সরকারি কলেজে যোগ দেওয়ার চার মাস পর সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে একদিন চিঠি পেলাম সিলেট এম সি কলেজে পাঁচ দিনের জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে যেতে হবে। শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট যেতে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগে জেনে সিদ্ধান্ত নিলাম পরীক্ষার দিন সকালেই যাবো। পরীক্ষার দিন খুব সকালে রওয়ানা দেওয়ার পরও পরীক্ষা শুরুর আধঘন্টা পরে কলেজে পৌছলাম।
আমার সহ-পরীক্ষক রনজিত স্যার অমায়িক ভদ্রলোক, আমাকে দেখে সে বললো আমি পরীক্ষা নেয়া শুরু করেছি আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন। দুপুর পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ে দুপুরের খাবারের সময় রনজিত স্যারকে বললাম আজকে একটু দ্রুত পরীক্ষা শেষ করি আমাকে রাতে থাকার জন্য হোটেল খুজতে হবে। রনজিত স্যার বললেন আপনি চিন্তা করবেন না,আপনার থাকার ব্যবস্থা করছি আপনি নিশ্চিন্তে পরীক্ষা নেন।
পরীক্ষা শেষ করে যখন ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হলাম তখন মাগরিবের আযান দিচ্ছে। কলেজের গেেটর কাছে যেয়ে পিওন জুনুকে স্যার বললেন স্যারকে নিয়ে যাও, আর স্যারের খোঁজখবর রেখো বলে সে বিদায় হলো।
কলেজের গেটের কাছে একটি টিলা, জুনু টিলা বেয়ে উঠা শুরু করলো, কিছুদূর উঠার পর একটি একতলা বিল্ডিং দেখলাম বুঝলাম সেটাই আমার গন্তব্য। যে রুমে জুনু আমাকে নিয়ে গেলো সেখানে আমার কলেজের জাকির স্যারকে পেলাম, সেও পরীক্ষা নিতে আসছে।
বিল্ডিং টায় আমি আর জাকির স্যার ছাড়া আর কেউ নেই। চারদিকে ভয়ংকর নীরবতা, নীরবতা ভেঙ্গে শুরু হলো মুষুলধারে বৃষ্টি। রাতের খাবার পর কখন ঘুমিয়ে পড়ছি জানি না, গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। রুমের লাইট জ্বালানো জাকির স্যারের বিছানায় কেউ নেই। হয়তো টয়লেটে গেছে ভেবে শুয়ে আছি, আধাঘন্টা হয়ে গেছে তবুও আসছে না দেখে বিছানা থেকে উঠলাম। রুমের দরজা ভেতর থেকে বদ্ধ, বাথরুমে উকি দিয়ে দেখলাম কেউ নেই। ভয়ের একটা শীতল স্রোত মেরুদন্ড বেয়ে নিচে নেমে এলো। বিছানায় বসে সিগারেট ধরালাম, বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি, রুম যথেষ্ট ঠান্ডা, তারপরও আমি দরদর করে ঘামচি। ভয়ের অনুভূতি মানুষকে বেশিক্ষণ আচছন্ন করে রাখে না। আমার লজিক কাজ করা শুরু করলো, একটা মানুষ রুম থেকে উধাও হয়ে যেতে পারে না। আবার খোজা শুরু করলাম, খাটের নীচও বাদ রাখলাম না। বাথরুমে ঢুকে দেখি আরেকটি দরজা, সেটা বন্দ্ধ। আমি নিশ্চিত হলাম দরজার ওপারেই সব রহস্য। আমি দরজা ধাক্কায়ে ডাকা শুরু করলাম জাকির স্যারকে, কোন সাড়াশব্দ নেই। আবার ভয়টা জেকে বসছে। দুই এক মিনিট পর হঠাৎ করে দরজাটা খুলে গেলো, টুপি মাথায় জাকির স্যার। ঘুম আসছিলো না বলে সে এ পাশের রুমে তাহাজ্জুদের নামায পড়ছিলেন।
The first duty of man is to conquer fear; he
must get rid of it, he cannot act till then.
Thomas Carlyle
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:০৫