শীতের এই কুয়াশাঘেরা রাত বাড়ে শুন্যতার পাহাড় নিয়ে। বুকের ভেতর চিনচিন করে ব্যথা আর স্নায়ুগুলো না পাওয়া ব্যথায় বিদ্রোহ করে।
স্বামী থাকতেও ২৫ বছর বয়সী রমনীর দিন-রাত অসহায়ত্বের বেড়াজালে বন্দি হয়ে কাটে। সারা দিন পাগল স্বামীর অপূর্ণ খেদমত আর রাতে শুন্য বিছানার অবহেলা যেনো পাগল করে সুমনাকে।
তেমনি আজ রাতে ঘুম আসছে না নিঃসঙ্গ বিছানার সাথে। বসে বসে পুরাতন স্মৃতির জাদুঘরে একলা বিচরণ করে হাহুতাশ করছে সুমনা।
এইতো সেদিন মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে বাবা-মা বিয়ে দিয়েছিল ৪০ বছর বয়সী প্রাচুর্যে ভরপুর এক মেন্টাল রোগীর সাথে।
বিয়ে সম্পর্কে ধারণা ছিলো না মোটেও। স্বামীর পাশে রাত কাটানোর প্রথম তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তার স্মৃতি বারবার দহন করে মস্তিষ্কের চলন্ত স্নায়ুগুলোকে।
ফরিদপুরের গ্রাম্য সেই বাড়ি থেকে সোজা ঢাকা স্বামীর ফ্লাটে। তারপর শুরু সংসার। পাগল স্বামীর সাথে দশ বছরের সংসার জীবন নিয়ে ভাবলে নিজেকে জীবন্ত ভাবতে কষ্ট লাগে।
সব রকমের চেষ্টা করা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড়বড় মেন্টাল স্পেশালিস্টদের দেখানো হয়েছে। গত তিন বৎসর হলো এখন আর দৌড়াদৌড়ি করা হয় না।
স্বামীর সাথে কখনো মন খুলে গল্প করেনি সুমনা। কোনোদিন ঢাকার কোনো পার্কে বা অন্য কোথাও হাত ধরে হাটা হয়নি। হাটবে কি করে বয়সের ভারে স্বামীর সখ আহ্লাদ আগেই শেষ হয়ে গেছিল। তারপর আবার মেন্টাল রোগী।
চৌদ্দ বছরের বালিকা যখন স্বামীর হাত ধরে প্রিয় জায়গাগুলো ঘুরবে, তখনই স্বামীর পাগলের স্বীকৃতি পেলো।
যৌবন বাড়ছে সৌন্দর্য্য জাপটে ধরেছে। আর স্বামী তখন বিড়বিড় করে আকাশের তারকা গুণে সময় পার করছে। নিয়তির এমন অদ্ভূত খেলা সহজেই মেনে নিতে পারেনি। যৌবনা সুমনা।
বুকের চিরশুন্যতা নিধনে বন্ধু করতে চেয়েছে অনেক যুবককে। এই তো সেদিন পরিচয় হলো রুম্মান নামে এক যুবকের সাথে। বাসের মধ্যে তার সাথে পরিচয়। যুবক বিবাহিত তাই গল্প করতে বন্ধুত্ব গড়তে সুবিধা হবে।
এই শীতের ব্যাকুল রাতে ফোন দিবে কি রুম্মানকে! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রুম্মানের নম্বর মোবাইলের স্ক্রিনে উঠালো ক্লান্ত হাতের আঙ্গুলগুলো।
রুম্মান ঢাকায় থাকে। স্ত্রী দেশের বাড়িতে। বাড়ি যাওয়া হয় না। তিন মাস হতে চললো। মাঝে মাঝে বউয়ের সাথে কথা কাটাকাটি, অভিমান-রাগারাগি প্রায় হয়।
অনুরাগে স্ত্রী মোবাইল ফোন কেটে দেওয়া নিত্য ঘটনা। রুম্মানের কাছে বিষয়টি এখন অনেক কষ্টের লাগে। মাঝে-মাঝে একরাশ বিরক্তি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। বুকের মাঝে শুন্যতা লাগে। কান্না আসে।
আজও এমন হলো। ঠিক এমনি মূহুর্তে রুম্মানের মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো সাম্প্রতিক পরিচয় হওয়া সুমনার নম্বর। এক ঝলক জ্বলে উঠে থেমে গেলো। মিসড কল।
শুন্যতা বা একাকিত্ব দুরের জন্যই হোক। রুম্মান ফোন দিলো সুমনার নম্বরে।
রু: হ্যালো………
সু: কেমন আছেন?
রু: ভালো…এত রাতে?
সু: আপনার কথা খুব মনে পড়ছিলো……সেদিন গাড়ির মধ্যে আপনার সাথে কত কথা বলেছি। আপনি কি করছেন? আপনার পরিবারের সবাই ভালো তো? এত রাতে কি করছিলেন?.........
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে এমনিভাবে এগিয়ে চললো শুন্যতার গল্প, একাকিত্বের গল্প। রাত্রদেবীর করুণায় তাদের কাছে ঘুমের বার্তা আসবে কি না লেখক জানে না।
প্রিয় পাঠক আপনারা জানেন কি?.........
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯