ছোট বেলায় গ্রীষ্মের ভর দুপুরে দল বেধেঁ নদীতে গোসল করতে যেতাম।
চৈত্র-বৈশাখ মাসে শীর্ন নদীর বালুকা বেলায় সবাই জড় হয়ে বারোয়ারী গল্পের সাথে হিসেব করতাম কৈশোরের নানা অর্থহীন বিষয় গুলি।।।
এই সময় নদী ছোট হয়ে আসতো , পানি কমে যাবার ফলে গত পূজায় ডুবানো দূর্গা মায়ের কাঠামোটি জেগে উঠলে আমরা বুঝে নিতাম আবার পুজার ঘনঘটা শুরু হবে। বালু দিয়ে কত ঢং-এর খেলায় না আমরা মেতে থাকতাম তার কোন ইয়ত্তা নেই । বেলা বয়ে যেত আমাদের খেলা শেষ হতো না । এক সময় বাড়ী থেকে কেউ না কেউ ডাকতে আসতো । আমি ছেলে বেলায় শুধু এই অপরাধে বহু মার খেয়েছি।।।শীতের বেলা হোক আর গ্রীস্মের বেলা হোক , আমাদের যে খেলায় হোকনা কেন কখনোই খেলা শেষ হতো না শুধু বেলা--ই বয়ে যেত ।।। বিষন্ন মনে বাড়ী ফেরার সময় অনেক খেলা বাকী রয়ে যেত ।। বাকী রয়ে যেত পানকৌড়ী খেলা, ওপারের গাছে আম ছেড়া, ভাটির স্রোতে ভেসে বর্ডার ক্রস হওয়া, গোপাল মাঝির ভাঙ্গা নাউয়ে পাল তোলা খেলা , কেষ্ট পুরের চরে ঘর বানানো ----আরো হরেক খেলা। বাকী থাকা খেলা গুলো আগামী কালের জন্য রেখে দিতাম কিন্তু সেই আগামী কালের বেলা-ও শেষ হয়ে যেত খেলা শেষ হতো না । এই ত্রিশোর্দ্ধ আমার এখনো শৈশবের অনেক খেলা বাকী পড়ে আছে আর কোন দিন-ও খেলা হবে না ।।। সেই খেলার সাথীরা--ও আজ বিচ্ছিন্ন।।। আর বালু দিয়ে সেদিনের গড়া সেই শৈল্পিক কাজ গুলো ,,, আজ শুধু জলজ গন্ধ হয়ে স্মৃতি বৈ কিছুই নয়।।।।।। যেন----
"ভুলের এ বালু চরে
যে বাসর গড়া হলো-- জানি তার নেই কোন দাম ।।।।।।।"
--------------
আজ বড় হয়ে সংসার নামক জটিল রাজ্যের ভেতরে ঢুকে---ও দেখি একই হিসাব ।। সকাল হলেই শুরু হয় যুদ্ধ।। লম্বা বাসের লাইনে ঠেলা ঠেলি করে উঠে কোন রকম অফিসে পৌছানো ।।। এর মধ্যে--ও হরেক রকম ফোন ,, রং বে রং-এর জটিলতা ,,, এক হাতে বাসের হাতল ধরে আরেক হাতে অফিসিয়াল মেসেজ লেখার প্রাণান্ত চেষ্টা ।। অফিসে ঢুকে বসের রুটিন বয়ান ।। কম্পিউটার,, ই-মেইল ,, করসপনডেন্স--এর ঝক্কির সাথে সাথে ফোনে বউ--এর কচ কচানি আর বাসায় কি কি নিয়ে যেতে হবে তার লম্বা ফিরিস্তি । গত রাতে না মনে পড়া সকল অভিযোগ সমূহ। (ভাগ্যিস আমার বউ এ লেখা টা পড়বে না ) ।। খুব দ্রত কিছু একটা গলা:ধরণ করে চললো আবার সন্ধ্যা অবধি।।। আবার সেই বাসের লাইন । এবার যুদ্ধ আরো ভয়াবহ।।। আজ আবার লাগবে বৃহষ্পতিবারের যুদ্ধ।
বিধস্থ দেহ মন নিয়ে কোন রকম বাসায় ফেরা ।। থাকবে না বিদ্যুত । মাথা ব্যথায় মরে গেলেও এখন আবার চা খাওয়া যাবেনা ।। আমার বউ চার্জারের আলোতে কমফোর্ট ফিল করে না ।। যাহোক কিছুক্ষণ পর বিদ্যুত এলে বউ--এর হঠাৎ উদারতা থেকে অতিভক্তি।। বুঝতেপারি ---আমার বই মেলা থেকে কেনা রাজীব ভাই-এর বই টা আর পড়া হবে না । গভীর মনযোগ দিয়ে নিরীহ শ্রোতার মত তার বয়ান শুনি ।।শেষ হতে না হতেই আমার শরীর জুড়ে রাজ্যের ঘুম ভর করে ।। তারপর আবার সেই একই রুটিন।।। জানি না এ চলার শেষ কোথায় ??? ছাত্র জীবন শেষ করে রিয়াল লাইফে এসেও আজ ানেক কিছু বাকী রয়ে যায়।।। আধূনিক জীবনের কত সাধ অজানা রয়ে যায়।।আজ হবে , কাল হবে , আগামী বছর হবে করে করে-ও কিছুই হয় না ।। মনে পড়ে নদীর পাড়ে ছোট বেলার সেই খেলার কথা ----
"বেলা শেষ হয় , শেষ হয় না খেলা
জীবন-ও প্রভাতে মম -------
------- ------
সাধ মিটিল না -----
"
পানসে জীবন টা কে আধুনিকতার মোড়কে কোন ভাবেই পূর্ণতা দেওয়া যাযনা ।যান্ত্রিকতার ভারে শুধু সতেজতা হারাতে থাকে । তবু-ও কেন জানি সব সময় যন্ত্রের মত তাল মিলিয়েই চলতে হয়। এভাবেই কেটে যায় জীবন ; শেষ হয় একেক টা অধ্যায় ।। কারো কাছে মনে হলেও হতে পারে -----
"তোমার যাবার সময় বুঝি বয়ে যায়
আমার দেবার কিছু বাকী রয়ে যায় !!
এভাবে চলে যাবে তুমি ??? "
---- ----- কিন্তু মনে হলেও বা কি ?? ঐ যে --বেলা যে শেষ হয় !!!
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



