somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন বাঙলার শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর

১৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ আমাদের এ বাংলাদেশ। কত জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত জন্ম নিয়েছেন এ দেশে। তাদেরই একজন শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর। সেই প্রাচীনকালে তিনি বাংলাদেশকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পরিচিত করিয়েছেন। অতীশ দীপঙ্কর বার্মা, নেপাল ও চীনের তিব্বত গিয়ে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। আর অতীশ দীপঙ্করের সমাধী সৌধও চীনের তিব্বতে।

অতীশ দীপঙ্করের জন্ম বাংলার অন্যতম প্রাচীন রাজধানী বিক্রমপুরে। বিক্রমপুর আজ মুন্সীগঞ্জ জেলা নামে পরিচিত। মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী গ্রামে বৌদ্ধধর্মের পরম পন্ডিত শ্রীজ্ঞান দীপঙ্কর ৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশে ও চীনে অতীশ দীপঙ্করের জন্ম সাল নিয়ে ঐতিহাসিকরা দু’ভাগে বিভক্ত। একদল ঐতিহাসিকের মতে, অতীশ দীপঙ্কর ৯৮০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী। অন্য দলের মতামত হলো ৯৮২ সালে। তারা জন্ম তারিখ নির্ধারণ করতে পারেনি। ২৪ ফেব্রুয়ারিও নির্ভরযোগ্য বা প্রমাণিত তারিখ নয়। বিক্রমপুরের ইতিহাস হতে জানা যায়-বিক্রমপুরস্থ বজ্রযোগিনী গ্রামে বৌদ্ধ মহাতান্ত্রিক দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ জন্মগ্রহণ করেন। বিক্রমপুরের ইতিহাসে লেখাটি হুবহু এভাবেই মুদ্রিত হয়েছে। পাগ-সাম-জন- জাঙ্গ-এর মতে অতীশ দীপঙ্করের জন্মভূমি বিক্রমপুর বজ্রাসনের পূর্ব দিকে অবস্থিত। মূল ইংরেজিতে এভাবে লেখা রয়েছে Dipankar was born AD 980 in the Royal family of Gour at vikrampur in Bangla, a country lying to the East of Vajrasana.

দীপঙ্কর তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন-‘আমার দেশে রাজা এবং রাজবংশীয় লোকের বাস। ভূ ইন্দ্রচন্দ্র নামে এক রাজা রাজত্ব করেন। রাজবংশীয়দের দেহে রাজ রক্ত থাকিলেও তাহারা রাজ্য বা সিংহাসনের অধিকারী নহেন। আমি রাজ বংশে জন্ম লাভ করেছিলাম। আমার পিতার নাম তিব নাম থাহি দান পগ (Tib-Namm-khahihi-dvan-phyug ) কিন্তু বাংলার ইতিহাসে অতীশ দীপঙ্করের পিতার নাম কল্যাণ শ্রী ও মায়ের নাম প্রভাবতী পাই। কল্যাণ শ্রী তিব্বতীয় নাম হলো Dge-vahi.. বাল্যকালে দীপঙ্করের নাম ছিল চন্দ্রগর্ভ। দীপঙ্কর আত্মজীবনীতে রাজা হিসেবে ভূ ইন্দ্রচন্দ্রের কথা বলেছেন। সে যুগে দীপঙ্করের বাড়ির দু’কিলোমিটার উত্তরে শ্রীচন্দ্র (৯৩০-৯৮০) লডহর চন্দ্র, পূর্ণচন্দ্ররা রাজত্ব করেন। তারা সবাই বৌদ্ধ রাজা ছিলেন।

অল্প বয়সেই দীপঙ্কর শিক্ষক জেতারির নিকট প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি অধিক জ্ঞান লাভের আশায় “কৃষ্ণগিরি” বিহারের রাহুল গুপ্তের নিকট ‘‘ বৌদ্ধদিগের ত্রিশিক্ষা নামক তত্ত্বগ্রন্থে” শিক্ষার জন্য গমন করেন। দীপঙ্কর মাত্র ১৯ বছর বয়সে ওদন্তপুরী বিহারের আচার্য পরমপণ্ডিত শীল রক্ষিতের নিকট হতে ভিক্ষুব্রতে দীক্ষা লাভ করেন। দীপঙ্কর ২৫ বছর বয়সে একজন প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক ব্রাহ্মণকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করে অসীম গৌরব লাভ করেন। এরপরই ওদন্তপুরী বিহারের বৌদ্ধাচার্য শীলরক্ষিত দীপঙ্করকে ‘‘শ্রীজ্ঞান” উপাধি দান করেন। অতীশ দীপঙ্কর ৩১ বছর বয়সে ভিক্ষু আশ্রমের শ্রেষ্ঠ সম্মান লাভ করেন। মগধের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি নিকটে দীপঙ্করের নামানুসারে একটি গ্রামের নাম রাখা হয় ‘‘দীপনগর”। দীপঙ্কর ভিক্ষু হওয়ার পর বিক্রমশীলা বিহারে আশ্রয়গ্রহণ করেন। দীপঙ্কর বিক্রমশীলা বিহার হতে ব্রহ্মদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। নৌযোগে মিয়ানমারে যেতে তাঁর ১৩ মাস সময় লেগেছিল। মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরে দীপঙ্কর ‘‘মহাবোধী” বিহারের বজ্রাসনে বাস করতেন। দীপঙ্করের পাণ্ডিত্য ও জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে পালবংশীয় নরপতি মহীপাল তাঁকে বিক্রমশীলা বিহারে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যান। সম্রাট মহীপাল দীপঙ্করকে বিক্রমশীলা বিহারের অধ্যক্ষের আসনে বসান। পালবংশীয় সম্রাট ন্যায়পাল- এর রাজত্ব কালেও দীপঙ্কর বিক্রমশীলা বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন।

বিক্রমশীলা বিহারের সম্মুখের বামে দীপঙ্করের ও দক্ষিণে নাগার্জুনের মুর্তি চিত্রিত ছিল। অতীশ দীপঙ্কর বেশ কিছুদিন সোমপুর বিহারেও অবস্থান করেছিলেন। বাংলাদেশ, ভারতের বাইরেও দীপঙ্করের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই হয়তো তিব্বত রাজা লামাও দীপঙ্করের ‘‘অতীশ’’ নামে পূজা দিতেন। পূজার এ বিষয়টি তিব্বতীয় ঐতিহাসিক ও দীপঙ্করের জীবনী লেখক তেঙ্গুর আমাদের জানায়। তিব্বতরাজ চ্যাংচুবের দীপঙ্করকে তিব্বত যেতে আমন্ত্রণ জানান। সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে দীপঙ্কর তিব্বত যাত্রা করেন। দীপঙ্কর ১০৪২ খ্রিষ্টাব্দে ৫ জন সঙ্গী নিয়ে তিব্বত যাত্রা শুরু করেন। তখন তার বয়স ৫৯ বছর। দীপঙ্করের তিব্বত যাত্রা নিয়ে কবিতাও হয়েছে। ‘‘বাঙালি অতীশ/ লংঘিল গিরি/ তুষারে ভয়ংকর/ জালিল জ্ঞানের দীপ/ তিব্বতে বাঙালি দীপঙ্কর।” এই হলো কবির কথা। ভূমি সঙ্গ, বীর্যচন্দ্র, নাগ-ছো, গায়ৎসো, অনুচর ও ভৃত্য নিয়ে দীপঙ্কর তিব্বত রওনা হন। যাত্রাপথে নেপালে কিছুদিন দীপঙ্কর অবস্থান করেন। নেপাল থেকে দীপঙ্কর বাংলার সম্রাট ন্যায় পালকে একটি পত্র প্রেরণ করেন।

ইতিহাসে তা বিমল “রত্ম লেখ’’ নামে পরিচিত। দীপঙ্কর নেপাল হতে তিব্বত প্রবেশ করার সাথে সাথে ১০০ অশ্বারোহী তাকে স্বাগত জানায়। তাকে রাজদরবারে নিয়ে যায়। দীপঙ্কর বহু গ্রন্থের প্রণেতা। তার রচিত কয়েকটি গ্রন্থ হলো-(১) বোধীপথ প্রদীপ, (২) চর্য্যা সংগ্রহ দীপ, (৩) মধ্যো মোপদেশ, (৪) সংগ্রহ গর্ভ, (৫) মহাযান পথ সাধন বর্ণ সংগ্রহ ইত্যাদি। বাঙালি দীপঙ্কর ১১ বছরের অধিক সময় তিব্বতে অবস্থান করেন। সেখানকার লোকজনকে বৌদ্ধ শিক্ষায় দীক্ষা দান করেন। জীবনের একটি বিশাল সময় তিনি চীন দেশের তিব্বতে কাটিয়েছেন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থেকেছেন তিব্বতে। বাংলার এ মহাপবিত্র শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর ১০৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ৭২ কি ৭৩ বছর বয়সে মারা যান। তিনি যে জায়গায় মারা যান সেটির নাম ন্যাথাং Nathan । এটি তিব্বতের লাশার অতি নিকটে। আর অতীশ দীপঙ্করের সমাধী, মন্দির গ্রো-ম Sgro-ma নামে পরিচিত। দীপঙ্করের সমাধী মন্দিরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এটি সংস্কারের প্রয়োজন। বাংলাদেশে দীপঙ্করের নামে রাজধানী ঢাকায় একটি সড়ক আছে। আর আছে একটি স্মৃতি সংসদ। তাও ঢাকা কেন্দ্রিক। দীপঙ্করের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদরের বজ্রযোগিনীতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই নেই। স্থানীয় লোকজন দাবি করেন, এখানে অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। তা ঢাকায় হলো। এটা বজ্রযোগিনীতে হোক। বজ্রযোগিনী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৩) এর শিক্ষক মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, অতীশ দীপঙ্করের নামে বজ্রযোগিনী অথবা মুন্সীগঞ্জ শহরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। দীপঙ্করের স্মৃতি ধরে রাখতে মুন্সীগঞ্জে কিছু একটা করা দরকার।

আরো জানতে ক্লিক করুন

Speech by Political Counsellor Ms. He Lanjing ,চায়না এ্যামবাসি, ঢাকা

সুত্র /ছবি: ইন্টারনেট / দৈনিক ইত্তেফাক- ১৫-১১-০৯
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×