রিশানের সঙ্গে দেখা নেই অনেকদিন!
রেজাল্টের পর আমি চলেগেছি কুষ্টিয়া আর রিশান চলেগিয়েছিল চিটাগং। রিশান আবার ঢাকা ফিরে এসেছে কিন্তু ঢাকা আসার কোনও কারণ আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ইন্টরভিউ টিন্টারভিউ নেই যে বাপের কাছে থেকে কিছু টাকা নিয়ে চলে আসবো। অবশেষে একটা অজুহাত পেলাম; আমার রেখ যাওয়া বইপত্র বেডিংবোচকা নিতে হবে! মাকে রাজী করিয়ে হাজার খানেক টাকার বাজেট পাশ করালাম। লেখপড়া খতম হয়ে গেলে মানুষ যে কী অসহায় হয়ে যায়! বিশেষ করে সদ্য বেকার হওয়ার অনুভূতিতে!
ঢাকা আসার আগে রিশানকে ফোন দিলাম- আমি আসছি!
ও বলে আসো!
কোনও প্রতিক্রিয়াই যেন নেই! তবেকি রিশান চেইঞ্জ হয়ে গেলো এ কদিনেই?
আমি আরও ভেবেছিলাম রিশান আমাকে রিসিভ করতে বাসস্ট্যান্ড আসবে! রিশান আমার আবেগের চরম মূল্য দিল প্রত্যাখ্যান করে। কথা থাকলেও ওর কাছে না উঠে আমি আমার পুরানো ডেরায়; গেণ্ডারিয়া চলে গেলাম। পরদিন আর কোনও যোগাযোগই করলাম না, ওর সঙ্গে। সন্ধ্যায় ও ফোন দিয়ে জানতে চায় আমি কোথায়? আমি তখন শিশু একাডেমির একটা অনুষ্ঠানে। রিশান গেটে এসে ফোন দিল , একটু বেরিয়ে আসো! আমি গেইটে। কিন্তু আমি কোনওভাবেই বের হতে চাইলাম না। রাগ অভিমানে ফেটে যাচ্ছে সব। রিশান অনেক আকুতি উজাড় করল , আমি স্ট্রিকলি - না!
একটুপর ওর এক সিনিয়র ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বলে তুমি কোথায় , তার সঙ্গে একটু দেখা করতে পারব কি না! সে জানায় সে আমাকে চেনে আমিও তাকে চিনি, একটা বিশেষ প্রয়োজনে দেখা করতে চায়। আমি ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি এটা রিশানের চালাকি।
গেট থেকে বেরুতেই কে যেন আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল! আমি বুঝলাম আমি কট খাইছি।
মুকুল ভাই বলল- তোমার রাগ এখনও কমেনি, এখন না বড় হইছ!
তারপর রিশানের সঙ্গে হালিম খেতে গেলাম সেই পুরনো হোটেলে! মগবাজারের মোড়ে।
রাতটা রিশানের সঙ্গে কাটালাম। হঠাৎ মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি রিশান আমার গলা জড়িয়ে আছে। কেমন একটু কান্নার শব্দও পাচ্ছি। আমিতো ভীষণ অবাক!
পরদির যথারীতি আমার যাওয়ার যোগাড়জ্যান্ত শেষ! রিশানই সব বেধেছেদে ঠিক করে দিল! একটিবারও বলল না আরেকটা দিন পরে যাও। শুধু গাড়ি ছাড়ার সময় দেখলাম ওর চোখে পানি।
একটু পর ওর মেসেজ! গাড়ি তখন কল্যাণপুর থেকে ছেড়ে সাভারের কাছকাছি। ও লিখেছে- আমি চাইন এতো অল্পদিনের জন্য এসে আমাকে কাঁদিয়ে যাও। তাই চেষ্টা করেছি লুকিয়ে থাকতে। আমাকে মাফকরে দিও। পারলে একবার বেশিদিনের জন্য এসো।
দিনটি ছিল ১৫ এপ্রিল।
ঠিক সাতদিন পর ২২এপ্রিল আমি আবার ঢাকা এলাম তবে এবার এলাম সম্পূর্ণ নতুন সাজে। অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে। অনেক রিকোয়েস্ট করে রিশানকে একদিন হাসপাতালে পেয়েছি। তারপরআবার গায়েব। যতোই বলি ও আর আসে না।আড়াই মাস হাসপাতালে ছিলাম। রিশান সেই একবারই এসেছিল। ওযেদিন বুঝতে পারল আমি আর ওদের মতো স্বাভাবিকভাবে চলতে পারব না, সেদিন থেকেই নাকি ওর কেমন হতাশা শুরু হয়। ওর নাকি ভালো লাগে না আমার যন্ত্রণাপীড়িত মুখটা দেখতে!
ওর এক ছোটভাইকে দিয়ে একটা ডায়েরি পাঠিয়েছে তাতে ও লিখেছে- আমি সেদিন তোমায় দেখতে আসবো যেদিন তুমি আমার চলন্ত বাইকে লাফিয়ে উঠতে পারবে! রাত দুইটায় শাহবাগ থেকে হাঁটতে হাঁটতে গেণ্ডারিয়া যেতে পারবে, তারপর চাবি না থাকায় তিনতলায় উঠবে পাইপ বেয়ে। সেইদিন.. অথবা..
যেদিন আমি তোমার পাশের কেবিনে যায়গা করে নিতে পারবো!..
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



