somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব সাত

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পর্ব গুলোর লিংকঃ
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব এক
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব দুই
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব তিন
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব চার
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব পাঁচ
মারমা জাতিস্বত্ত্বার জীবন কথা- পর্ব ছয়


জুমিয়া মানুষদের মধ্যে প্রথম ক্ষোভের শুরুটা হয় ১৯৬০ সালের দিকে যখন কাপ্তাই বাঁধ নির্মান হয় এবং প্রায় এক লাখের মত মানুষ উদ্বাস্তু হয় আর প্রচুর পরিমান জমি প্লাবিত হয়। মূলত এই সময়েই এই এলাকার মানুষেরা নিজেদের ‘পাহাড়ী ছাত্র সংঘ’ এবং ‘পার্বত্য উপজাতীয় কল্যান সমিতি’র ব্যানারে একত্রিত হতে শুরু করে।
১৯৭১ এ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশের অন্তর্ভূক্ত হয়। নতুন এই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জুমিয়াদের উপর প্রথম প্রতিঘাতটি আসে যখন নব্য স্বাধীন দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী পাহাড়িদেরকে তাদের নিজস্ব জাতীয়তা ভূলে গিয়ে বাঙ্গালী হতে বলে। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে ৪টি দাবী উত্থাপন করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম গণপরিষদ সদস্য চারু বিকাশ চাকমা এবং মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাঃ
১. পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্বশাসন
২. পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য ১৯০০ সালের ম্যানুয়েল বহাল রাখা
৩. তিন জাতির চীফের দপ্তর অব্যাহত রাখা
৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি আবাদিদের অনুপ্রবেশ রোধ করা।
যদিও সংবিধান তাদের জাতিতাত্ত্বিক পরিচিতিকে সে সময় স্বীকৃতি প্রদান করে তথাপি মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা এবং অন্যান্যরা পার্বত্য এলাকায় সার্বভৌমতা এবং বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্নতা দাবী করে বসেন। চারু বিকাশ চাকমা এবং মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা যে চারটি দাবী সংবিধানে অন্তর্ভূক্তির জন্য দাবী করেছিলেন তা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রত্যাক্ষ্যাত হয়। অন্যদিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের, জুমিয়াদেরকে বাঙ্গালী হয়ে যাবার আহবান একভাবে তাদের মধ্যে নতুন এক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। যার ফলাফল হিসেবে ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ সালে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ ( পি সি জে এস এস ) নামে একটা রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়। যার মূল নীতি ছিল ‘মানবতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং অধিকারের সংরক্ষন, সংস্কৃতি ও জাতিগত পরিচয় এবং পার্বত্য অঞ্চলের স্বায়ত্ত্ব শাসন। একই সাথে এই সংগঠনটি পার্বত্য অঞ্চলের সকল গোত্রের গ্রাম কমিটি, সকল ছাত্র, যুব, নারীদের সংগঠনের আলাদা আলাদা উইং এর আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকে। ঠিক এক বছর পরই এই দলের সসস্ত্র সংগঠন ‘শান্তি বাহিনী’র গঠন হয়। অনেক বিদ্রোহী ভারতের ত্রিপুরায় গিয়ে প্রশিক্ষন, আশ্রয় নিতে থাকে। এই সময়টাতে সরকারের, পাহাড়ে বাঙ্গালী অভিবাসনের সিদ্ধান্তকে এই সংগঠনটি চরম ভাবে আপত্তি এবং প্রতিরোধ করা শুরু করে। এবং একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের অন্যান্য পরিকল্পনাকেও প্রতিহত করা শুরু করে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে খুন করা হলে দলটি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। ১৯৭৬ সালে জে এস এস আবারো আত্ম প্রকাশ করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নিজেদের একটা সমান্তরাল প্রশাসন চালু করে। ১৯৮৩ সালের দিকে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি লাম্বা (লম্বা) আরেকটি বদি (খাটো)। লাম্বা দলটি লারমা ভ্রাতৃত্ব দের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া শুরু হয় যাদের প্রধান লক্ষ ছিল দীর্ঘ একটা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের জুম্ম জাতীয়তাবাদের অধিকার আদায় করা। অন্যদিকে বদি নামক দলটি প্রীতি কুমার চাকমা এবং ভবতোষ দেওয়ানের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া শুরু করে যাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারত সরকারের সহায়তায় পার্বত্য অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন একটা রাষ্ট্র গঠনের। দুই ধরনের ভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী এই দুটি দলের বিবাদ রক্তক্ষয়ী গৃহ যুদ্ধের জন্ম দেয় যেখানে অনেক জুমিয়া পরিবারের সদস্য এবং এই সংগঠনের উদ্যোক্তা এম এন লারমা ও প্রান হারান। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বদি গ্রুপের অস্ত্র সমর্পনের মধ্য দিয়ে এই গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। বদি গ্রুপের এই আত্ম সমর্পনে সব থেকে বেশি লাভবান হয় লাম্বা গ্রুপ। তারা পুরো পার্বত্য অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার কারী গেরিলা গ্রুপ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে। কিন্তু গৃহযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে একটি দল হিসেবে জে এস এস অনেক বেশি দূর্বল হয়ে পড়ে এবং কোন ধরনের দৃশ্যমান সাফল্য দলটি নিয়ে আসতে পারে না। জে এস এসের আরেকটা ব্যার্থতা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের উপরের স্তরের রাজনীতির গুরুত্ব বুঝে উঠতে না পারা। যার ফলাফল হিসেবে তাদের যে ছাত্র সংগঠনটি ছিল তথা ‘পাহাড়ি ছাত্র সমিতি’র সকল ধরনের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে পাহাড়ি ছাত্র সমিতির সকলে তাদের সসস্ত্র সংগঠন শান্তি বাহিনীতে যোগ দেয়।
(চলবে)
পর্বটি উৎসর্গ করা হল প্রিয় ব্লগার কান্ডারি অথর্ব কে যার অনুপ্রেরনায় আমি সত্যি ধন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×