আমার ধারণা যখন থেকে আমি রিডিং পড়তে শিখেছি তখন থেকেই আমার বই পড়ার নেশা । সময়ের সাথে সাথে এই অভ্যাসের গতি, প্রকৃতি ওঠা নামা করেছে তবে কখনোই বিলীন হয়ে যায়নি।যখন হাই স্কুলে পড়তাম তখন ভাবতাম কলেজে গেলে লেখা পড়ার চাপ কমবে তখন অনেক বেশী বেশী বই পড়বো । কলেজে উঠে মনে হলো না একেবারে পরীক্ষা শেষ করে পড়বো । ছাত্র জীবন শেষ করে ভাবলাম একাডেমিক পড়ার পাঠ তো চুকলো এবার কর্মজীবনে শুধু বই পড়বো । সারাদিন অফিস সন্ধ্যা আর রাতে তো সম্পূর্ণ ফ্রি । মনের মধ্যে জমে আছে অজস্র না পড়া বইয়ের নাম; দিন দিন তালিকা টা আরো দীর্ঘ হচ্ছে।এক সময় কালের স্বাভাবিক নিয়মে আমার একটা পৃথক সংসার হলো । শুধু দুজনের ঘর। নতুন সংসার, নতুন জীবন , নতুন স্বপ্ন কিন্তু আমার মনের মধ্যে সেই পুরাতন বাসনা রয়েই গেল। না পড়া বই গুলো এবার বুঝি আমার পড়া হবে । শৈশবের সেই অধরা বই গুলো এবার মনে হয় ধরতে পারবো। সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে আমি মহা উঃসাহে সেই ধুলি পড়া বই গুলো হাতে তুলে নিলাম ।বাসায় তখনো টেলিভীষন আনা হয়নি তাই র্নিবিঘ্নে আমি আমার কাজ চালিয়ে যেতে পারবো----সাথে সাথে মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা কৈশোরের সেই নিষিদ্ধ ইচ্ছে (লেখা-লেখি) -টাও একটু পূরণ করতে পারবো----এসব ভেবে আমার শরীরে রীতিমত শিহরণ খেলে গেল । ক্ষুধার্ত নেকড়ে যেমন খাবার গলা:ধরণ করে ঠিক সেভাবে একে এক আমি পড়ে ফেল্লাম সুকান্ত সমগ্র, যাযাবর সমগ্র, নিমাই ভট্রাচার্য, বারট্রান্ড রাসেল থেকে আনিসুল হকের মা পর্যন্ত। সেই সময় আমার হাতে আসলো মাসুদ আহমদ নামক একজন উচ্চপদস্ত সরকারী চাকুরে( যিনি একজন সৌখিন লেখক-ও)র লেখা বই -"স্বপ্নযাত্রা"। বইটি ১৯৪৭-এর পটভুমিতে লেখা । বইটির সবেমাত্র কয়েক পৃষ্টা পড়েছি , ভীষন আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি ঠিক এমন সময় বাধলো বিপত্তি। দেশের বাড়ী থেকে স্বয়ং আমার মায়ের অভিযোগ!!! এত কি পড় সারাদিন ?? বৌমার ঠিকমত সময় দাওনা । আর আমার ঘরণী আমার বই পড়ার উপর সাথে সাখে নিশেধাজ্ঞা আরোপ করে ফেল্লেন। শৃক্র, শনি ছাড়া বই-এর গায়ে হাত দেয়া যাবেনা । কি আর করা এভাবেই চলছে ।।।।।
------------
গত শনিবারে ২য় বারের মত পড়ে শেষ করলাম "স্বপ্নযাত্রা"। আমার আবার একটা বিশেষ কূ অভ্যাস আছে । যে বইটি মনে ধরে সে বইটি আমি কয়েকবার পড়ি এবং প্রত্যেকবার পড়ার সময় নতুন কিছু আবিষ্কার করি।এমনিতে ঐতিহাসিক উপন্যাসের উপর আমার আলাদা কোন টান নেই তবে এই বইটি পড়ার পড় এ জাতীয় উপন্যাসের প্রতি আমার রীতিমত লোভ জন্মে গেছে।সাড়া জাগানো উপন্যাস --খুশবন্ত সিং-এর "ট্রেন টু পাকিস্তান" আমি অনেক মনোযোগ দিয়ে কয়েকবার পড়েছি। সত্যি বলতে কি এই উপন্যাসের কাহিনী বিন্যাস আমার কাছে এলোমেলো লেগেছে । সেখানে অনেকটা একই পটভূমিতে লেখা "স্বপ্নযাত্রা" উপন্যাসটি অনেক গোছালো এবং মার্জিত। অনেক পরে লেখা হয়েছে বলেই এত সমৃদ্ধ কিনা জানিনা তবে বইটির প্রতিটি চরণ আমার কাছে অসম্ভব সুগঠিত এবং কাহিনীর সাখে বিন্যস্ত বলে মনে হয়েছে । পাশাপাশি সঠিক ইতিহাস-কে লেখক ধারণ করেছেন একবোরে নিরপেক্ষ ভাবে ; যা একজন লেখকের জন্য কিছুটা অসাধ্যই বটে। বইটি পড়লে জানা যাবে-- ৪৭-এর পট পরিবর্তন কিভাবে আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনে ভুমিকা রেখেছে ? ৪৭-এর আগে আমরা কেমন ছিলাম ? সে সময় কার কেমন ভুমিকা ছিল ? ইংরেজরা কেন আমাদের দীর্র্ঘদিন শাষন করে গেল ? কাশ্মীর এখনো কেন প্রধান ইস্যু?------------- ইত্যাদি অনেক ঐতিহাসিক প্রশ্নের উত্তর। সবচেয়ে বড় ব্যাপার দেশ ভাগের মত একটি জটিল বিষয় যে বইটির মূল উপজীব্য এবং লেখক যেখানে আমাদের স্বদেশী নিসন্দেহে সেই উপন্যাসটি আমাদের পড়ে দেখা দরকার ।
বইটির শেষে লেখক পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে । লেখক মাসুদ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্যে লেখাপড়া শেষ করে এখন বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন ।
----এই সামহোয়ারইন ব্লগ -এ আমি আমার ভালোলাগার বিষটি প্রকাশ করি অনেকটা প্রাণ খুলে। আমার ভালোলাগা বইটির কখা তাই আপনাদের জানাতে ভুললাম না ।।।।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৫:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




