somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুদ্ধিজীবী হত্যার সেইসব কুখ্যাত ব্যক্তিরা কে কোথায়?

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে দেশের ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে নৃশংস হত্যার দুই জল্লাদ কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান এখনো ধরা পড়েনি। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, এদের অবস্থান সম্পর্কে সরকার অবগত। তবে নানা জটিলতায় তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা যাচ্ছে না। এরা বিদেশে অবস্থান করে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে তাদের শীঘ্রই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন হত্যা মামলাটিকে সূত্র ধরে সংস্থা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে ২০১০ সাল থেকে তদন্ত শুরু করে। এক বছরের বেশি সময় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে প্রসিকিউশনের কাছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকেও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তাকে। সরকারের কাছে খবর রয়েছে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান খান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জামাইকায় আর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পালিয়ে রয়েছেন। তাদের মধ্যে চৌধুরী মাঈনুদ্দীন একাত্তরে ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সাংবাদিক। স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তান হয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান। তিনি লন্ডনের টটেনহ্যাম মসজিদের চেয়ারম্যান। তদন্ত সংস্থা সূত্র জানায়, চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান ছাত্রজীবন থেকে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তারা এ সংগঠনের হাইকমান্ডের সদস্য হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে আলবদর বাহিনীতে রূপান্তরিত হয় ইসলামী ছাত্রসংঘ। চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ছিলেন ওই বাহিনীর ‘অপারেশন ইনচার্জ’। আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন, ‘চিফ এক্সিকিউটর’ বা ‘প্রধান জল্লাদ’। দেশকে মেধাশূন্য করার নীল-নকশা বাস্তবায়নে হাইকমান্ডের নির্দেশে এরা বুদ্ধিজীবী হত্যার মিশন নিয়ে মাঠে নামে। এরা একে একে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন শেষে হত্যা করে রায়েরবাজার ইটখোলা ও মিরপুর বধ্যভূমিতে মরদেহ ফেলে দেন। সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মাঈনুদ্দীনকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে কথা বলা হচ্ছে। আলোচনা সাপেক্ষে যে কোনো আসামিকে ফেরত দিতে পারে যে কোনো দেশ। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় বন্দিবিনিময় চুক্তিও লাগে না। ফলে এখন ঢাকা-লন্ডনের আলোচনার ওপরই নির্ভর করবে চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের ফেরতের বিষয়টি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাঈনুদ্দীন পালিয়ে পাকিস্তান চলে যান। সেখান থেকে যান যুক্তরাজ্যে। লন্ডনে জামায়াতের সংগঠন দাওয়াতুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক দাওয়াতের বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যায় প্রমাণিত চৌধুরী মাঈনুদ্দীন বর্তমানে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের একজন পরিচালক, মুসলিম এইডের ট্রাস্টি এবং টটেনহ্যাম মসজিদ পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে¡ আছেন। এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত- আশরাফুজ্জামান বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পালিয়ে কিছুদিন রেডিও পাকিস্তানে কাজ করেন। পরে সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে আশরাফুজ্জামান খানের ঠিকানা নিউইয়র্কের জ্যামাইকা। ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কলঙ্কজনক, নৃশংসতম, মর্মান্তিক বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী এ দুই আলবদর নেতাকে গত বছর ২ নভেম্বর সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন আদালত।১৮ বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় : ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে, মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট’-৭৩ এর ৩/২ ধারা অনুসারে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও গণহত্যা-এ ৫ ধরনের ১১টি মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে বলা হয়, স্বাধীনতার ঊষালগ্নে দেশকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যরা হাইকমান্ডের নির্দেশে সরাসরি আলবদর বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত রূপ দিতে একাত্তরের ডিসেম্বরে ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনীর কিলিং স্কোয়াড গড়ে তোলা হয়। রায়ে বলা হয়, আশরাফুজ্জামান ও মাঈনুদ্দীনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে আলবদর হেডকোয়ার্টারের নির্যাতন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আটকে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। তারপর মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। এভাবে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও দুই জন চিকিৎসক।
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×