somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেনামাযী কি মুসিলম থাকতে পারে? ( যারা মিস করেছেন তাদের জন্য )

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম।

আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক মুসলমানের উপর দৈনিক ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। একজন মুসলমানের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল এই ৫ ওয়াক্ত সালাত যথাসময়ে আদায় করা। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ মুসলামানই তাদের এই দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন বিশিষ্ট অধ্যাপকের জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৫ ওয়াক্ত নামাযী ব্যক্তির সংখ্যা শতকরা ২ জন (মাত্র)। বাকী ৯৮ শতাংশের মাঝে কেউ শুধু ঈদের সালাত পড়ে, কেউ জুম'আ পড়ে, কেউ সপ্তাহে ২/৩ দিন পড়ে, কেউ আবার দিনে ১/২/৩/৪ ওয়াক্ত পড়ে। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা দৈনিক ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন, তাই এই ধরনের সকল আংশিক নামাযী বেনামাযী হিসেবে গণ্য হবে। আমাদের সমাজে যেমন সালাত আদায় করাকে কোন জরুরী কাজ মনে করা হয় না,ঠিক তেমনি সালাত ত্যাগ করাকেও খুব বড় কোন অপরাধ হিসেবে ধরা হয় না। তাই সালাত আদায় না করার পরিণাম সম্পর্কে তথা বেনামাযীর শরীয়তী হুকুম নিয়ে আলোচনা করা জরুরী মনে করছি।

কুরআনের দলীল:

১। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
"তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনও মোশরেকদের দলভুক্ত হয়ো না।" ( সূরা আর-রুম: ৩১ )
অর্থাৎ যারা নামায প্রতিষ্টা করে না, তারা মোশরেকদের দলভুক্ত।

২। আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন:
"অত:পর এদের পর এল অপদার্থ লোকেরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।" ( সূরা মারইয়াম: ৫৯-৬০ )
এখানে "কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে" দ্বারা বুঝা যা্য় নামায বিনষ্ট ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করার সময় তারা ঈমানদার ছিল না।

৩। আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন:
"যদি তারা তওবা করে ও নামায আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।" ( সূরা তওবা: ১১ )
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হল, সালাত প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদান না করলে দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব সাব্যস্ত হবে না। অবশ্য হাদীসের দলীল দ্বারা প্রমাণিত যে, যাকাত পরিত্যাগকারী যদি তার আবশ্যকতা স্বীকার করে তবে সে কাফের হবে না। অতএব, নামায প্রতিষ্ঠা করা ঈমানী ভ্রাতৃত্বের শর্ত হিসেবে অবশিষ্ট রইল। তাই এর দাবী হচ্ছে তা পরিত্যাগ করা কুফরী।

হাদীসের দলীল:

১। জাবের বিন আবদুল্লাহ ( রা: ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নবী ( সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেন, " মুসলিম বান্দা এবং কাফের ও মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল নামায পরিত্যাগ করা।" ( সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান )

২। বুরায়দা বিন সুহাইব ( রা: ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নবী ( সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেন, " তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে নামাযের, যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।" ( মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। নাসাঈ, কিতাবুস সালাত। ইবনু মাজাহ, কিতাবুস সালাত ওয়াস সুন্নাহ্ ফীহা )

৩। উবাদা বিন সামেত ( রা: ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ( সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আমাদেরকে নসীহত করেছেন, " তোমরা কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করবে না। ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায পরিত্যাগ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায পরিত্যাগ করবে সে মিল্লাতে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।" ( সুনানে ইবনু আবী হাতেম, হায়ছামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ। মুসতাদরাকে হাকীম )

এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ( রা: ) থেকে বর্ণিত উক্তি সমূহ নিম্নরুপ:

ওমর বিন খাত্তাব ( রা: ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, " যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করে ইসলামে তার কোন অংশ নেই।" ( ইবনু আবী শাইবা, কিতাবুল ঈমান )

আব্দুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব ( রা: ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ( সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর সাহাবীগণ নামায ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না। ( তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। হাকেম)

ইমামদের মত:

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ( রহ: ) বলেন, নামাযে অলসতাকারী প্রত্যেক ব্যক্তি মাত্রই তাকে অবজ্ঞাকারী। সুতরাং সে ইসলামের ব্যাপারে উদাসীন ও অবজ্ঞাকারী। সালাতে যাদের যতটুকু অংশ রয়েছে ইসলামে তাদের ততটুকু অংশ রয়েছে। সালাতের প্রতি যার যতটুকু আগ্রহ রয়েছে ইসলামের প্রতি তার আগ্রহ ততটুকু রয়েছে।

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম ( রহ: ) ( কিতাবুস সালাত, পৃ: ৪০০ ) বলেন, ঈমানের দাবী হচ্ছে নামায আদায় করা। কারো অন্তর যদি তাকে নামাযের নির্দেশ না দেয়, তবে তার অন্তরে যে ঈমানের লেশ মাত্র নেই, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পরিশেষে বলা যায়, নামাযে রয়েছে অশেষ, অফুরন্ত ও অসংখ্য সাওয়াব এবং তা আদায় করাও অতি সহজসাধ্য। নামায পরিত্যাগ করাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। যার অন্তরে সামান্যতম ঈমান রয়েছে সে কখনও উক্ত নামায পরিত্যাগ করতে পারে না।
তাই আল্লাহর কাছে আশা রাখছি, যারা দৈনিক ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করছেন না তারা সতর্ক হবেন এবং এখন থেকে তওবা করে নামাযীদের দলভুক্ত হবেন। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে তওফীক দান করুন। আমীন।

লেখাটি তৈরীতে যে সকল কিতাবের সাহায্য নেয়া হয়েছে:
১। নামায ত্যাগকারীর বিধান: আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন ( রহ: ) [ http://www.mediafire.com/?5bta46xota70ti4 ]
২। ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম: আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন ( রহ: )

যারা আরো জানতে চান তাদের জন্য
অডিও লেকচার:
বে-নামাযীর বিধান
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×