somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিস্বরের হারানো অধ্যায়(পর্ব-১)

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একঃ
বিষয়টা আর মোটেই হালকা ভাবে নেয়া যাচ্ছে না। এত্ত এত্ত মানুষ, সবাই কি একই সাথে একই মিথ্যা বলবে। আর কেনই বা বলবে? কি লাভ! শুধু বন্ধুরা হলে ধরেই নিতাম যে, তারা সকলেই যুক্তি করে আমাকে 'ইনোসেন্ট' তথা বোকা বানানোর ষরযন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। 'ইনোসেন্ট' অর্থ ঠিক বোকা নয়, তাদের ভাষায় এটা 'বোকাচোদা'। আর এই 'ইনোসেন্ট' বানানোর চক্রান্ত চলত এক্সটেনশনের ১৪০২ নম্বর রুমে কিংবা টেনিস কোর্টের আড্ডা গুলোতে- দশচক্রে ভগবানকে ভূত বানানো নামক খেলায়। একেকদিন- টার্গেট একেকজন। মাতাল না হলেও ভিক্টিমকে, উপস্থিত সকলেই এক ধরনের মেন্টাল প্রেসার ক্রিয়েট করে (তুই গ্যাছস গা, ঐ ভূল বকতাছস ক্যান, চুপ থাক, আবার! একদম কথা কবি না, মাম্মা তুমি তো টাল- এই জাতীয় কথা বলে) তাকে পুরো মাতাল বানিয়ে একধরনের পাশবিক আনন্দ উপভোগ করা। বিষয়টা এমন হয়ে যেত যে, মদ্যপ ব্যাক্তি তার নিজের উপর আস্থা এবং নিয়ন্ত্রন কোনটাই রাখতে পারত না। নিজেকে রেখে সে আর সকলকেই বিশ্বাস করা শুরু করত। খেলাটার ভয়াবহতা আমরা জানলেও কখনো এর তীব্রতা দেখি নি। কিন্তু এখন যে এখানে কেউ ভগবানকে ভূত কিংবা ভূতকে ভগবান বানাচ্ছে না এটা পরিস্কার। আর যারা কথা গুলো বলছে এদের অনেকেই একজন আর একজনকে চিনেও না কিন্তু সকলেই একই কথা বলছে। এবং এই কাতারে এখন ভাই, বোন, স্বজন এমনকি আমার স্ত্রী ও আছে। সকলের মুখে একই নাম আর একই ঘটনার বর্ননা। কিন্তু আমি কিছুই মনে করতে পারছি না। তাদের অবিশ্বাসী কথা গুলো শুনছি আর বারংবার তাদের কাছেই অবিশ্বাসী হয়ে উঠছি। যেন কোন ফ্লপ নাটকের প্রযোজক আমি। ঘটনার তীব্রতা ভূলতেই উদ্ভট দৃশ্যের প্রযোজনা। আর তারা অবিশ্বাসই বা করবে বা না কেন? একটা মানুষ তার জীবনে ৭/৮ বছর ধরে কন্টিনিউয়াস ঘটে চলা একটা গুরুত্বপূর্ন ঘটনা বেমালুম ভূলে যাবে, এটা কি হয়? হ্যাঁ হয়, তবে সেটা বাংলা সিনেমায়। এখনো বাংলা সিনেমাতে নায়ক অথবা নায়িকা, তাদের পিতা অথবা মাতা কিংবা সত্য জানা কারো মাথায় শক্ত কিছুর আঘাত লাগলেই আমরা সাধারন দর্শকেরা তৈরি থাকি তাদের স্মৃতি হারানোর সংবাদ এবং স্মৃতি ফেরানো দ্বিতীয় আঘাতটার জন্য। কিন্তু সেটা এখন আমার কনসার্ন না। আমার ভাবনার জায়গা হল আমি কি তবে এ্যামনেসিয়া, অথবা আলঝেইমার টাইপ কোন কিছুতে ভূগছি। কিভাবে সম্ভব! গুনগত আর সংখ্যাগত গবেষনায় বেশ শক্ত শক্ত এনালাইসিস/এক্সপ্লেইনেশন দ্বার করা মানুষ আমি।
শুরুর দিকে বিষয়টাকে যত না হালকা ভাবে দেখছিলাম, ততই কঠিন হয়ে পড়ল যেদিন আমার সহধর্মীনির মুখ থেকে কথাটা শুনলাম। দীর্ঘ এক বছর পর খুলনা থেকে ঢাকায় যেদিন আসলাম, তার ছয় কি সাত দিন পরের ঘটনা। আর দশটা দিনের মত যখন সুশাসন আর সমধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফোনে রাত্রে আমার স্ত্রীকে আমি সারা দিনের কৃত কর্মকান্ডের বর্ননা দিচ্ছিলাম তখন ই বাঁধল বিপত্তিটা। সহজাত খোঁচামারা প্রবৃত্তিতে সে বলেই বসল- যাও নাই দেখা করতে? তোমার রুমুর সাথে। এবার আমার মাথাটা বনবন করে ঘুরতে লাগল। সত্যিই কি আর সবাই সত্যি বলছে? আমি কি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ন একটা স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছি। খুব কষ্ট করে স্বাভাবিক থেকে, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম রুমুর কথা তুমি জানলা কিভাবে? প্রতি উত্তরে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ইতু বলা শুরু করে দিল- কি মনে করছ আমি ভূলে গেছি? জীবনে ভূলবনা আমি। আমার বাসর রাতে ঐ রুমুর জন্য তুমি আমাকে কি বলছিলা? বলছিলা রুমুর জায়গায় নাকি আমাকে কখনোই বসাতে পারবা না। সারাটা রাত তুমি আমাকে কাঁদাইছ। আমি কাঁদছি আর একটা অনিশ্চয়তায় ভূগছি- কেমন মানুষের সাথে সংসার করতে পাঠালো আমাকে আমার বাবা মা। আর তোমার সেই সংসার ঠিক করতে আমার দেড় বছর সময় লেগেছে। দেড়টা বছর আমি অপেক্ষা করেছি, একা-তোমার বাড়িতে। শুধু একটা আশা ছিল আমার সম্বল। আমি ফেরাব একদিন তোমাকে। এজন্য কোন মানুষকে না দেখে বিয়ে করতে হয় না। কথায় বলে না, প্রথমে দর্শনধারী তারপর গুনবিচারী। উল্টোটা করে আমি খুব ভূল করেছিলাম। মাত্র কয়েক ঘন্টা তোমার গুনের কথা শুনে আর আমার বাবা মা- র মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আর না করতে পারি নাই। এক রাতেই বিয়ে……..
ইতুর কথা গুলো শুনছিলাম সত্য কিন্তু মনযোগ দিতে পারছিলাম না। রুমু নামের কেউ একজন আমার জীবনে যে খুব ভালভাবেই ছিল এটা এখন পরিস্কার। কিন্তু কিভাবে ছিল, কে সে, কোথায় থাকে, কেন আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি এসব রাজ্যের প্রশ্ন এখন মাথায়। ইতুকে ফোনটা রাখার কথা বলার সাহস হচ্ছিল না। জানি সে বকবে এখন। যতক্ষন না তার রাগ কমবে। এক সময় বকতে বকতে নিজেই ফোন কেটে, ফোন বন্ধ করে রাখবে। এরপর তাকে মানাতে হবে। এটা তার আল্টিমেট চাওয়া। অবশেষে প্রতীক্ষার পালা শেষ হল। কট করে ফোন লাইন সে কেটে দিল। চোখ বন্ধ করে আমি ঢাকায় ফেলে যাওয়া আমার চৌদ্দটি বছরের স্মৃতিগুলোকে বের করে সেগুলোর কোনা কোনা খোঁজা শুরু করে দিলাম। কোন এক কোনায়, কোন ভাবে যদি রুমু নামের কাউকে পেয়ে যাই।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×