একদিনের হরতালে দেশের ৫৫০ কোটি টাকার সরাসরি ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি। কারণ হরতালের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগের যোগসূত্র রয়েছে। হরতালে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও আমদানিকারকদের কাছে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। এতে বিদেশি উদ্যোক্তা ও আমদানিকারকদের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। ফলে বিনিয়োগ ও আমদানির জন্য বাজারে পছন্দের তালিকায় পেছনে পড়ে যায় বাংলাদেশের নাম। অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্খা, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। আজকের হরতালে এ ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিদিনের হরতাল অবরোধে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ০.১২ শতাংশ৷ এ জন্য পোশাক শিল্প খাতেই প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ৩৬০ কোটি টাকা৷ এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর শুধু একদিন বন্ধ থাকলে সরকারের রাজস্ব বাবদ ক্ষতি হয় প্রায় তিন কোটি টাকা৷ বন্দরে কন্টেইনার খালাসের অনুমোদনের তুলনায় খালাস হচ্ছে খুবই কম৷ বন্দরে রেকর্ড পরিমাণে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হওয়ায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে৷
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক গবেষণায় হরতালের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বলা হয়েছে, হরতালের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত জনতাকে বলেন, হরতালের আর্থিক ক্ষতি নির্ধারণ করা কঠিন। আমাদের জিডিপির আকার সাত লাখ কোটি টাকা। এ হিসাবে একদিনের হরতালে সরাসরি আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। হরতালে শিল্প-বাণিজ্যের ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এক দিন হরতাল হলে শিল্প-বাণিজ্যের তিনদিন বন্ধ থাকার সমান ক্ষতি হয়।
২০০৫ সালে ইউএনডিপি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, এক দিনের হরতালে দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৫৪ কোটি টাকা। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি আরো অনেক বেশি। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও হরতাল দেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। ঐ গবেষণায় বলা হয়, শুধুমাত্র হরতালের ফলে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশের ৮০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ আট হাজার ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, একদিনের হরতালে পোশাকখাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১১০ কোটি টাকা।
ইউএনডিপির গবেষণায় আরো বলা হয়, হরতালে আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে। দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সঞ্চয় কমছে, বাড়ছে খেলাপি ঋণ। হরতালের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্খা কমে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যাচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্খানের প্রসার না ঘটনায় বাড়ছে বেকারত্ব।
হরতাল আহ্বানকারীদের প্রত্যাখ্যান করুন।