট খাট ঝগড়া বিবাদ মিমাংসা, বিয়ে, পুজা এবং অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকেন। কোন সমস্যা হলেই কমিউনিটির লোকজন তার কাছে আসেন। পরামর্শ গ্রহন করেন।


নোয়া পাড়া গ্রামের কারবারীর সাথে কথা বলছেন আমার একজন গবেষক
চারটা গ্রামের কারবারীদেরকে বুঝিয়ে আমরা রাজী করাতে সক্ষম হই। কিন্তু সেটার জন্য আমাকে প্রতিটা গ্রামে অনেক বেশি সময় দিতে হয়। তাদেরকে বোঝাতে হয় আমাদের গবেষনার উদ্দ্যেশ্য। কি করব আমরা। কেন করব ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি কখনই কারবারীরা একা একা কোন সিদ্ধান্ত নিলেন না। তারা গ্রামের আর দশ জন মাথা জাতীয় লোকেদের সাথে আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেন আমরা আদৌ কাজ করতে পারব কিনা। কিন্তু আমি সকলকেই বোঝাতে সক্ষম হই আমার উদ্দ্যেশ্য।

যেহেতু আমরা রাঙ্গামাটি শহরে থাকতাম তাই কাপ্তাই উপজেলাটা জেলা সদর থেকে বেশ দূরে ছিল এই উপজেলা। প্রতিদিন দীর্ঘ পথ সি এন জি তে করে যেতে হত আমাকে। আর সাথে থাকত অপহরনের ভয়। গ্রামে যেতে গিয়ে আমি আকাবাকা রাস্তা আর রাস্তার পাশের পাহার গুলোর দিকে শুধু মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকতাম।














(চলবে)


রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব-এক)

রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব- দুই)

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×